প্রচ্ছদ হেড লাইন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপির কাছে হাসপাতালের দুই গাড়ি

অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপির কাছে হাসপাতালের দুই গাড়ি

অবসরে যাওয়ার তিন মাস পরও পুলিশ বাহিনীর দুটি গাড়ি ব্যবহার করছেন পুলিশেরই সাবেক এক অতিরিক্ত আইজিপি। এই দুই গাড়ির জন্য জ্বালানি এবং চালকও তিনি পুলিশ বাহিনী থেকে নিচ্ছেন। অবসরে যাওয়া ওই কর্মকর্তা হলেন ড. হাসান উল হায়দার।

দুটি গাড়িই রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। ড. হাসান উল হায়দার ওই হাসপাতালের পরিচালক থাকাকালে গাড়ি দুটি ব্যবহার করতেন। পরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি হলেও গাড়ি দুটি তিনিই ব্যবহার করে থাকেন। অবসরের পরও তা আর ফেরত দেননি। তিনি বর্তমানে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত।

তবে ড. হাসান উল হায়দার দাবি করেছেন, একটা গাড়ি সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য তাঁকে দেওয়া হয়েছে। সেটা পুলিশ কল্যাণ আইনে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে দেওয়া।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার এভাবে গাড়ি ব্যবহার নিয়ে পুলিশ বাহিনীতে বেশ আলোচনা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও এ বিষয়ে অবগত। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটা এখন আইজিপির প্রশাসনিক ব্যাপার। গাড়ির ব্যাপারে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

সূত্রমতে, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন তৎকালীন ডিআইজি ড. হাসান উল হায়দার। পরে তিনি এপিবিএনে বদলি হন। ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁর স্বাভাবিক অবসর হয়। তখন তিনি এপিবিএনের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশের সংস্থা পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের কনসালট্যান্ট পদে তিনি নিয়োগ পান। তিনি যে দুটি গাড়ি ব্যবহার করছেন, তার একটি জাপানের নিশান পেট্রল ওয়াই ৬২ এসইউভি। অন্যটি টয়োটা ক্রাউন কার। এসইউভির দাম প্রায় সাড়ে চার কোটি এবং টয়োটা ক্রাউনের দাম ৭০ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৮৯৯৬ নম্বরের একটি নিশান পেট্রল ওয়াই ৬২ এসইউভি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের নামে রেজিস্ট্রেশন হয়। টয়োটা ক্রাউন (ঢাকা মেট্রো-ভ-২৮-০০৭১) রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের নামে রেজিস্ট্রেশন হয় ২০২০ সালের ২৩ জুন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গাড়ি দুটি রেজিস্ট্রেশনের পর থেকে ড. হাসান উল হায়দারই ব্যবহার করছিলেন। তবে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি একটি গাড়ি ফেরত দেন।

রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) ডা. মো. এমদাদুল হকের সই করা এক স্মারকে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো গত নভেম্বরের মোটরযানের মাসিক প্রতিবেদনেও দেখা যায়, গাড়ি দুটির ব্যবহারকারী হিসেবে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি ড. হাসান উল হায়দারের নাম রয়েছে। অথচ এক বছর ১০ মাস আগে তিনি এপিবিএনে বদলি হন এবং গত সেপ্টেম্বরে চাকরি থেকে অবসর নেন। সরকারি চাকরিবিধি অনুসারে গ্রেড-২ পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর কোনো সরকারি কর্মকর্তা গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ পান না।

হাসান উল হায়দারের বদলির পর ওই হাসপাতালের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন ডিআইজি সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর। ওই গাড়ি দুটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পালনকালে সেই গাড়ি দুটি পাইনি।’

হাসপাতালটির অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) মো. এমদাদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাসান উল হায়দার হাসপাতাল থেকে যাওয়ার সময় গাড়ি দুটি সঙ্গে নিয়ে গেছেন।

দুই গাড়ির ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক শেখ মো. রেজাউল হায়দার কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানান।

পুলিশ সূত্র জানায়, ওই গাড়ি দুটির একটি রাখা হয় মিরপুরে পুলিশ কনভেনশন হলের নিচে। ২২ ডিসেম্বর বিকেলে কনভেনশন হলের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৮৯৯৬ নম্বরের নিশান পেট্রল গাড়িটি দেখা যায়। সাদা রঙের গাড়িটির পেছনে ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার লাগানো।

অবসরের পরও রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের নামে রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান উল হায়দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ হাসপাতালের নামে কেনা হলেও এটি সরকারি গাড়ি নয়। পুলিশ নিজস্ব সোর্স থেকে কিনেছে। একটা গাড়ি সার্বক্ষণিক আমার কাছে দেওয়া আছে। সেটা পুলিশ কল্যাণ আইনে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে দেওয়া।’ পুলিশ হাসপাতালের দুটি গাড়ির ব্যবহারকারী হিসেবে তাঁর নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এটা হয়তো ভুলে হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরকারি গাড়ি পেতে পারেন কি না, জানতে চাইলে হাসান উল হায়দার বলেন, ‘আমাকে যাঁরা নিয়োগ দিয়েছেন, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।’

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো অবস্থায় আমি নেই।’

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।