জাতীয়: রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনা তদন্তে কাজ করছে র্যাব ও পুলিশ। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) গভীর রাতে ঢাকার জুরাইন রেললাইন সংলগ্ন বস্তি থেকে তিনজনকে আটক করেছে তারা। এছাড়া ট্রেনের দুই যাত্রীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।।
আটক তিনজনের নাম আলমগীর, রাব্বী ও কাশেম বলে জানা গেছে। র্যাব জানিয়েছে, রেললাইনের পাশেই একটি ঘরে পেট্রোল বোমা বানাচ্ছিলেন তারা। আটককালে তাদের কাছ থেকে ৩০টি তৈরি ককটেল ও ২৮টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলেই সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ট্রেনে আগুন লাগার পর জুরাইন বস্তিতে কিছু সন্দেহজনক ব্যক্তির আনাগোনার তথ্য পায় আমাদের গোয়েন্দারা। এরপর র্যাব-৩ অভিযান চালিয়ে আলমগীর, রাব্বী ও কাশেম নামে তিনজনকে আটক করে। তারা সেখানে বসে বিপুল পরিমাণে ককটেল ও পেট্রল বোমা বানাচ্ছিল।
ট্রেনের আগুনের সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এটা স্পষ্টই নাশকতা। যাত্রীরা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, তারা কয়েকজনকে দেখেছেনও। আর জুরাইনে যেখান থেকে এই তিনজনকে ধরা হলো, সেখান থেকে ট্রেনে খুব সহজে অগ্নিসংযোগ করা সম্ভব। জায়গাটা একদম রেললাইনের পাশে। আমরা মনে করি, এখানে বসে ট্রেন বা যেকোনো জায়গায় নাশকতা করা সম্ভব। কোনো সম্ভাবনাই আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, আটক ব্যক্তিদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। তাদের মাদকাসক্ত বলেও মনে হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত শুধু আয়নাল নামের এক ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে, যিনি তাদের দিয়ে ককটেল ও পেট্রল বোমা বানাচ্ছিলেন। এর আগেও আয়নাল তাদের কাছ থেকে বোমা বানিয়ে নিয়েছেন। সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় তারা এর আগে সরবরাহও করেছে।
তবে আয়নালের কোনো পরিচয় আটক ব্যক্তিরা জানাতে পারেননি জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ওই ব্যক্তি ফতুল্লায় থাকেন। বিভিন্ন সময় নাশকতার জন্য আয়নালের কাছ থেকে টাকা পেয়ে তারা বোমা বানিয়েছে।
এদিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় দুই যাত্রীকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তারা কুষ্টিয়া থেকে উঠেছিলেন ওই ট্রেনে। পুলিশ বলছে, যে দুই যাত্রীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। পুলিশ কর্মকর্তারাও এ অগ্নিকাণ্ডকে নাশকতা হিসেবেই দেখছেন।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারি বিভাগের উপকমিশনার ইকবাল হোসাইন বলেন, ট্রেনের দুজন যাত্রীকে স্পটেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের আমরা আটক করিনি, বলতে পারেন নজরদারিতে রেখেছি। ফরিদপুরের ভাঙ্গার পর ট্রেনটি আর থামেনি। ঢাকা থেকে উঠে কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ এটির সর্বশেষ স্টপেজ ছিল ভাঙ্গা স্টেশন।
পদ্মা সেতু হয়ে যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকায় আসা বিরতিহীন এ ট্রেন সবশেষ থেমেছিল ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে। সেখান থেকে ছেড়ে আসার পর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে গন্তব্যস্থল কমলাপুর পৌঁছানোর কিলোমিটার দুয়েক আগে আগুনের কারণে থেমে যেতে বাধ্য হয় ট্রেনটি। আগুনে ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে যায় এবং উদ্ধার করা হয় দুই শিশুসহ চারজনের লাশ। নিহতদের তিনজনই একই পরিবারের, যারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে আগুনের এ ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সিরাজ-উদ-দৌলা খান । তিনি জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী মো. সৌমিক শাওন কবিরকে প্রধান করে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে কমিটিকে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |