সারাদেশ: বিশ্বের ইতিহাসে অনেক দেশের সরকারপ্রধান নিজেদের শাসনকালে বিভিন্ন কারণে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল আসাদ এবার সে তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। দীর্ঘ ২৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর রোববার (৮ ডিসেম্বর) সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) চূড়ান্ত হামলার পর আল আসাদ তার দেশ থেকে পালিয়ে যান। আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়াকে মুক্ত ঘোষণা করেছে বিদ্রোহীরা এবং আসাদ বিমানে দামেস্ক ছেড়ে অজানা গন্তব্যে চলে যান। এ ধরনের পালানোর ঘটনা একেবারেই নতুন নয়। বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা একাধিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনগণের বিদ্রোহ কিংবা বিদেশি চাপের কারণে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছেন। এমন কিছু উদাহরণ রয়েছে-
১. পেরুর সাবেক রাষ্ট্রপতি আলবের্তো ফুজিমোরি ১৯৯৫ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। কিন্তু এই দ্বিতীয় পর্বের শাসনে তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তীব্রতর হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে তিনি জাপানে পলায়ন করেন এবং সেখান থেকেই রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তী পেরু সরকার তার বিরুদ্ধে অনেকগুলি মামলা দায়ের করে এবং তাকে পেরুতে ফিরিয়ে এনে বিচারের চেষ্টা করতে থাকে। ২০০৫ সালে চিলিতে আসলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে ২০০৭ সালে তাকে পেরুর প্রশাসনের কাছে হতান্তর করে দেয়া হয়। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে একটি মামলার রায়ে আদালত তাকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেন।
২. ফিলিপাইনের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ মার্কোস ১৯৮৬ সালে এক গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। এর আগে নির্বাচনে মি. মার্কোসকে বিজয়ী ঘোষণা করায় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে এবং উত্তাল হয়ে ওঠে জনরোষ।
জনরোষ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়, তার ফলে বিশ বছরের ন্বৈরশাসনের শাসনের অবসান ঘটে এবং জনরোষের মুখে দেশ ছেড়ে সপরিবারে আমেরিকার হাওয়াইতে পালিয়ে যান ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়র।
৩. শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু দেশটির অর্থনৈতিক সংকট ও জনগণের ব্যাপক আন্দোলনের কারণে ২০২২ সালের জুলাইয়ে তাকে মালদ্বীপ হয়ে সিঙ্গাপুরে পালাতে হয়। শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে পড়ার পর রাজাপাকসে পদত্যাগ করেন। তবে পরে তিনি ফের দেশে ফিরে আসেন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন।
৪. আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি আফগানিস্তানে ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আশরাফ ঘানি। ২০২১ সালের আগস্টে তালেবানরা কাবুল দখল করলে, তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান। ঘানি জানিয়েছেন, তাকে মাত্র ২ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল দেশ ছাড়ার জন্য, ফলে তাজিকিস্তান হয়ে তিনি আবুধাবী চলে যান।
৫. ইরানের শাহ বংশের মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ইরানের শাহ বংশের শেষ শাসক মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ১৯৭৯ সালে ক্ষমতা ছেড়ে মিসরে পালিয়ে যান, যেখানে আয়াতুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে ইসলামিক বিপ্লব ঘটে। পরে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান, সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।
৬. সুদানের প্রধানমন্ত্রী সাদিক আল মাহদি সুদানে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাদিক আল মাহদি। দেশটিতে রাজনৈতিক সংকটের কারণে তিনি পালিয়ে যান।
৭. পাকিস্তানের জেনারেল পারভেজ মোশাররফ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অভিশংসনের আতঙ্কে ২০০৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন এবং স্বেচ্ছানির্বাসনে লন্ডন চলে যান। পরে তিনি ২০১৩ সালে পাকিস্তানে ফিরে আসেন, তবে ২০২৩ সালে দুবাইয়ে তার মৃত্যু হয়।
৮. হাইতির প্রেসিডেন্ট জিন-বার্ট্রান্ড অ্যারিস্টাইদ হাইতির প্রেসিডেন্ট জিন-বার্ট্রান্ড অ্যারিস্টাইদ ১৯৯১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। পরে ১৯৯৪ সালে আবার দেশে ফিরে আসেন।
৯. বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশেষে, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পালাতে বাধ্য হন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। এখন তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন।
সূত্র : Ekushey Television – ETV
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |