২০২১ সালের এপ্রিলে ফুটবলে একেবারে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল তারা। উয়েফার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইউরোপিয়ান সুপার লিগের প্রচলন করতে চেয়েছিল, সে দফায় ইউরোপের নামী ১২টি ক্লাব সরাসরি সমর্থন জানিয়ে অংশ নেওয়ার কথাও বলেছিল। কিন্তু টুর্নামেন্টে সব ক্লাবের অংশ নেওয়ার সুযোগ না থাকায়, মুক্ত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র না থাকায় পরিকল্পনাটা ধোপে টেকেনি। ওই ১২ ক্লাবের বেশিরভাগের সমর্থকই তাঁদের ক্লাবের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন।
প্রায় সাড়ে তিন বছর পেরিয়েছে এরপর, মাঝে জল গড়িয়েছে অনেক। ১২ ক্লাবের মধ্যে এ নিয়ে শুধু পড়ে আছে রেয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনা। আদালতে এ নিয়ে মামলা হয়েছে, তাতে জিতে এখন নতুন ঢংয়ে হাজির হচ্ছে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ।
নতুন নামে, নতুন ঢংয়ে আজ লিগটির আয়োজক কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা এবার সাজিয়ে-গুছিয়ে মাঠে নামছে। টুর্নামেন্টের অনুমোদন পেতে উয়েফার কাছে বিস্তারিত পরিকল্পনা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে তারা। চিঠি পাঠিয়েছে আরও দুই দপ্তরে – বৈশ্বিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা আর ইউরোপিয়ান কমিশনে।
নানামূখী সমালোচনার কারণে গত সাড়ে তিন বছরে অনেক সংশোধনই তো হয়েছে। আজ পরিপূর্ণ পরিকল্পনা দেওয়ার কথা জানিয়েছে সুপার লিগ নিয়ে শুরু থেকে কাজ করে যাওয়া মাদ্রিদভিত্তিক সংগঠন ‘এ২২।’
তবে টুর্নামেন্টের নাম এখন আর ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নয়, নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ইউনিফাই লিগ। নামের তাৎপর্যও আছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ ইউরোপে দেখতে এখন যেমন বৈধভাবে দেখতে দর্শককে অনেক স্ট্রিমিং সাইট আর চ্যানেলের দ্বারস্থ হতে হয়, খরচ করতে হয় অনেক অর্থ। ইউনিফাই লিগ সেখানে ব্যতিক্রম টানছে। তারা নিজেরাই খেলা সম্প্রচার করবে, তা দেখতে কত খরচ করবেন সেটা দর্শকের বিবেচনা।
সেটা কেমন? দর্শক চাইলে বিনামূল্যেও খেলা দেখতে পারবেন, তবে সেক্ষেত্রে খেলা দেখার আগে-পরে কিছু বিজ্ঞাপন দেখার প্রস্তুতি রাখতে হবে তাঁদের। আর যদি বিজ্ঞাপন দেখতে না চান, পাশাপাশি খেলাটা কোন ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলে দেখবেন কিংবা খেলার পাশাপাশি রিয়েল টাইম পরিসংখ্যান-বিশ্লেষণের খুঁটিনাটিও চান, সেক্ষেত্রে থাকবে নানা সাবস্ক্রিপশান মডেল।
তবে সাড়ে তিন বছর আগের সুপার লিগ মডেলের সঙ্গে বর্তমান মডেলের সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা আরও অনেক আগ থেকেই জানা। সুপার লিগের সবচেয়ে বড় সমালোচনা ছিল, এটি ‘কূলীন’ ক্লাবগুলোর নিজস্ব টুর্নামেন্ট হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অর্থাৎ, টুর্নামেন্টের দলগুলোর মধ্যে আয়োজনের সঙ্গে জড়িত ১২ ক্লাব (রেয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, আতলেতিকো মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, আর্সেনাল, লিভারপুল, টটেনহ্যাম, ইউভেন্তুস, ইন্তের মিলান, এসি মিলান) কখনোই অবনমিত হবে না – এমন নিয়ম রাখা ছিল। অন্য ছোট দলগুলোর লিগে ঢোকার রাস্তাও কার্যত বন্ধই ছিল। সমালোচনার মুখে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ঘোষণা তো তখনই দিয়েছিলেন আয়োজকেরা, ধাপে ধাপে নানা সংশোধিত পরিকল্পনার কথাও শোনা গেছে। সর্বশেষ যে আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা আজ উয়েফার কাছে জমা দিয়েছে ইউনিফাই লিগ, সেটি চার স্তরে ৯৬টি ক্লাবের অংশগ্রহণে হবে। কার্যত চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা লিগ, কনফারেন্স লিগ – এই টুর্নামেন্টগুলোর সরাসরি বিকল্প হয়েই হাজির হচ্ছে ওই চার স্তরের চারটি লিগ। উয়েফার তিন টুর্নামেন্টে সুযোগ পায় ১০৮টি ক্লাব।
ইউনিফাই লিগের টুর্নামেন্টের স্তরবিন্যাস কেমন হবে? সবার ওপরে থাকবে ‘স্টার লিগ’, যেখানে সুযোগ পাবে ১৬টি ক্লাব। ৮টি করে দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে লিগের ম্যাচগুলো খেলবে। এর পরের স্তর ‘গোল্ড লিগে’ও একই পদ্ধতিতে খেলবে ১৬টি ক্লাব। আর এর নিচের স্তরের দুটি টুর্নামেন্ট হবে ব্লু লিগ ও ইউনিয়ন লিগ, সেখানে প্রতিটি লিগে খেলবে ৩২টি করে দল।
টুর্নামেন্টের ধরনটা অনেকটা আগের ঢংয়ের চ্যাম্পিয়নস লিগের মতোই থাকছে। লিগে প্রতিটি দল গ্রুপের অন্য দলগুলোর সঙ্গে হোম ও অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে ম্যাচ খেলবে, অর্থাৎ একটি দল লিগে ১৪টি করে ম্যাচ পাবে। এরপর লিগ পদ্ধতিতে শীর্ষ দুই স্তর স্টার ও গোল্ড লিগে চার গ্রুপের সেরা দুই দল নিয়ে হবে ‘শেষ আট।’ সেখানে কোয়ার্টার ফাইনালে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে দুই লেগই থাকবে। তবে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল হবে নির্দিষ্ট কোনো ভেন্যুতে, এক লেগের। শিরোপাজয়ী দল হবে ইউনিফাই লিগ চ্যাম্পিয়ন।
একই পদ্ধতিতে নকআউট পর্যায়ে খেলবে নিচের স্তরের দুই লিগ ব্লু ও ইউনিয়ন লিগের ৮ দলও।
রেয়াল মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা প্রতিষ্ঠান এ২২ আজ বিবৃতিতে জানিয়েছে, টুর্নামেন্টগুলোতে ক্লাবগুলো কীভাবে সুযোগ পাবে, সেটি ঠিক হবে নিজ নিজ দেশের লিগে ক্লাবগুলোর অবস্থানের ভিত্তিতে। অর্থাৎ, অতীত ইতিহাস নয়, সর্বশেষ মৌসুমে লিগে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই এই টুর্নামেন্টে সুযোগ পাবে কোনো দল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত মৌসুমের আগে কখনোই জার্মান লিগ না জেতা বায়ার লেভারকুসেন এখন এই টুর্নামেন্টে সরাসরি সুযোগ পাবে, যেটা আগের পদ্ধতিতে সম্ভব ছিল না। ইউরোপের ৫৫টি লিগের কোনটি থেকে কয়টি করে দল সুযোগ পাবে, কোন স্তরের টুর্নামেন্টে সুযোগ পাবে – সেটি নির্ধারিত হবে উয়েফার টুর্নামেন্টের সূচকের ভিত্তিতে।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও এখন আর সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া এই টুর্নামেন্টের ব্যাপারে আপত্তি করার সুযোগ উয়েফার নেই। গত বছরের ডিসেম্বরে ইউরোপের সর্বোচ্চ আদালত সিজেইইউ রায়ে জানিয়েছেন, টুর্নামেন্টটা মেধাভিত্তিক এবং মুক্ত হলে সেখানে আপত্তি থাকা যাবে না।
সূত্রঃ itvbd
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |