জাতীয় পার্টিতে নাটকীয়তা চলছেই। শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করায় হঠাৎ বহিষ্কার করা হলো দলের শীর্ষ দুই নেতাকে। কাজী ফিরোজ রশীদ ও সুনীল শুভ রায়কে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য পদসহ দলীয় সকল পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাদের বহিষ্কার করেন।
জাতীয় পার্টি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের শুরু থেকেই আলোচনায়। শুরুতে নির্বাচনে যাবে কী যাবে না এ নিয়ে চলে নানা আলোচনা। কার্যনির্বাহী কমিটির সভার মাধ্যমে সিংহভাগ নেতা নির্বাচনে যাওয়ার মত না দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যায় দলটি। এরপর শুরু হয় পার্টি চেয়ারম্যানের নীরবতা। সমঝোতা নিয়েও দেনদরবার কম হয়নি। এরপর ২৬ আসনে সরে যায় নৌকার প্রার্থী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হয়ে মাত্র ১১ আসন পায়।
এরপর নির্বাচনের মাঠে পিছিয়ে থাকা দলটির প্রার্থীরা সরে যেতে থাকেন মাঠ থেকে। নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে থাকেন শীর্ষ নেতাদের। বুধবার ১১ বিজয়ী সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের দিন বিক্ষোভ করেন। এ সময় চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। এ নিয়ে বেশ বিব্রত হয় দল। এই বিক্ষোভে কাজী ফিরোজ রশিদ, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, লিয়াকত হোসেন খোকাসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা নেতৃত্ব দেন।
এই বিক্ষোভকে সংগঠিত করার অভিযোগেই বহিষ্কার করা হয় তাদের। বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, তাদের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার পার্টি অফিসের সামনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার তারা দু’জন মিলে এটার পরিকল্পনা করেছেন। ওখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারাই চেয়ারম্যানকে বলেছেন- তারাই এটা করেছেন।
প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় খুলনা-১ আসন থেকে নির্বাচন করছিলেন। ভোটের দিন তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি কেন্দ্র দখল ও জালভোট দেয়ার অভিযোগ আনেন। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, বটিয়াঘাটার ১০৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৭টি কেন্দ্রই নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা দখল করে নিয়ে জালভোট দিচ্ছে। শুধুমাত্র আমার কেন্দ্রেটি দখল করেনি। এরকম কলঙ্কিত ভোট আমি কোনো দিন দেখিনি। সকাল থেকেই কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। কাউকে গাছের সঙ্গে বেঁধেও রাখা হয়েছে। যারা ভোট দিতে যাচ্ছেন তাদের ব্যালট পেপার টেবিলের ওপর রেখে নৌকায় সিল দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এখানে কোনো সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে না। তাই আমি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি।
অব্যাহতির প্রতিক্রিয়ায় তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া স্ট্যাটাসে বলেন, মিডিয়া সূত্রে জানতে পারলাম কা-চু পরিচালিত ‘জাতীয় পার্টি’ নামের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমার কাছে এই অব্যাহতিপত্র কচুপাতার চেয়েও মূল্যহীন।
এদিকে ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। যদিও এবার সমঝোতায় এই আসন না পাওয়ায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন তিনি। তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, আমি আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমেই বিষয়টি জেনেছি। এই সিদ্ধান্তে মোটেও আশ্চর্য হইনি। তিনি (জিএম কাদের) যা করেছেন ভালোই করেছেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |