প্রচ্ছদ আন্তর্জাতিক ৬৩ স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করেন মুসলিম সেনাপতি, নেপথ্যে কী

৬৩ স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করেন মুসলিম সেনাপতি, নেপথ্যে কী

মারাঠা জাতির অভ্যুদয়ের নায়ক ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার আগে সেনাপতি আফজাল খানের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেন একজন জ্যোতিষী। আফজাল খান এই ভবিষ্যদ্বাণীতে এতটাই বিশ্বাস করেছিলেন যে তিনি সেই অনুযায়ী পরবর্তী সব সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বিজাপুরের কাছে আফজালপুরায় তার ৬৩ জন স্ত্রীকে হত্যা করে কবর দেন, যাতে তার মৃত্যুর পর অন্য কোনো পুরুষ তাদের স্পর্শ করতে না পারে।

১৬৫৯ সালে বিজাপুরের তৎকালীন সুলতান দ্বিতীয় আলি আদিল শাহ শিবাজী মহারাজকে পরাজিত করতে তার সেনাপতি আফজাল খানকে পাঠান। এর আগে জ্যোতিষীরা আফজাল খানকে বলেছিলেন যে তিনি অভিযান থেকে জীবিত ফিরবেন না। আফজাল খান এই ভবিষ্যদ্বাণীতে পুরোপুরি বিশ্বাস করে ফেলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার জীবদ্দশায় নিজ সমাধি (নিজ প্রাসাদের কাছে) এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত মসজিদ নির্মাণ করার। খবর বিবিসি বাংলা, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

জানা যায়, ১৬৫৩ সালে এই দোতলা মসজিদটির কাজ শেষ হয়। (ধারণা করা হয় উপরের তলাটি নারীর জন্য সংরক্ষিত ছিল)। এর শিলালিপিতে আফজাল খানের নামের সঙ্গে নির্মাণের তারিখটিও লিপিবদ্ধ আছে। যদিও যখন তাকে শিবাজীর বিরুদ্ধে অভিযানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তখনও সমাধির কাজ শেষ হয়নি।

সেই ভবিষ্যদ্বাণীতে আফজাল খান এতটাই প্রভাবিত হয়েছিল যে তিনি সমাধির পাথরে যুদ্ধে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তার প্রস্থানের তারিখটিকেই নিজের মৃত্যুর তারিখ হিসেবে লিখে যান। তার কারণেই বিজাপুর ত্যাগ করার সময় তিনি এবং তার বন্ধুরা ধরে নিয়েছিলেন যে তিনি আর কখনও সেখানে ফিরবেন না। এ কারণেই তিনি স্ত্রীদের ডুবিয়ে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।

ইতিহাসবিদ লাক্সমি শারাথ জানান, আফজাল খান তার সব স্ত্রীকে একে একে কূপে ফেলে হত্যা করেন। তিনি বিজাপুরের কাছে আফজালপুরায় তার ৬৩ স্ত্রীকে হত্যা করে কবর দেন। তার বিশ্বাস ছিল তার মৃত্যুর পর অন্য কোনো পুরুষ বা শক্রুরা যেনো তাদের না পায়। তার স্ত্রীদের মধ্যে একজন পালানোর চেষ্টা করেও ধরা পড়ে এবং নিহত হন।

ইতিহাসবিদ হেনরি কাজিন্সের মতে, ৬৩ জন নারীর কবর ছাড়াও কম্পাউন্ডের একটি কবর খালি রয়েছে। ‘সম্ভবত দু-একজন নারী বেঁচে গিয়েছিলেন আর খালি কবর সেটাই ইঙ্গিত করে।’

ইতিহাসবিদ জাদওয়ানাথ সরকারের মতে, আফজাল খানের এই প্রাণঘাতী অভিযানের অনেক কাহিনী পরবর্তী বছরগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

মুহাম্মদ আনিসুর রহমান খানের গবেষণা অনুযায়ী, ভারতের বর্তমান কর্ণাটক রাজ্যের বিজাপুর শহরের আল-আমিন মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি বন ও মরুভূমির মাঝের একটি জায়গায় প্রাচীর ঘেরা পুরানো ভবনের মধ্যে থাকা বেদিতে সাত সারিতে একই রকম অনেকগুলো কবর রয়েছে। এটি ‘ষাট কবর’ নামে পরিচিত।

আরও জানা যায়, এই ৬০টি কবরই আফজাল খানের স্ত্রীদের, যাদের তিনি শিবাজীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার আগে নিজ হাতে হত্যা করেছিলেন যেন মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদের অন্য কেউ বিয়ে কিংবা বন্দি করে অসম্মান করতে না পারে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।