ভারতে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় আগামী সোমবার (২২ জানুয়ারি) নবনির্মিত সুবিশাল রামমন্দিরে মহাসমারোহে যে বিগ্রহের ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ হতে যাচ্ছে, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সেরকম জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন খুব কমই হয়েছে।
পাশাপাশি এটাও বলার, ওই প্রাচীন নগরীতে ওই মাত্র কয়েক একর জমি এবং তার ওপর এক সময় বহুকাল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ধর্মীয় কাঠামো যেভাবে ‘বিতর্কিত কাঠামো’ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গোটা দেশের সমাজ ও রাজনীতিতে সুদীর্ঘ উথালপাথাল ফেলেছে ভারতে তার কোনও দ্বিতীয় তুলনা নেই।
এ দেশে পর্যবেক্ষকরা সবাই প্রায় একবাক্যে বলে থাকেন বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ঘটনা যেমন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের ভিতেই সমূলে আঘাত করেছে, তেমনি রামমন্দির আন্দোলনের সূত্রেই দেশের শাসনক্ষমতায় হিন্দুত্ববাদী শক্তির আসার পথ প্রশস্ত হয়েছে।
অথচ সাতচল্লিশে দেশের স্বাধীনতার কিছুদিন পর থেকেই পরবর্তী প্রায় চার দশক ধরে ‘বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি’ নামে পরিচিত এই উপাসনালয়ে কোনও ধর্মের মানুষেরই প্রবেশাধিকার ছিল না– কারণ অযোধ্যায় মূল ভবনটি সরকার তালাবন্ধ করে রেখেছিল।
যেখানে মুসলিমরা এক সময় নিয়মিত নামাজ পড়তেন সেই মসজিদে হঠাৎ কেন তালা ঝোলাতে হলো এবং তার প্রায় ৩৭ বছর পর কেন হঠাৎ সেই তালা খুলে দিয়ে মন্দিরের ‘শিলান্যাস’ করতে দেওয়া হলো– সেই কাহিনি কোনও সাসপেন্স থ্রিলারের চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয়!
কাকতালীয়ভাবে, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর নির্দেশেই অযোধ্যার ওই বিতর্কিত কাঠামো সিলগালা করা হয়েছিল। আর সেই তালা যখন খোলা হয়, তখন দেশের ক্ষমতায় তারই দৌহিত্র বা নাতি রাজীব গান্ধীর সরকার।
আর অযোধ্যায় এই পটপরিবর্তনকে রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সবচেয়ে সফলভাবে কাজে লাগিয়েছে দেশের যে দলটি, তারা নিঃসন্দেহে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি। সেই কাজে তাদের সাহায্য করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা বজরং দলের মতো সহযোগী সংগঠন।
১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যে বিজেপি-র মাত্র দু’জন এমপি ছিলেন, সেখান থেকে মাত্র পাঁচ বছর পরেই গোটা দেশে তাদের আসনসংখ্যা বেড়ে হয় ৮৬। আর ২০১৪ সালের মধ্যেই তারা ২৮২টি আসনে জিতে একার শক্তিতে সরকার গড়ার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে।
এই চমকপ্রদ রাজনৈতিক উত্থানের পেছনে রামমন্দির আন্দোলনের এবং সেই সঙ্গে দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডভানির নেতৃত্বে ‘রথযাত্রা’র যে একটা বিরাট ভূমিকা আছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সবাই তা মানেন।
পাশাপাশি এই হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনে কংগ্রেসের দ্বিধান্বিত ভূমিকার জন্যই যে তারা ভারতে তাদের মুসলিম জনসমর্থন অনেকটা হারিয়েছে তা নিয়েও বিশেষ সংশয় নেই। ভারতের মুসলিম সমাজ ক্রমশ ভরসা হারিয়েছেন তাদের এক সময়ের প্রিয় দলের ওপর।
ভারতের হিন্দি বলয়ে, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে কংগ্রেসের প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পেছনেও এটা একটা বড় কারণ বলে মনে করা হয়।
আর পরিসংখ্যান বলে, দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে জিততে না পারলে ভারতে কোনও দলের পক্ষেই দেশের ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়।
অথচ ভারতের বর্তমান লোকসভায় উত্তরপ্রদেশের মোট ৮০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের ঝুলিতে আছে মাত্র একটি, যেটি সোনিয়া গান্ধীর আসন রায়বেরিলি।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |