জাতীয়:জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দফতর হলো নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি)। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ মাঠ প্রশাসনে নিয়োগ-পদায়ন হয় এই দফতর থেকে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর নিরপেক্ষ প্রশাসন সাজাতে গতকাল রোববার এই পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ পেয়েছেন ১৭ ব্যাচের কর্মকর্তা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: আব্দুর রউফ এনডিসি। যিনি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসন সাজাবেন এই কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি) এর অতিরিক্ত সচিব ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার পদে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় খুলনায় যোগদান করেন। সহকারী কমিশনার হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বাগেরহাট ও ঝিনাইদহে চাকরি করেন। এর পর ২০০৩ সালের ৩ জুন সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। ওয়ান-ইলেভেনের পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ তাকে পদায়ন হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে। যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি পান ২০১৯ সালের ১৬ জুন। এ সময় তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এবং নীতিনির্ধারণী মন্ত্রণালয় নামে বিবেচিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন প্রভাবশালী এই মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থেকে চলতি ২২ মার্চ তাকে অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন এই কর্মকর্তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গতকাল গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি) পদে পদায়ন করলো। সকালে পদায়নের পর দুপুরেই যোগদান করে কাজ শুরু করছেন এই কর্মকর্তা। একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, মুখ্যসচিব এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগের জন্য বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার তৎপরতা শুরু করেছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এপিডি উইংটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর। সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ বদলি ও পদায়ন হয় এই দফতর থেকে। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) এর সব কাজ প্রস্তুত হয় এখান থেকেই। কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত নানা তথ্য এই দফতরে সংরক্ষণ করা হয়। যার ওপর নির্ভর করে কর্মকর্তার চাকরি, পদায়ন ও পদোন্নতি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বঞ্চিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও প্রশাসনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। আওয়ামী লীগ সমর্থক না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত রয়েছেন কয়েক শ’ কর্মকর্তা। বিসিএস কোয়ালিফাই করেও পুলিশের গোপনীয় প্রতিবেদনে বিরূপ মন্তব্য থাকায় যোগদান করতে পারেনি অনেকে। প্রত্যশা ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশাসনে পরিবর্তনের মাধ্যমে সব ধরনের বৈষম্যের অবসান হবে। কিন্তু নতুনভাবে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করায় বৈষম্যের প্রতিকার পাওয়ার বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
জানতে চাইলে পদোন্নতি বঞ্চিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি ও বিসিএস ১৩ ব্যাচের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ১৬ বছর ধরে কয়েক শ’ কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন। যার ফলে এই মুহূর্তে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি) বিভাগে কাজ করার মতো যোগ্য কর্মকর্তার সঙ্কট রয়েছে। নতুন একজনকে এই পদে পদায়ন করা হয়েছে, যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। পদোন্নতিও পেয়েছেন নিয়মিত। তার পরেও কাউকে না কাউকে তো কাজ করতে হবে। আমরা তার কাজের বিষয়ে সচেতন থাকবো।
জানতে চাইলে সাবেক সচিব আব্দুল আওয়াল মজুমদার বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকেই প্রশাসনের পদায়নগুলো করা হয়। এ জন্য একজন সৎ, দক্ষ, স্মার্ট কর্মকর্তাকে এই পদে পদায়ন করা উচিত। প্রশাসনে দলবাজি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ দলবাজি করেন তাহলে এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। সরকার নিশ্চই সব ধরনের খোঁজ খবর নিয়েই হয়তো তাকে পদায়ন করেছে। এ জন্য আমি মনে করি তাকে কাজ করার সুযোগ দেয়া উচিত।
সূত্র : নয়া দিগন্ত
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |