জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাওয়া টাকার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত রাসেলের মায়ের ওপর হামলা করা হয়েছে। এমন অভিযোগে রাসেলের স্ত্রী বর্ষার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে যাত্রাবাড়ী থানায় এ মামলা দায়ের করেন নিহত রাসেলের বড় ভাই মো. রুবেল। তবে অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা দাবি করেছেন বর্ষা। তার ভাষ্য, সবার সামনেই বিয়ে হলেও এখন তাকে সম্পদের ভাগ থেকে বঞ্চিত করতে রাসেলের স্ত্রী হিসেবেই অস্বীকার করা হচ্ছে।
রাসেলের পরিবারের দাবি, কথিত স্ত্রী বর্ষার সঙ্গে রাসেলের বিয়ে হয়নি। বর্ষার একাধিক স্বামী রয়েছে। জুলাই আন্দোলনে রাসেল নিহত হওয়ার পর বর্ষার কোনও হদিস ছিল না। পরে ‘শহীদ পরিবারকে’ আর্থিক অনুদান দেওয়া কথা শুনে বর্ষা নিজেকে রাসেলের স্ত্রী বলে দাবি করছেন। তিনি আর্থিক অনুদানের টাকার ভাগ চাইছেন। তবে বর্ষা দাবি করেন— রাসেলের সঙ্গে দুই বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল। এরআগেও তার একাধিক বিয়ে থাকার কথা স্বীকার করে বর্ষা বলেন, রাসেল তার তৃতীয় স্বামী। রাসেলের আর্থিক অনুদানের ভাগ তিনিও পাবেন।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট যাত্রবাড়ী থানা এলাকায় জুলাই আন্দোলনে যোগ দিয়ে নিহত হন মো. রাসেল। তিনি যাত্রাবাড়ী এলাকায় মাছের আড়তে কাজ করতেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। রাসেলের সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে তার আরও দুই ভাই যোগ দিয়েছিলেন। তারাও আহত হয়েছিলেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তারে আরেক ভাই।
নিহত রাসেলের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছর আগে রাসেল একটি বিয়ে করেছিলেন। সেই ঘরে তাদের কোনও সন্তান না হওয়ায় ২০২৩ সালে তিনি বর্ষাকে বিয়ে করেন। তখন বর্ষা ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এরপর ওই সন্তানকে রাসেল নিজের সন্তান হিসেবে মেনে নিয়ে ছিলেন বলে দাবি করেন বর্ষা। প্রায় দুই বছর বর্ষা ও রাসেলের সংসার ঠিকঠাক মতো চললেও সমস্যা বাঁধে রাসেলের মৃত্যু ও শহীদ পরিবারের জন্য বিভিন্ন সংস্থা থেকে আসা আর্থিক অনুদানের টাকার ভাটভাটোয়ারা নিয়ে।
জানা যায়, গত ৬ নভেম্বর নিহত রাসেলের মা সফুরা বেগমের নামে পাঁচ লাখ টাকার একটি ব্যাংক চেকে আর্থিক সহায়তা দেয় ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন’। পরে বর্ষার অভিযোগের ভিত্তিতে সেই অনুদানের ব্যাংক চেক স্থগিত করে দেয় সংস্থাটি। এরআগে রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী থেকে দুই লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় রাসেলের পরিবারকে। সেই টাকা রাসেলের মা সফুরা বেগম এবং তার স্ত্রী বর্ষা ভাগ করে নেন। তবে জুলাই ফাউন্ডেশনের টাকার ভাগভাটোয়া নিয়েই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
রাসেলের বড় ভাই মো. রুবেল জানান, বর্ষার সঙ্গে রাসেলের কখনও বিয়ে হয়নি। তবে তারা পরস্পরকে চিনতো। শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা শুনে বর্ষা নিজেকে রাসেলের স্ত্রী বলে দাবি করেন। বর্ষা, তার বোনেরা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে রাসেলের মা ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর একাধিকবার হামলা, মারধর ও হত্যাচেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন রাসেলের ভাই রুবেল।
এঘটনায় গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলার আবেদন করেন নিহত রাসেলের বড় ভাই রুবেল। মামলায় আসামি করা হয়েছে— রাসেলের স্ত্রী বর্ষা আক্তার, তার ভগ্নিপতি মো. আশিক, বড় বোন বৃষ্টি, খালাতো বোন ময়না, মিতু, বর্ষার বেয়াইন শম্পা এবং মা নাজমা বেগমকে। এ মামলায় মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বর্ষার বোন ভগ্নিপতি আশিককে গ্রেফতার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ ডিসেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ নভেম্বর যাত্রবাড়ী থানার শনির আখড়ার গোবিন্দপুর এলাকায় বর্ষা, তার মা, বোন এবং পরিবারের সদস্যরা নিহত রাসেলের মা ও তার পরিবারের ওপর হামলা করে। এতে রাসেলের মা সফুরা বেগম এবং বড় ভাইয়ের মেয়ে জান্নাত (৪) মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
নিহত রাসেলের মা সফুরা বেগম বলেন, ‘তারা (বর্ষা ও তার পরিবারের সদস্যরা) আমার ওপর একাধিকবার হামলা করেছে। আমার এবং আমার নাতির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমরা অনেকদিন ধরে অসুস্থ। বিছানা থেকে উঠতে পারি না। বর্ষা নামে কোনও মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে হয়নি। তারা মিথ্যা কথা বলে আমার ছেলের টাকা নিতে চাইছে। আপনারা এর বিচার করেন।’
এ ব্যাপারে বর্ষা দাবি করেন, ‘রাসেলের আগে বিয়ে হয়েছিল, আমারও আগে বিয়ে হয়েছে। এসব কথা দুজনের পরিবারের সবাই জেনেই আমাদের বিয়েতে মত দিয়েছে। সবার সামনেই কাজি অফিসে গিয়ে আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমরা দুজন একসঙ্গে দুই বছর সংসারও করছি। এখন তারা আমাকে অস্বীকার করছে। আমার স্বামীর সম্পদের ভাগ আমিও পাই। কিন্তু রাসেলের মা ও তার ভাইয়েরা আমাকে কোনও সহায়তা করছে না।’
বর্ষার বড় বোন বৃষ্টি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় রাসেলের পরিবারের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু কোনও মারামারি হয়নি। এখন তারা রাসেলের স্ত্রী বর্ষাসহ আমাকে, আমার স্বামী এবং আমাদের মায়ের নামে মামলা দিয়েছে। পুলিশ মীমাংসার কথা বলে থানায় ডেকে নিয়ে আমার স্বামীকে জেলে পাঠিয়েছে। এই শীতের মধ্যে আমরা এখন বাচ্চা পোলাইন নিয়ে বাসায় থাকতে পারছি না। পুলিশের ভয়ে ঘরের বাইরে থাকতে হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক আহম্মেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে নিহত শহীদ রাসেলের আর্থিক সহায়তার অনুদানের ভাগভাটোয়ারা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এনিয়ে রাসেলের স্ত্রী বর্ষা ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে রাসেলের মা ও তার পরিবারের ওপর একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। দুই-একটি অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। মারামারির ঘটনায় রাসেলর ভাই রুবেলের দায়ের করা মামলার তদন্তে প্রমাণ পাওয়ায় বর্ষার বোন জামাই আশিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সুূুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |