সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ মা-বাবাকে নিয়ে আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে নিয়োগ পাওয়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(নোবিপ্রবি) কৃষি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মিটুল কুমার কুণ্ডু। যা আবেগতাড়িত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং পুলিশের অন্য সাব-ইন্সপেক্টরদেরও।
মিটুল কুমার কুণ্ডু তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টের এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, যেদিন ৩৯ তম সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের ভাইবার পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল দেয় আমি তখন বাড়িতে টিউবওয়েলের মটরের লাইন ঠিক করছি। হঠাৎ বন্ধু পাভেল ফোন দিয়ে জানাল ভাইবার ফলাফল দিয়েছে এবং সে টিকেছে। আমাকে ফলাফল দেখতে বলল। বাবা পাশেই লাউয়ের মাচা ঠিক করছিল। আমার কথা বলা শুনে এগিয়ে এল। আমি ফলাফল দেখছি। একটা একটা পেজ স্ক্রলিং করছি। বুকটা ধরফর করছে। রোলের ক্রমানুসারে আমার রোলের পেজে চলে আসছি। বাবা বারবার বলছে ‘কি হলো? চিন্তা করিস না। ঠাকুর ভরসা।’ একটু পরেই আমার রোলটা পেয়ে গেলাম। বাবাকে বললাম, ‘বাবা, আমি ভাইবায় টিকে গেছি’। বাবা এরপর একটা কথা বলেন নি। শুধু কাঁদতেছিলেন। চোখ মুছতে মুছতে কালীবাড়ি চলে গেলেন। মন্দিরে প্রণাম করে আবার কাঁদতে কাঁদতে ফিরেছেন।
এদিকে মা গিয়েছে শবদাহে শ্মশানে। সঙ্গে মোবাইল নিয়ে যায়নি। শ্মশানযাত্রীদের কেউ একজন মোবাইল নিয়ে গেছিল। কিভাবে জানি চাকরির সংবাদটা সেখানে চলে গেছে। মা সুখরবটা শুনেই শ্মশান থেকে দৌঁড়ে পায়ে রওনা দিলেন। আমাদের বাড়ি থেকে শ্মশান প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। মাঝখানে একটা নদী আছে। ব্রীজ দিয়ে আসতে গেলে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা বেশি হাঁটা লাগে। আর নদীতে নেমে সরাসরি পাড় হলে এক কিলোমিটার রাস্তা কম ঘুরা লাগে। মা ব্রীজ দিয়ে না এসে সরাসরি নদীতে নেমে গেলেন। সাঁতার কেটে নদী পার হলেন। পথিমধ্যে অনেকেই আবার মাকে সুখবরটা দিলেন। ভেজা কাপড়ে একপ্রকার দৌঁড়ে কালীবাড়ি এসে পৌঁছালেন। মন্দিরে প্রণাম করে বাড়ি আসলেন। আমি তখনও কলেরপাম্প ঠিক করছি। হাতের কাজটা ফেলে রাখি কি করে! মাকে বললাম, ‘নাও ছেলে দারোগা হয়ে যাচ্ছে’। মা আমার কাছে এসে কপালে চুমু এঁকে দিলেন, আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদা শুরু করলেন। মা-বাবা দুজনেই কাঁদছেন। আমি কাঁদছিলাম কি-না মনে নেই। শুধু মা কয়েকবার আঁচল দিয়ে আমার চোখ-মুখ মুছে দিলেন। দুজনেই কাঁদছেন, কাঁদুক। মাঝেমধ্যে আনন্দে একটু কান্নাকাটিরও করার দরকার আছে।
সারদা থেকে দুইসেট ট্র্যাকশ্যুট দিয়েছিল। একসেট বাবাকে, অন্য টুটুলকে দিয়ে এসেছি। জয়েনিং করার পর আমি নতুন আরেক সেট পেয়েছি। টুটুল বাড়িতে গেছে। ভিডিও কলে কথা হলো। বাবা, আমি আর টুটুল একই ড্রেস পরেছি। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বাবাকেই বেশি মানিয়েছে। এই মানুষটাকে কখনো বুকে জড়িয়ে ধরা হয়নি, মুখফুটে বলা হয়নি ভালোবাসি বাবা।
মিতুলের ফেসবুকের সেই স্ট্যাটাসে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম লিখেছেন, ‘কোনদিন বাবার এমন সুখের অশ্রুর কারণ হব’। সাব-ইন্সপেক্টর লিংকন সরকার লিখেছেন, ‘আবেগঘন লেখা। মা-বাবা এমনই সন্তানের সাফল্যে, আনন্দে আনন্দিত হন। ওনাদের জন্য শ্রদ্ধা।’ আরেক সাব-ইন্সপেক্টর মো. হোসাইন লিখেছেন, ‘আমাকেও কাঁদতে বাধ্য করলি ব্যাচমেট।’
মিটুল কুমার কুণ্ডুর বাড়ি নড়াইল জেলার সদর উপজেলার বাহিরগ্রামে। তার বাবা গোপাল কুণ্ডু পেশায় কৃষক এবং মা লক্ষ্মী রাণী কুণ্ডু গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে মিটুল সবার বড়।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |