সারাদেশ: জামালপুরে যৌতুকের টাকা না পেয়ে গরম পানি দিয়ে স্ত্রীর শরীর ঝলসে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সদর উপজেলার গেটপাড় এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। ওই গৃহবধূর নাম নিশি আক্তার। তিনি মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের নাগেরপাড়া এলাকার প্রবাসী আব্দুল মান্নানের মেয়ে। এই ঘটনায় জামালপুর থানায় ওই গৃহবধূর বড় বোন মৌসুমী আক্তার বাদী হয়েছে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় গৃহবধূর শ্বশুর আশেক আলীকে আটক করেছে পুলিশ। স্বামী শিক্ষক আল-আমিন পালাতক রয়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম আল আমিন (৩৩)। তার বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চর মল্লিকপুর এলাকায়। তিনি শাহবাজপুর ইউনিয়নের জাফর শাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। জানা যায়, প্রায় দশ মাস আগে নিশির সঙ্গে বিয়ে হয় আল-আমিনের। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় ঝগড়া বিবাদ। গত ৩ মাস আগে ওই জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় নেন শিক্ষক আল-আমিন। ওই ভাড়া বাসায় স্ত্রী নিশিকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। গত সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে নিশিকে ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে মারতে শুরু করেন। পরে চা তৈরি করার জন্য রাখা গরম পানি দিয়ে নিশির শরীরে ঢেলে দেন। গরম পানিতে ঝলসে যায় তার শরীর। পরে ওষুধের দোকান থেকে কিছু ওষুধ কিনে এনে নিশিকে এই ঘটনা কাউকে না জানাতে বলে এবং ঘরে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখেন।
৭ দিন তালাবদ্ধ থাকার পর অসুস্থ বেশি হয়ে পড়লে শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিক চিকিৎসার জন্য নিশিকে নিয়ে যান। এ সময় নিশি তার বড় বোনকে ফোন করলে ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যায় স্বামী আল-আমিন। পরে গত সোমবার সকালে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আক্তার নিশি বলেন, গত সোমবার যৌতুকের টাকা দাবি করে কথা কাটাকাটি হয় আমাদের। পরে আমার গলা টিপ দিয়ে ধরে, হাত বেঁধে মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে চা বানানোর জন্য করা গরম পানি আমার শরীরে ঢেলে দেন। পরে ওষুধের দোকান থেকে কয়েকটা ওষুধ নিয়ে আসে এবং কাউকে না জানানোর জন্য আমাকে ভয় দেখান। সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় বাহির থেকে রুমে তালা মেরে স্কুলে চলে যেত আমার বিকেল বাসায় আসতো। সাত দিন আমাকে তালা মেরে রেখে। এক পর্যায়ে আমাকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে আমার বড় বোনকে ফোন করলে আমার বোন আসলে আমার স্বামী ওই জায়গা থেকে পালিয়ে চলে যায়।
নিশির মা নার্গিস বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের পিঠ, বুক ও পেট দেখার মতো অবস্থায় নেই। গরম পানি ঢেলে একবারে ঝলসে দিয়েছে। এতটা পুড়িয়ে দিয়েছে যে কেউ দেখলে ভয় পাবে। আমার মেয়ে তো কোনো অপরাধ করেনি। এভাবে নির্যাতন করার কী দরকার ছিল? আমার মেয়েকে নির্যাতনের বিচার চাই।’ মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, মানুষ কতটা নির্মম হলে এভাবে নির্যাতন করতে পারে। গরম পানি ঢেলে দিয়ে পাশে স্বামী হাসতে থাকেন। তাকে চিকিৎসা না করে উলটো ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখে। একজন শিক্ষক স্বামী হয়ে তিনি এই কাজ কীভাবে করতে পারেন? দ্রুত আল আমিনকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, নিশির শরীরের পিছনে ও সামনের অংশ পুড়ে গেছে। শরীরের বিশ শতাংশ পুড়ে গেছে। এই মুহূর্তে আর রোগীর আশঙ্কা নেই। চিকিৎসা চলছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। জামালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহব্বত কবীর বলেন, এই ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আলামিন পলাতক রয়েছেন। ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |