প্রচ্ছদ জাতীয় কাঁচের দেয়ালে ঘেরা পরিপাটি গণতন্ত্র কতোটা টেকসই?

কাঁচের দেয়ালে ঘেরা পরিপাটি গণতন্ত্র কতোটা টেকসই?

জাতীয়: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন। ক্ষমতাসীনদের নিকট ৭ই জানুয়ারি ২০২৪ এর নির্বাচন একটি মডেল হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে এ নির্বাচন পঁচাত্তর-পরবর্তী সর্বাধিক অবাধ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচন। আসলেই বাংলাদেশে এযাবৎ এমন ধাঁচের নির্বাচন আর হয়নি। সর্বশেষ ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যেটিতে প্রায় সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে এবং দেশ-বিদেশে উক্ত নির্বাচন ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শতকরা ৮৭ ভাগের অধিক ভোটার ভোট প্রদান করে। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে ভোটারদের তেমন আগ্রহ ছিল না। প্রথমটিতে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি, দ্বিতীয়টিতে অংশগ্রহণ করলেও কারচুপির কারণে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। উক্ত নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যেই ভূমিকা রাখে।

যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে তাদের ভিসা নীতির আওতায় আনার ঘোষণা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বেগ জানায়। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব এমন যুক্তি দেখিয়ে বিএনপিসহ অন্যান্য সমমনা দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করে। আগের দু’টি নির্বাচনে সাধারণ জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি’র দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে এবং আন্দোলনে সক্রিয় হয়। দেশি-বিদেশি চাপে সরকারও বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু গত বছরের ২৮শে অক্টোবর বিএনপি’র ডাকা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশটি পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে গেলে সেই থেকে শুরু বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং দমন-পীড়ন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি’র ক্রমবর্ধমান জনসম্পৃক্ততায় সরকার বিচলিত হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রয়োগ দ্বারা বিএনপিকে মাঠছাড়া করে। এমন অভিমতের অনুকূলে কিছু যুক্তিও আছে। যেমন- ২৮শে অক্টোবর জনসমাবেশ পণ্ড করে সরকার গণহারে বিরোধী নেতাকর্মী গ্রেপ্তার শুরু করে, যাদের কেউ কেউ রয়েছেন পরিচ্ছন্ন ইমেজের। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন যিনি বরাবরই অহিংস আন্দোলনের পক্ষে কথা বলতেন কিন্তু তাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজ বাসভবন থেকে আটক করে।

বিরোধীদের জন্য রাজনীতির ময়দান ক্রমে সংকুচিত হতে থাকে। বিএনপি’র দাবি- এযাবৎ তাদের প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অস্বাভাবিক দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অনেককে শাস্তি দেয়া হয়েছে। যারা গ্রেপ্তার হয়নি তারাও আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সরকারের এমন আচরণে দেশ-বিদেশে মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যক্তি ও সংস্থা বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ্ (এইচআরডব্লিউ) গত ২৬শে নভেম্বর ২০২৩ তারিখ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক অংশীদারদের কাছে দাবি করছে, তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু একইসঙ্গে দেশটির রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিরোধীদের দিয়ে কারাগার ভরছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাধারণ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ দেশটির বিরোধী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু করছে, যেটির মূল উদ্দেশ্য হলো বিরোধী দলবিহীন একটি প্রতিযোগিতা শূন্য নির্বাচন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী ২৮শে অক্টোবর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র একটি পূর্বপরিকল্পিত সমাবেশের পর এক মাসের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নির্বাচনের প্রায় দু’মাস আগেই বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের অধিক মানুষ আটক ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার ও ভিডিও বিশ্লেষণ দ্বারা এইচআরডব্লিউ প্রমাণ পেয়েছে, নির্বাচনসংক্রান্ত সহিংসতার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়ী (দ্য ডেইলি স্টার, ২৭শে নভেম্বর ২০২৩ থেকে অনূদিত)। জোহানেসবার্গ ভিত্তিক নাগরিক পরিসর পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সিভিকাস’ (ঈওঠওঈটঝ) গত ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের নাগরিক পরিসর ‘ক্লোজড’ শ্রেণিভুক্ত করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। মূলত বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত উপাত্ত সমন্বয় করে সিভিকাস একটি দেশের নাগরিক স্বাধীনতার শ্রেণিবিভাজন করে থাকে। পাঁচটি শ্রেণির মধ্যে প্রথমটি হলো ‘ওপেন’ বা উন্মুক্ত, ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ অবস্থানে যথাক্রমে ‘ন্যারোড’ বা সংকুচিত, ‘অবস্ট্রাকটেড’ বা বিঘ্নিত এবং ‘রিপ্রেসড’ বা নিপীড়িত।

বাংলাদেশ রয়েছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অবস্থানে, যেটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ক্লোজড’ বা রুদ্ধ (দ্য ডেইলি স্টার, ৬ই ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে অনূদিত)। এর বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সক্রিয় ছয়টি মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে নাগরিক পরিসর সংকুচিত হওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এসব সংগঠন ১২ই ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, গত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশ সরকার বানোয়াট মামলার ভিত্তিতে ২০ হাজারের বেশি বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের ওপর অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে (দৈনিক প্রথম আলো, ১২ই ডিসেম্বর ২০২৩)।

রাষ্ট্রযন্ত্রের চাপায় পিষ্ট হয়ে বিএনপি মাঠছাড়া হলে সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোতে থাকে। কিন্তু এমন নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে বিবেচনা থেকে সরকার নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। পশ্চিমাদের সঙ্গে আপসেরও চেষ্টা করে। তবে এমন কোনো আপসের ব্যাপারে কখনো কোনোকিছু খোলাসা করেনি। বরং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তৃতায় এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। গত অক্টোবরে এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘তলে তলে আপস হয়ে গেছে। আমেরিকার দিল্লিকে দরকার।

দিল্লি আছে, আমরাও আছি, আর কোনো চিন্তা নেই’। যদিও পরবর্তীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে তলে তলে কোনো আপস হয়নি বলে জানিয়েছেন। কার বক্তব্য সত্য আর কার মিথ্যা তা আমাদের অজানা। তবে যেটি জানা তা হলো, আওয়ামী লীগ ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনকে বিদেশিদের নিকট গ্রহণযোগ্য করতে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নির্বাচনে সক্রিয় রাখতে ২৬টি আসনে সমঝোতা করে। অথচ গত নভেম্বরে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় মাঠ পর্যায়ের প্রায় সকল নেতা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী ছিল না। সভায় ৫৯ জন নেতার মধ্যে ৫৮ জন নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দেন। একজন নেতা যিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করেন তিনি অন্যদের রোষানলে পড়ে তার বক্তৃতা শেষ না করেই নেমে যেতে বাধ্য হন। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জাপা’র দরকষাকষি চলতে থাকে। কথিত আছে, চাপে পড়ে জাতীয় পার্টি (জাপা) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সম্মতি দেয়। জাপা ছাড়াও ‘কিংস পার্টি’ খ্যাতিপ্রাপ্ত কয়েকটি নামসর্বস্ব দলকে নির্বাচনী দৌড়ে রাখতে সরকার বেশ কৌশলী হয়। সর্বশেষ ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তবে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক করতে আওয়ামী লীগ এবার নজিরবিহীন যে ব্যতিক্রমী কাজটি করেছিল তা হলো নিজ দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দেয়া। রেকর্ডসংখ্যক ২৬৯ জন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে নেমে এক কৃত্রিম গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে।

সবকিছুর মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়া বাদে অন্য অনেক দেশ সরকার প্রধানকে ইতিমধ্যে অভিনন্দন জানিয়েছে। রাশিয়া থেকে আগত আমন্ত্রিত পর্যবেক্ষক নির্বাচনের দিনই প্রশংসা নিয়ে হাজির হয়। রাশিয়ার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে আমন্ত্রণও জানিয়েছে রাশিয়া। চীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের নতুন সরকার এবং জনগণের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ফোন করে টানা চতুর্থবার সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে ইতিহাস সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভাবনার বিষয় হলো রাশিয়া, চীন, ভারত কিংবা পশ্চিমা দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে কতোটা অবাধ ও নিরপেক্ষ বলেছে তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বাংলাদেশের জনগণের নিজস্ব মূল্যায়ন। ২৯৯টির মধ্যে ২৯৮টি আসনের নির্বাচনী ফলাফল আমাদের জানা। ২২২ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছে যাদের মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের। অর্থাৎ সর্বমোট ২৮০ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থক প্রার্থীরা জয়ী। জাতীয় পার্টির প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ১১ যা পূর্বের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত রিয়াদুল করিম এবং সামছুর রহমান পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় ২৪১টি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি বরং ১০৪টি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিপরীতে থাকা অন্য প্রার্থীরা সবাই জামানত হারিয়েছেন। কল্যাণ পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদ একটি করে আসন পায়। অবশিষ্ট ২৩ দলের প্রার্থীদের মধ্যে একজন ছাড়া অন্য সবাই জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচনী শৃঙ্খলা নিয়েও অনেক বিতর্কের অবতারণা হয়, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

নির্বাচনী পরিবেশে অসন্তুষ্ট জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান একপর্যায়ে আওয়ামী লীগকে ভোট ডাকাত আখ্যা দেন এবং নির্বাচন পরবর্তী এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন সঠিক হয়নি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন ছিল সরকারের ইচ্ছানুযায়ী একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন এবং এ নির্বাচনের কারণে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না, এ সরকারকে কেউ বিশ্বাস করবে না। বাস্তবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর একটি প্রধান কারণ হতে পারে ভোট প্রদানের হারসংক্রান্ত তথ্য ঘিরে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ভোট প্রদানের হার ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ কিন্তু সবশেষে জানানো হলো পুরোদিনে অর্থাৎ ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ভোট প্রদানের হার মোট ভোটারের ৪১ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ হিসাব অনুযায়ী প্রথম ৭ ঘণ্টায় ভোট প্রদানের হার ২৬ শতাংশ হলেও শেষ ১ ঘণ্টায় এ হার প্রায় ১৬ শতাংশ। শেষ ঘণ্টায় এত দ্রুতহারে ভোট বৃদ্ধি পেতে হলে ভোটকেন্দ্রসমূহে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দৃশ্যমান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ ঘণ্টাতো নয়ই, কেবলমাত্র সাংবাদিক কিংবা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে ক্ষণিকের জন্য কৃত্রিম সারি ছাড়া সারাদিন কোথাও ভোটারের দীর্ঘ সারি দৃশ্যমান ছিল না। বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদের মতে, কোনো ম্যানিপুলেশন ছাড়া সার্বিক ভোট পড়ার হার ২৪-২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ার এ হার নিয়ে বিতর্ক হয়তো একটি অমীমাংসিত বিতর্ক হিসেবে থেকে যাবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যিনি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের এজেন্ট দেখতে পাননি তিনি অবশ্য ভোটের হার সঠিক বলেছেন। বিতর্কে না গিয়ে আমরা যদি ধরে নিই শতকরা ৪২ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছে তাহলে অবশিষ্ট ৫৮ ভাগ ভোটার কোথায়? তাদের কি ভোটাধিকার নেই? তারা কতো বছর যাবৎ ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত কিংবা বঞ্চিত? বড় একটি রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে, কাঁচের দেয়াল দ্বারা বেষ্টনী দিয়ে, নিজেরা নিজেদের মধ্যে কৃত্রিম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে একটি পরিপাটি গণতন্ত্র নির্মাণ করা হয়েছে তার স্থায়িত্ব কেমন তা দেখার অধীর আগ্রহে আমরা অপেক্ষমাণ।

অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।