প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ কেন এমন হলো ভাবছেন শমসের মবিন

কেন এমন হলো ভাবছেন শমসের মবিন

সিলেট-৬ আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী ও দলের চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। তার ভোটের হিসাব গিয়ে পৌঁছে তলানীতে। এ আসনে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে ভোটে লড়াই করেছেন স্বতন্ত্র সরওয়ার হোসেন। তৃতীয় অবস্থান তার। নির্বাচনের ফলাফলের পর এ নিয়ে নতুন করে ভাবছেন তিনি। কেন এমন হলো- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন।

শমসের মবিনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা জানান, এখনো নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি শমসের মবিন। ফলাফল নিয়ে তিনি বিশ্লেষণ করছেন। তারা জানান, শমসের মবিন জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন সব সময়। ভোট গণনাকালেও তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।

শমসের মবিন চৌধুরী বর্তমান সরকারের শাসনামলের শুরুতে ছিলেন বিএনপি’র সহ-সভাপতি। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর সিলেট বিএনপি’র পুরো কর্তৃত্ব তার হাতেই চলে এসেছিল।

সে সময় তিনি সিলেট-১ আসন থেকে বিএনপি’র হয়ে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৩ সালের দিকে তিনি নীরব হয়ে যান। পরে বিএনপি ছেড়ে চলে যান বিকল্পধারায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিকল্পধারার হয়ে তিনি সিলেট-৬ আসনে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ান।

এবারের নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন তিনি। ফলে তাকে নিয়ে ব্যাপক-আলোচনা শুরু হয়। সিলেট-৬ আসনের ভোটের মাঠে নানা জল্পনা দেখা দেয়। সেই জল্পনাকে সত্য করে এবারের জাতীয় নির্বাচনে তিনি র্তণমূল বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটের মাঠে তাকে নিয়ে নাটকীয়তার অন্ত ছিলনা। প্রচারণার শুরুতে তিনি মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। হঠাৎ করে তার সঙ্গে এক হয়ে ভোটের মাঠে নামেন সিলেট-৬ আসনের আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা। গোলাপগঞ্জে তাকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর কাদির শাফি এলিম ও বিয়ানীবাজারে সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন।

ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, বিজয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৭৮ ভোট। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন। তার ভোট হচ্ছে ৩৯ হাজার ৪৮৮। আর তৃতীয় স্থানে থাকা শমসের মবিন পেয়েছেন মাত্র ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট। বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে তার ভোটের ফারাক প্রায় ৪৭ হাজার।

ভোটের ফলাফল গণনার সময় তিনি গোলাপগঞ্জে অবস্থানকালে সাংবাদিকদের কাছে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার পর থেকে সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। গতকাল মানবজমিনের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। তৃণমূল বিএনপি’র গোলাপগঞ্জ উপজেলার নেতারা জানান, রাতে গোলাপগঞ্জের নিজ বাড়িতেই অবস্থান করেন শমসের মবিন চৌধুরী। সকালের দিকে তিনি সিলেটে চলে আসেন। তবে ফোনে নেতাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন। ফলাফল নিয়ে তিনি নেতাদের জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি ভাবছেন। বিশ্লেষণ করছেন। কেন এমন হলো সেটি তিনি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এরপর তিনি তার বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। তবে ফলাফলে তিনি হতাশ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নেতারা।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা তৃণমূল বিএনপি’র আহ্বায়ক সানাউর রহমান জানান, ফলাফলে আমরা হতাশ। এমনটি হওয়ার কথা ছিলো না। গোলাপগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের সঙ্গে বেইমানী করেননি। বিয়ানীবাজারের নেতারা শেষ পর্যন্ত আর সঙ্গে থাকেননি বলে মনে হচ্ছে। যদি তারা সঙ্গে থাকতেন তাহলে ফলাফলে এত বিপর্যয় হতো না। তিনি বলেন, ভোটের দিন বিয়ানীবাজারের বেশির ভাগ কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। গোলাপগঞ্জের কয়েকটি কেন্দ্রেও একই ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের তরফ থেকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। এজেন্ট বের করে দেয়ার পর যা হবার তাই হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, শমসের মবিনের পক্ষে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাদের কাজ করার জন্য ‘উপরের’ নির্দেশনা ছিল বলে জানিয়েছেন নেতারা। এ কারণে তারা শমসের মবিনকে নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছিলেন। কাজও করেছেন। মানুষ ভোট না দেয়ার কারণে পরাজয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ জানান, উপরের নির্দেশনায় আমরা কাজ করেছি। শমসের মবিনের পক্ষে মাঠে ছিলাম। প্রচারণাও চালিয়েছি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, আমরা মাঠে থাকলেও শেষ পর্যন্ত যারা নির্দেশনা দিয়েছিলেন তারা হয়তো শমসের মবিনের সঙ্গে থাকেননি। এ কারণে ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। তবে আমরা আমাদের কাজ করেছি। আমাদের কাজে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগের পদবিধারী নেতারা নৌকার সঙ্গে ছিলেন। কেউ কেউ স্বতন্ত্র কিংবা তৃণমূল বিএনপি’র সঙ্গে গেছেন। দলের নির্দেশনা ছিল যেকোনো নেতা তার পছন্দের প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করতে পারবে। এ কারণে আমরাও বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেইনি। তবে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতারা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে একাট্টা ছিলেন বলে জানান তিনি।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।