প্রচ্ছদ হেড লাইন জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকা হলো না, প্রাণ গেল প্রিয়তমা স্ত্রীর হাতেই!

জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকা হলো না, প্রাণ গেল প্রিয়তমা স্ত্রীর হাতেই!

অপরাধ: বন্ধুর থেকে নেওয়া মোবাইল নম্বরে পরিচয়। কিছুদিন কথার পর যা রূপ নেয় প্রেমের সম্পর্কে। হঠাৎ একদিন সবকিছুর ইতি টেনে প্রথমবারের মতো একে-অপরকে কাছ থেকে দেখা। তারপর টানা একবছর চুটিয়ে প্রেম। অবশেষে ভালোবাসার সেই সম্পর্ককে প্রণয়ে রূপ দেওয়ার চেষ্টা দুজনেরই। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে পরিবার। তবে কথায় আছে ‘ভালোবাসা মানে না কোনো বাঁধা’। বহুল প্রচলিত এ কথারই আরও একটি উদাহরণ তৈরি করেন তারা।

সব বাঁধা বিপত্তি ঠেলে পরিবারের অমতে প্রায় ৪ মাস আগে অন্যত্র গিয়ে বিয়ে সেরে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত একসঙ্গে থাকার শপথ নিয়েছিলেন এ যুগল। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের ছোট্র সংসার। একপর্যায়ে দুই পরিবারও মেনে নেয় তাদের বিয়ে। ফিরে আসেন বাড়িতে। কিন্তু হঠাৎই ওই সুখের সংসারে নেমে এলো অন্ধকার। প্রিয়তমা স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হয়েছেন স্বামী।

এমন নির্মম ঘটনাটি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের। মঙ্গলবার (২৬ ডি‌সেম্বর) রা‌তে জামালপুর জেলার স‌রিষাবা‌ড়ি উপ‌জেলার চর ডাকাইতাবান্দা এলাকা থে‌কে স্বামী নাঈম হোসেনের (২০) হাত-পা বাঁধা মর‌দেহ উদ্ধার ক‌রেছে পু‌লিশ।

নিহত নাঈম হোসেন উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের মাইজবাড়ি গ্রামের মো. শফিকুল ইসলাম (দুদুর) ছেলে। আর স্ত্রী রেশ‌মি খাতু‌ন একই উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়‌নের রামাইল গ্রা‌মের আব্দুর রাজ্জা‌কের মে‌য়ে।

চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় স্ত্রীসহ পরকীয়া প্রেমিক মাসুদকেও গ্রেপ্তার ক‌রে‌ছে পু‌লিশ। মাসুদ অর্জুনা ইউনিয়‌নের চরভরুয়া গ্রা‌মের আব্দুল হাইয়ের ছে‌লে।

জানা যায়, নাঈমরা দুইভাই, তিনিই ছিল সবার বড়। ছোটভাই ক্লাস সেভেনে পড়েন। তাঁর বাবা শফিকুল ইসলাম (দুদু) একজন চা দোকানি। স্থানীয় বাজারে তাঁর একটি ভাড়ায় নেওয়া দোকান রয়েছে। পরিবারে শত অভাব অনটন থাকলেও সন্তানদের কখনো বুঝতে দেননি। দীর্ঘদিন বিদেশ করে শূন্য হাতে ফিরেও স্ত্রী-সন্তানদের জন্য জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন তিনি। সাজানো-গোছানো সুখের এই সংসারে রেশমি নামের মেয়েটিই যে যমদূত হবে কে জানত?

এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শ্বশুর-শাশুড়ি তাঁর বড় মেয়ের বাড়ি নাটোর যাওয়ায় গত ১৬ ডিসেম্বর স্ত্রী রেশমাকে শ্বশুর বাড়িতে রেখে ১৮ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন নাঈম। যতদিন শ্বশুর-শাশুড়ি বাড়ি না ফেরেন ততদিন রেশমার সেখানেই থাকার কথা ছিল।

কিন্তু তিনদিন যেতে না যেতেই স্বামী নাঈমকে এসে নিয়ে যেতে কল করতে থাকেন রেশমা। নাঈমের হাতে টাকা না থাকায় বিকাশে ৫০০ টাকাও পাঠান তিনি। পরে গত রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে মায়ের কাছ থেকে আরও কিছু টাকা নিয়ে নতুন জামাকাপড় পরে রওনা দেয় শ্বশুরবাড়ি।

দুপুর একটা নাগাদ পৌঁছান তিনি। কয়েকঘন্টা বিশ্রাম নেওয়ার পর বিকালে চর দেখানোর কথা বলে স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে বের হন স্ত্রী রেশমা। বাড়ি থেকে বেশ দূরে এক নির্জন জায়গায় নিয়ে পরিকল্পিতভাবে পূর্বের প্রেমিক মাসুদসহ অন্যদের নিয়ে নাঈমকে নদীর পানিতে চুবিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন তিনি। পরে সেই লাশ বালুচাপা দিয়ে গুমের চেষ্টা করেন তারা।

সন্ধ্যার পর বাড়িতে এসে স্বামী নাঈমকে খুঁজে পাচ্ছেন না বলে রেশমা মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে কান্না শুরু করেন। শাশুড়িকে মাকে কল দিয়ে জানান, নাঈম টয়লেটের চাপে ভুট্টা ক্ষেতে গিয়েছিল, দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেলেও আর ফিরে আসেনি। পরে তিনি খোঁজ করে না পেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন।

পরদিন সকালেই নাঈমের পরিবার ও এলাকার কয়েকজন নাঈমের সন্ধানে রামাইল গ্রা‌মে যান। সেখানে স্ত্রী রেশমা তাদেরকে একই কথা বলে কান্না করতে থাকেন। সেদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে খালি হাতে ফিরে আসেন তারা।

এদিকে স্ত্রী রেশমার কথায় সন্দেহজনক মনে হলে থানা পুলিশকে জানায় নাঈমের পরিবার। পরে পুলিশ কৌশলে রেশমাকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজেই হত্যার কথা স্বীকার করেন। এবং লাশ কোথায় গুম করে রেখেছেন তাও জানান। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে প্রথমে প্রেমিক মাসুদকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আটক করে থানা পুলিশ। মাসুদ অর্জুনা ইউনিয়‌নের চরভরুয়া গ্রা‌মের আব্দুল হাইয়ের ছে‌লে।

পরে রেশমি ও মাসুদকে সঙ্গে নিয়ে লাশ উদ্ধার অভিযানে যায় পুলিশ। রা‌তে জামালপুর জেলার স‌রিষাবা‌ড়ি উপ‌জেলার চর ডাকাইতাবান্দা এলাকা থে‌কে স্বামীর মর‌দেহ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে নাঈম হত্যার শিকার হওয়ার আগের দেওয়া কয়েকটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। নাঈমের আইডিতে গিয়ে দেখা যায়, মৃত্যুর দিন অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর তাঁর আইডিতে তিনটি স্ট্যাটাস রয়েছে। প্রথম স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘প্রিয় তোমার সাথে এমন মূহুর্ত কাটাতে চাই, অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায়..!’ , দ্বিতীয় স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে চাই প্রিয়’ এবং শেষ স্ট্যাটাসে লেখা রয়েছে, ইয়া রব, আমি অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি আমাকে আরও একবার হেদায়েত দিন আমিন।

যদিও এই স্ট্যাটাসগুলো নাঈম নাকি অন্যকেউ দিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জানা গেছে, আসামি রেশমা ও তাঁর প্রেমিক মাসুদকে রিমান্ডে চেয়ে বুধবার বিকালে আদালতে প্রেরণ করেছে ভূঞাপুর থানা পুলিশ।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।