প্রচ্ছদ জাতীয় ডামি মিছিল!

ডামি মিছিল!

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ছিমছাম ও পরিপাটি করে সাজানো ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসে বসে আছেন এমপি প্রার্থী মন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তাকে ঘিরে চারপাশে নেতারা অবস্থান নিয়েছেন। বিভিন্নজন এসেছেন বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতারাও আছেন সারিতে। অফিস কক্ষে তিল ধারণের জায়গা নেই। মাঝে মাঝে করতালির শব্দ। অন্যদিকে অফিস কক্ষের বাইরে মুহুর্মুহু মিছিল। কিছুক্ষণ পরপরই আসছে মিছিল। গলা ফাটানো স্লোগান। সঙ্গে নানা স্তুতি বাক্য।

কক্ষের ভেতরে থাকা স্থানীয় নেতারা এমপি প্রার্থীকে জানাচ্ছেন বাইরে মানুষের ঢল। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে একের পর এক মিছিল নিয়ে আসছেন নেতাকে দেখতে। নেতার বক্তব্য শুনতে। প্রার্থীর মুখে তখন তৃপ্তির হাসি। প্রার্থী বলে যাচ্ছেন আবার ক্ষমতায় এলে কি করবেন, কি করা উচিত। দলকে কীভাবে আরও সুসংগঠিত করা যায়। বিরোধ মিটিয়ে এক কাতারে থেকে নেতৃত্ব দেয়া যায়। কাদেরকে আগামীতে পদ দেয়া হবে সে আশ্বাসও দিলেন। সবমিলিয়ে অফিস কক্ষের মধ্যে দারুণ পরিবেশ। সবার মুখেই তৃপ্তির হাসি। কিন্তু এক প্রত্যক্ষদর্শীর মনোযোগ আটকে গেল মিছিলের দিকে। টানা ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে তিনি শুধু মিছিল দেখলেন। কিন্তু মানুষের ভিড় পেলেন না। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তিনি ওই মিছিলের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলেন। তার ভাষায়-এত কম সময়ের মধ্যে এতবার মিছিল খুব একটা দেখা যায় না। তার বর্ণনায়, ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দলকে দেখলাম দূর থেকে মিছিল নিয়ে আসছে। তারা নির্বাচনের নানা স্লোগান দিচ্ছেন। আবার নেতার নাম ধরেও নানা ধরনের স্লোগান দেন। মিছিলটি অফিস কক্ষের গেট পর্যন্ত এসে থেমে যায়। এরপর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আরও জোরালো কণ্ঠে স্লোগান দিতে থাকেন। প্রায় ৫ মিনিট ধরে স্লোগান শেষে ওই দলটি যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে দ্রুত চলে যায়। কিছুক্ষণ পর দেখি আবারো মিছিল আসছে একই দিক থেকে। মজার বিষয় মিছিলের স্লোগান সেই একই, স্লোগানদাতাও সেইই। আরও মজার বিষয়, কিছুক্ষণ আগে যে দলটি মিছিল নিয়ে গেট পর্যন্ত এসেছিল এই মিছিলের দলটি তারাই। এভাবে আরও বেশ কয়েকবার তাদের একইভাবে মিছিল নিয়ে আসতে দেখলাম।
৫২ বছর বয়সী ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, জীবনে এত সময়ে কম মিছিল দেখিনি। কিন্তু এ ধরনের ডামি মিছিল এই প্রথম দেখলাম। প্রত্যক্ষদর্শীর ওই বর্ণনার পর বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক নেতা  বলেন, নির্বাচনের জন্য এখন আর মানুষ পাওয়া যায় না। টাকা দিলেও সবাই মিছিলে আসতে চান না। কিন্তু নেতারা যখন প্রচারণায় আসেন তখন তারা বিপুলসংখ্যক লোকের উপস্থিতি দেখতে চান। তাই বাধ্য হয়ে কিছু মানুষ জোগাড় করতে হয়। তাদের সঙ্গে দলের একনিষ্ঠ কর্মী ও সমর্থকরাও থাকেন। তারা বলেন, দলীয় প্রার্থী নেতাকে খুশি করতেই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়ে থাকে। তিনি অফিস কক্ষ থেকে মাঝে মাঝেই স্লোগানসহ মিছিলের আওয়াজ শুনতে পান। এতে তিনি ধারণা করেন অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে। মিছিলের পর মিছিল নিয়ে মানুষ তাকে সমর্থন দিতে আসছে। তবে এ এলাকার নেতারা জানান, এবারের নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রার্র্থী বরাবরের মতোই বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। কারণ তিনি দলের কাছে পরীক্ষিত এক নেতা। মানুষও তাকে ভালোবাসেন।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।