প্রচ্ছদ সারাদেশ নির্যাতনে শুধু কাতরিয়েছি চিৎকারও করতে পারিনি

নির্যাতনে শুধু কাতরিয়েছি চিৎকারও করতে পারিনি

সারাদেশ: ‘৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী চারজন আমার বাসায় আসলেন। এসে জিজ্ঞাসা করলেন আপনার নাম কি ইউনুচ? আমি হ্যাঁ বলতেই ঘরে ঢুকে তারা নিজেদের র‌্যাবের লোক বলে পরিচয় দিলেন। এরপর ঘরের এদিকে, ওদিকে একটু তাকিয়েই তাদের মধ্যে থেকে একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করলো মালডা কই? বুঝতে না পারাতে আমি বললাম কি জিনিস স্যার? তখন তাদের মধ্যে একজন বললো- বুঝবি! যখন হাত পা বেঁধে ঝুলাবো! কিছু না পেয়ে আমাকে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগালেন তারা। চেয়ারে পড়ে থাকা আমার ১০ বছর বয়সী মেয়েটার হিজাবটা দিয়ে মুখ বেঁধে ফেললেন। এরপর তাদের কাছে থাকা লাঠি দিয়ে তারা এলোপাতাড়ি নির্যাতন করতে থাকেন। বিকেল তিনটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের এলোপাতাড়ি মারার কারণে শুধু কাতরিয়েছি। মুখ বাধার কারণে চিৎকারও করতে পারেনি। তারপরেও তারা নির্যাতন বন্ধ করেনি।’

র‌্যাব সদস্যদের কাছে নির্যাতনের শিকার হয়ে এভাবেই নিজের নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন রিকশাচালক ইউনুচ আলী (৩৫)। তিনি যশোর শহরের রায়পাড়া সার গোডাউন এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে স্ত্রী, দুই সন্তান ও বয়স্ক মাকে নিয়ে প্রায় এক দশক ধরে বসবাস করেন। গোপালগঞ্জ জেলার মুকছেদপুর গ্রামের মৃত শাহাদাত মোল্লার ছেলে তিনি। নিয়মিত রিকশা চালানোর পাশাপাশি ইউনুচ সার গোডাউনেও কাজ করেন। র‌্যাবের কাছে নির্যাতনে আহত হয়ে বর্তমানে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভুক্তভোগী ইউনুচের অভিযোগ, র‌্যাব মিথ্যা অস্ত্র উদ্ধারের নামে তাকে নির্যাতন করেছে। তার নামে কোনো মামলা নেই। যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী বলেন, আঘাতের কারণে ইউনুচের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমে গেছে।

তবে র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন দাবি করেন, ভুক্তভোগী রিকশাচালকের বাসায় অস্ত্র রাখার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়েছিলো। তবে তার বাড়িতে অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তাহলে ইউনুচের শরীরে আঘাতের চিহ্ন এলো কিভাবে এবং হাসপাতালে ভর্তি হলো কেন তা নিয়ে মুখ খোলেননি ওই কর্মকর্তা। এদিকে ইউনুচ জামাকাপড় খুলে সাংবাদিকদের নির্যাতনের ক্ষত দেখান। এ সময়ও তিনি অঝরে কাঁদছিলেন। পায়ে আঘাত করার কারণে দুই পা দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটতে হচ্ছে। ইউনুচ বলেন, ‘আমি রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। প্রতিদিনের মতো শহরের রিকশা চালিয়ে দুপুরে ভাত খেতে বাসায় আসি। ভাত খাওয়ার পর পর র‌্যাবের লোকজন আসে। এসে অস্ত্রের কথা জিজ্ঞাসা করে। তারা অভিযান চালিয়ে কোনো অস্ত্র পায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনো অস্ত্রই দেখিনি। তার পরেও আমাকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। র‌্যাবের সদস্যরা যখন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে; তখন আমি কুরআন শরিফ ও আমার মায়ের মাথার উপরে হাত রেখে বলেছি আমার কাছে অস্ত্র নেই। তার পরও তারা বিশ্বাস করেনি। হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে, মুখে আমার মেয়ের হিজাব দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করেছে। আমি এখন অসুস্থ ও আতংকিত।’ ইউনুচের মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমরা অনেক গরীব মানুষ। আমার ছেলে রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কোনো মামলাও নেই। তার পরও মিথ্যা অভিযোগে আমার ছেলেটারে র‌্যাব এসে নির্যাতন করেছে। আমরা তাদের কতবার বুঝিয়েছি; তার পরও তারা কোনো কথা শুনেনি। ছেলেটা এখন অনেক অসুস্থ।’ প্রতিবেশীরা জানান, ইউনুচ দীর্ঘদিন ধরে সারগোউন এলাকাতে বসাবস করেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। র‌্যাব যখন তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে; উৎসুক এলাকাবাসীকে তখন ইউনুচের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, রিকশাচালক ইউনুচের উপর নির্যাতনের ভয়াবহতা দেখেছি। অমানবিক নির্যাতন চিহ্ন তার শরীরে ফুটে উঠেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার পেতে তাকে আইনগত সহযোগিতা করা হবে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।