শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের হাল ধরেছেন। তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা কাজ শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরেই রদবদল শুরু হয়েছে। কারণ, আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া প্রশাসন দিয়ে দেশ চালাতে সমস্যা হবে বলে মনে করছেন তারা। ফলে পুরোনোদের তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর/সংস্থায় পাঠানোর পাশাপাশি কিছু কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে রাখা হতে পারে। তবে প্রশাসনে ঢালাওভাবে রদবদল কিংবা পদোন্নতি দেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া।
তিনি বলেন, প্রশাসনে কর্মরত যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাদের ভালো দপ্তর/সংস্থায় রাখতে হবে। ঢালাওভাবে সবাইকে সরিয়ে প্রশাসন চালানো সহজ হবে না। যাদের নিয়ে বিতর্ক নেই, যারা তুলনামূলক বেশি নিরপেক্ষ, তাদের রাখতে হবে। কিছু কিছু জায়গায় অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। প্রশাসনের নিচের দিকে গণহারে বদলি করা ঠিক হবে না। প্রশাসন সবসময় সরকারের ইচ্ছায় কাজ করে বলেও মনে করেন সাবেক এ কর্মকর্তা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ইতোমধ্যে বাতিল করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর খুবই আস্থাভাজন ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব পদে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে শেষ মুহূর্তে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। দু-এক দিনের মধ্যেই মুখ্য সচিব নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও কয়েকজন ডেপুটি গভর্নর। তবে এখনো নতুন গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিনের পদত্যাগের পর সেখানে মো. আসাদুজ্জামানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর তাদের পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের পদত্যাগের পর নতুন আইজিপি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। র্যাবও পেয়েছে নতুন মহাপরিচালক (ডিজি)। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার পদেও এসেছে নতুন মুখ। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে আরও রদবদল হবে বলে শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে জেলা পুলিশ সুপারদের তুলে আনার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের সচিব রদবদল ব্যাপকভাবে শুরু হবে। এ নিয়ে সচিবদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। এ ছাড়া চুক্তিতে থাকা সচিবদের নিয়োগ বাতিলের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। যদিও তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের চুক্তি বাতিলেরও গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে, মাঠ প্রশাসনেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে বলে শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা পুলিশ সুপারদের (এসপি) পর্যায়ক্রমে তুলে আনার চিন্তা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কারণ, শীর্ষ প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কর্মকর্তারা ডিসি-এসপি হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছাত্রজীবনে সরাসরি আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এসব কর্মকর্তার ওপর আস্থা রেখে আগাতে চায় না সরকার। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সুতরাং এসব পদে সরকারের আস্থাভাজন থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। বিশেষ করে অতীতে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মাকসুদ কামাল এবং হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেন। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও উপাচার্যদের কেউ কেউ পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। ফলে উপাচার্যশূন্য হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেবে সরকার। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নতুন প্রশাসন দিয়ে চলবে।
কর্মকর্তারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পুরোপুরি সফল হতে হলে পুরোনো প্রশাসন বহাল রাখা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। কারণ, তারা আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেষ্টা করবে। দ্রুত তাদের সরিয়ে আগে বিভিন্ন সময়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |