গুরুর নামে যখন গাঁজা খাওয়া হয়, তখন সেটা সিদ্ধি আর এমনি এমনি খেলে তা নেশা করা, পাগলামি”। কিছুদিন আগে এমন করেই বলেছিলেন লালন ভক্ত মাজারের খাদেম ফরিদপুরের মনা পাগলা। বাজারে আমরা গাঁজা বা মারিউয়ানা নামে সাইকোঅ্যাক্টিভ ড্রাগটি কে চিনলেও বিভিন্ন আস্তানা বা মাজারে তা সিদ্ধি হিসেবে পরিচিত। আবার এই সিদ্ধিই নাম পাল্টে দেশের বিভিন্ন!
ক্যাম্পাসে,বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলো তে হয়ে যায় ‘পট’। ‘পট করা'(গাঁজা সেবন) সংস্কৃতি এখন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ১২ ই ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে ৯৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ভিতরে গাঁজা গাছ পাওয়া যায়। শুধু রাজশাহী কিংবা বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নয় স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ গুলো অবাধে মাদক গ্রহণের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বেশ এগিয়ে এ দিক দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের রুম থেকে শুরু করে স্টেশন, সেন্ট্রাল ফিল্ড, বিভিন্ন ঝুপড়ি এমনকি একাডেমিক ভবনের আশে পাশে বিভিন্ন পরিত্যক্ত ভবনে গাঁজা, ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য সেবনের চিত্র মেলে হর হামেশা। ক্যাম্পাসে আসার আগে থেকেই যারা মাদকসেবী হল গুলোতে এসে মাদকাসক্ত সিনিয়র, কিছু বিপথগামী ছাত্রনেতা, অছাত্র,বহিষ্কৃত ছাত্র এবং বহিরাগতদের ছত্রছায়ায় গড়ে তুলে ‘পটখোর’ গ্রুপ, গাঁজা সেবন করার মাধ্যমে তৈরি হয় শক্ত বন্ডিং।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা জানান, দেশের বৃহত্তম ক্যাম্পাসে অপার স্বাধীনতা পেয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাসহ সেন্ট্রাল ফিল্ড, কলা ঝুপড়ি, ঝর্ণা, স্টেশন, বিভিন্ন ঝুপড়িতে বসে আড্ডা দেওয়ার পাশাপাশি খুব স্বাভাবিকভাবে মাদক গ্রহণ করেন স্থানীয় বহিরাগত ও কিছু বিপথগামী শিক্ষার্থী।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গাঁজা,ইয়াবা,আইস, ফেনসিডিল।
আবাসিক শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন,প্রায় প্রত্যেক হলেই রাতে বসে মাদকের আসর। গাঁজার ঝাঁজালো গন্ধ ভেসে আছে নাকে। নির্দিষ্ট কিছু রুমে বসে ”পট করে।’ এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা কিছু বিপথগামীর জন্য জড়িয়ে পড়ছে মাদক সহ অসংখ্য অপরাধে। তবে ‘পট খাওয়ার এবং মদ্য পানের বিশেষ মজমা বসে হল পার্টি,ব্লক পার্টি, জম্মদিন অথবা ক্যাম্পাসে কোনো গানের কনসার্ট থাকলে। এখন এগুলো স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স,হেল্থ এন্ড ডিসিপ্লিনের জরুরি সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় গোপন/সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী যেকোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি, ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সম্ভাব্য মাদক বিক্রির স্থান ও মাদক সেবনের স্থানসমূহে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদক বিরোধী অভিযান চলমান আছে বলে জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার।এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় সচেতনতা মূলক সভা ও সেমিনার করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অবশ্য ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদক গ্রহণের যে প্রবনতা দেখা যায় তা সত্যিই আশংকাজনক। মাদকের থাবা থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে চবি প্রশাসন কে আরো কঠোর হওয়ার পাশাপাশি সন্দেহজনক স্থান এমনকি হলের বিভিন্ন রুম গুলোতেও তল্লাশি ও মাদকের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশই বন্ধুদের প্ররোচনায় শুরু করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, দেশে ৪০ লাখ মাদকাসক্তের মধ্যে ৪ লাখ নারী। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯১ শতাংশ কিশোর ও তরুণ, ৪৫ শতাংশ বেকার, ৬৫ শতাংশ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এবং ১৫ শতাংশ উচ্চ শিক্ষিত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদকাসক্তি রুখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও সুশীল সমাজসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই গড়ে তুলতে হবে মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |