বিএনপিকে ভুলে যাওয়ার খেসারত দিলেন এমপি মোকাব্বির খান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনের বিশ্বনাথের ৭৪টির মধ্যে ১৫টি ভোটকেন্দ্রে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে কোনো ভোটই পাননি গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা এমপি মোকাব্বির খান।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনার আশীর্বাদে বিএনপির স্বতঃস্ফূর্ত ভোটে এমপি নির্বাচিত হন গণফোরামের এই নেতা।
কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই উপজেলার ৭৪টি ভোটকেন্দ্রেই তার ভরাডুবি হয়েছে। আর এই ৭৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৫টি কেন্দ্রতেই তার উদীয়মান সূর্য প্রতীকে কোনো ভোট পাননি। বাকি ৫৯টি ভোটকেন্দ্রে ১, ২, ৩ এমনকি মাত্র একটি কেন্দ্রতে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন মাত্র ৪৩টি। এই ৭৪টি কেন্দ্রতে তিনি মোট ভোট পেয়েছেন মাত্র ৪৬৯টি। আর এ আসনের ওসমানীনগর উপজেলার ৫৪টি ভোট কেন্দ্রে ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ৪৫৩টি। এ নিয়ে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর পুরো আসন মিলিয়ে তিনি উদীয়মান সূর্য প্রতীকে মোট ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ৯২২টি। এই হিসাব অনুযায়ী প্রাপ্ত ভোটে তার জামানত বাতিল হয়েছে।
তার এ পরাজয় বিএনপিকে ভুলে যাওয়ার খেসারত হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
জানা যায়, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস পত্নী লুনার আশীর্বাদে বিএনপির সমর্থন নিয়ে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সারা দেশে আলোচনার ঝড় তুলেন। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারবিমুখে অনেকটা নাটকীয়ভাবে বিএনপির কাঁধে ভরসা করে এমপি নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে চলে তুমুল নাটকীয়তা।
নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনাকে অভিনন্দন জানিয়ে সেই নির্বাচন থেকে সরে চলে যান লন্ডনে। তখনো তার সেই নাটকীয়তার আরও কিছু অংশ বাকি ছিল। ওই নির্বাচনে আইনের বেড়াজালে আটকে যান লুনা। নির্বাচনের আর বাকি ছিল হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি দিন। একটি সিগন্যাল পেয়ে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মোকাব্বির খান দেশে ফিরে আসেন। অপ্রস্তুত অবস্থায় ফের নির্বাচনি মাঠে নামেন।
নির্বাচনের দিন শেষে লুনার নেতৃত্বাধীন বিএনপির কাঁধে ভর করে সূর্য প্রতীক নিয়েই জয়ী হন তিনি। গত নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর বদলে যান এই মোকাব্বির খান। ভুলে যান লুনার সেই সহযোগিতার কথা। যতই দিন যায়, বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে থাকেন তিনি।
শেষমেশ ইলিয়াসপত্নী লুনার সঙ্গেও যোগাযোগ ছেড়ে দেন। তার এমন নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে সর্বত্র চলতে থাকে আলোচনা-সমালোচনা। তখন বিএনপির এমপিরা সংসদে নানা ইস্যুতে কড়া প্রতিবাদ জানান কিন্তু মোকাব্বির খান ছিলেন প্রায় নীরব।
বিএনপির এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেও মোকাব্বির খান তা না করে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। এ নিয়েও কম সমালোচনা সইতে হয়নি তাকে; কিন্তু এমপি থাকা অবস্থায় দীর্ঘ এই ৫টি বছর নিজের এলাকায় গণফোরামের অস্তিত্বের জানানও দিতে পারেননি তিনি।
পাঁচ বছর এমপি থাকার পরও জনসম্পৃক্ততা প্রায় শূন্যের কোঠায় ছিল। উন্নয়ন নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। তার নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলেও সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে রয়েছে নলকূপ বিক্রির অভিযোগ।
গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেও এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার ভরাডুবি হয়েছে। গত নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে এ নির্বাচনে তার ভরাডুবি হওয়াটা বিএনপিকে ভুলে যাওয়ার খেসারত দিতে হয়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন।
নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর একান্ত সচিব ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম বলেন, গত নির্বাচনে ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনার মনোনয়ন বাতিল হলে গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা এমপি মোকাব্বির খানকে সাপোর্ট দেওয়া হয়। বিএনপির সাপোর্টে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপিকে ভুলে যায়। বিএনপি শপথ না নিলেও তিনি সংসদে শপথ নেন। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করেন। আর এবারের নির্বাচনে বিএনপিকে ভুলে যাওয়ার খেসারত দিলেন এমপি মোকাব্বির খান।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |