বেশ কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পানিশাইল গ্রামের একটি বাড়ির জানালাবিহীন সাতটির ঘর।
একচালা টিনের চার দেয়াল পাকা সাতটি আলাদা আলাদা ঘর। প্রায় প্রতিটি ঘর দৈর্ঘ্যে ৭ ফুট ও ৮ ফুট প্রস্থের। কোনো ঘরেই নেই কোনো জানালা। এসব ঘর নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। রহস্যঘেরা এসব ঘর কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু নির্মাণ করেছেন।
আব্দুর রকিব মন্টু সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। জানা গেছে, হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা মামার জমি দখল করে সেখানে এসব ঘর নির্মাণ করেছেন যুবলীগ নেতা আব্দুর রকিব মন্টু।
অভিযোগ রয়েছে, রহস্যঘেরা এই সাতটি ঘর ছিল আব্দুর রকিব মন্টুর ‘টর্চার সেল’ বা ‘আয়না ঘর’। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে গভীর রাতে কালো রঙের গাড়িতে করে এখানে লোকজন নিয়ে আসতেন মন্টু। এসব ঘরে প্রতিদ্বন্দ্বী বা বিরোধীমতের ব্যক্তিদের ওপর রাতভর চলতো নির্যাতন। ভোরে সেই গাড়ি নিয়েই চলে যেতেন মন্টু।
এমনটা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে স্থানীয়দের এই অভিযোগের সত্যতা এখনও নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আব্দুর রকিব মন্টু পানিশাইল (নিজগাঁও) গ্রামে নিজের ও দখলকৃত সম্পত্তিতে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছের বাগান। সেখানে নিজের জমি দুই একর ৭ শতাংশ থাকলেও অন্যদের জমি দখল করে ভোগ করছেন মোট দুই একর ৪৭ শতাংশ।
অভিযোগ রয়েছে, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল থাকাকালে যুবলীগ নেতা আব্দুর রকিব মন্টু বসতবাড়িসহ পাশের সব জমি কেড়ে নিতে কেয়ারটেকারকে দিয়ে একের পর এক মামলা দিয়েছেন তারই মামা পাশের জমির মালিক নুরুল ইসলাম কলা মিয়া (৮৩) ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা না পাওয়ায় তা আর নিতে পারেননি তিনি। গত ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর রাতের আঁধারে নিজগাঁও কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশে আব্দুর রকিব মন্টুর সম্পত্তির কেয়ারটেকার আব্দুল মালেককে হত্যা করে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে ওই রাতেই বসতঘর থেকে পুলিশ গিয়ে নুরুল ইসলাম কলা মিয়া ও তার পরিবারের সব সদস্যদের ধরে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বাদী হয়ে রাজনগর থানায় ওই পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কলা মিয়ার নাতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আজিজুর রহমান প্রান্তকেও গ্রেপ্তার করা হয়। কলা মিয়ার পরিবারের সবাই কারাগারে থাকার সুযোগে তার বসতঘরসহ সব জমি দখলে নেন মন্টু। পরে কলা মিয়ার বসতঘরসহ নিজের জমির সামনের দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। বাড়ির নাম দেন ‘বশির-রাবেয়া কটেজ’।
ওই সীমানা প্রাচীরের ভেতরে নির্মাণ করেছেন একচালা টিনের আধাপাকা সাতটি আলাদা আলাদা ঘর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলায় কখনও এসব ঘর খুলতে দেখেননি। তবে গভীর রাতে আব্দুর রকিব মন্টুর লোকজন নিয়ে কালো রঙের গাড়িতে করে এখানে আসতেন আবার ভোররাতের দিকে বেরিয়ে যেতেন। তাকে স্থানীয়রা এতোটাই ভয় পেত যে প্রাচীরের ভেতরে যাওয়ার সাহস করত না।
পানিশাইল গ্রামের নান্নু মিয়া বলেন, আমরা ছোট থেকে দেখে আসছি কলা মিয়া এই বাড়িতে বসবাস করছেন। আমাদের এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলা মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা জেলে থাকার সময় মন্টু মিয়া তার বাড়ি ও জমিজমা দখল করে জানালাবিহীন আরও সাতটি ছোট ঘর বানিয়েছে। রাতের বেলায় এসব ঘরে মন্টু ও তার লোকজন আসতো। গ্রামবাসী মন্টুর ভয়ে এখানে আসতো না।
এলাকায় রহস্যঘেরা বাড়িটিকে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে রাজনগর থানা পুলিশের ওসির নেতৃত্বে সম্প্রতি পানিশাইল গ্রামের আলোচিত বাড়িটি পরিদর্শন করা হয়। প্রতিটি ঘরের তালা খুলে ৬টি ঘর একদম খালি পাওয়া যায়। একটি ঘরের এক পাশে একটি ৩-৪ ফুট গভীরের একটি পাকা ট্যাংক পাওয়া গেছে।
রাজনগর থানার চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ মো. এমদাদুল হক বলেন, আমরা বাড়ির প্রতিটি ঘর সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধিরাও পরিদর্শন করেছেন। সন্দেহজনক কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। তবে আমরা যতটুকু জেনেছি যে, অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার রাখার জন্য আব্দুর রকিব মন্টু ওই ঘরগুলো বানিয়েছিলেন। এছাড়াও আমরা প্রাথমিকভাবে যেটা পেয়েছি যেটা হলো- কলা মিয়া আর আব্দুর রকিব মন্টু আপনার মামা-ভাগিনা। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একে অপরের প্রতি নানাভাবে মিথ্যাচার করেছেন।
এর পরেও এলাকাবাসীর দাবির বিষয়ে পুলিশ আরও তদন্ত অব্যাহত রেখেছে বলে জানান ওসি এমদাদুল।
সূত্র : বাংলানিউজ
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |