কণ্ঠশিল্পী ও সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। নানা কারণে আলোচিত ও সমালোচিত দেশ জুড়ে। বাউল সম্রাট রশিদ সরকার ও মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র রমজান আলীর সংসারের ইতি টেনে বিয়ে করেছিলেন ডা. মঈন হাসান চঞ্চলকে। মমতাজের তৃতীয় সংসারও ইতি টানার পথে। কাগজে-কলমে বিয়ের তকমা থাকলেও তিন বছরের অধিক সময় ধরে কেউ কারও মুখ পর্যন্ত দেখাদেখি নেই। দুজন রয়েছেন দুই প্রান্তে। অভিযোগ উঠেছে তাদের দাম্পত্য কলহের সুযোগে মমতাজের এপিএস মাহমুদুল হাসান জুয়েলের নাম উঠে এসেছে আলোচনায়। মানবজমিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে মমতাজের একাধিক বিয়ে এবং তৃতীয় স্বামীর সাংসারিক নানান কাহিনী।
সংরক্ষিত আসনসহ টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের তৃতীয় স্বামী হচ্ছেন তারই চক্ষু হাসপাতালের (মমতাজ চক্ষু হাসপাতাল) চিকিৎসক ডাক্তার চঞ্চল। সুদর্শন চেহারার অধিকারী ডাক্তার চঞ্চল যেদিন মানিকগঞ্জ মমতাজ চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান সে থেকেই মমতাজ বেগমের দৃষ্টিতে পড়ে যান। তখনো মমতাজ মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র মো. রমজান আলীর স্ত্রী। মমতাজ-রমজানের ঘরে তখন ছিল দুই কন্যা সন্তান। রমজানের সঙ্গেও তখন মমতাজের দাম্পত্য কলহ চলছিল। তারই মধ্যে ডাক্তার চঞ্চলের সঙ্গে মমতাজের ভালোবাসা আদান-প্রদান চলতে থাকে। ২০০৯ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘ ১০ বছরের অধিক সময় বেশ সুখেই চলছিল মমতাজ-চঞ্চল দম্পতির সাংসারিক জীবন। রমজান-মমতাজের ঘরের দুই সন্তানকে নিজের সন্তানের মতোই আদর সোহাগ দিয়ে বড় করেছেন ডাক্তার চঞ্চল।
সূত্রমতে, ২০২০ সালের পর থেকেই মমতাজ- চঞ্চলের দাম্পত্য জীবনে কলহ দেখা দেয়। দুজনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বনিবনা হচ্ছিল না। কোনো এক রমজান মাসে তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হলে মমতাজের স্বামী চঞ্চলের বাসা থেকে চলে আসেন। এরপর থেকেই টানা তিন বছরেরও অধিক সময় তাদের মধ্যে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় মমতাজ চক্ষু হাসপাতাল ছেড়ে দেন ডাক্তার চঞ্চল। এসবের সত্যতা মানবজমিনের কাছে নিশ্চিত করেছেন ডাক্তার চঞ্চল। চঞ্চল এবং মমতাজের জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক অজানা তথ্য উদ্ঘাটন করেছে মানবজমিন। ২০২২ সালের ২৩শে আগস্ট সিংগাইর থেকে ঢাকা যাবার পথে ডাক্তার চঞ্চলের গাড়িতে আকস্মিক হামলা চালায় মমতাজের অনুসারীরা।
ডাক্তার চঞ্চল তার পেছনের ইতিহাস টেনে মানবজমিনকে বলেন, মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া অবস্থায় এক সহপাঠীকে বিয়ে করেছিলাম। দুজনেই লন্ডনে ছিলাম। সেখানে দেড় বছর সংসার করার পর আমাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর ২০০৪ সালে আমি লন্ডন থেকে বাংলাদেশে চলে আসি। ২০০৫ সালের জুলাই মাসে মানিকগঞ্জ শহরের মমতাজ চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করি। যোগদানের পরপরই মমতাজ আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তখনো আমি মমতাজের পেছনের সব ইতিহাস খুব ভালো জানতাম না। যখন দেখলাম একটা সংসার ছেড়ে বাচ্চাদের নিয়ে মমতাজ আমার সঙ্গে সংসার করতে চায় তখন আমার মধ্যে ইমোশন কাজ করতে শুরু করে। ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমরা দুজন দীর্ঘদিন সময় নেই। তারিখটা এই মুহূর্তে মনে না পড়লেও ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমিও ওর দু’টি শিশু সন্তানদের নিজের সন্তানের মতোই দেখতাম। ওরা আমাকে বাবা বলে ডাকতো। আমাকে সন্তান নেয়ার কথাও সে বলেছিল। কিন্তু আমি ওর দুই শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। এরপর মমতাজ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সহ আরও দুইবার এমপি হলেন। বেশ ভালো মতোই চলছিল সংসার। আমিও সারা জীবন ওর সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিলাম। দেশ-বিদেশে ওর গানের অনুষ্ঠানের সবখানেই আমাকে নিয়ে যেত।
এরপর নানা কারণেই সাংসারিক কলহ শুরু হতে থাকে। বছর তিনেক আগে আমাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। সময়টা ছিল কোনো এক রমজান মাস। আমি সেদিন এক কাপড়ে ওর বাসা থেকে বের হয়ে যাই। এরপর থেকেই মমতাজের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই। এরই মাঝে অনেক কিছুই শুনেছি, সেগুলো নিয়ে আমি কাউকে বিতর্কে জড়াতে চাই না।
ডিভোর্সের বিষয়ে চঞ্চল জানান, আমরা কেউ কাউকে ডিভোর্স দেইনি। পরবর্তীতে বিয়ে নিয়ে কোনো ভাবনা আছে কিনা- এ বিষয়ে চঞ্চল বলেন, নাকে খত দিয়েছি আর বিয়ে করবো না। পেরেশান থেকে মুক্ত হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ এখন ভালো আছি। হাসপাতাল ও রোগীদের নিয়েই ব্যস্ত সময় কেটে যাচ্ছে।
এদিকে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে মমতাজ বেগমের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত এপিএস মাহমুদুল হাসান জুয়েলের একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তাকে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ। এ বিষয়ে চঞ্চল বলেন, এ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। সেটা আপনারা সবই জানেন।
মমতাজ বেগমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের পর রশিদ সরকার মমতাজকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী মিলে বিভিন্ন জায়গায় গান গেয়ে বেড়াতেন। মমতাজ ও রশিদের ঘরে রয়েছে এক বাকপ্রতিবন্ধী ছেলে। গ্রাম থেকে উঠে এসে মমতাজ যখন গানের জগতে দেশে খ্যাতি অর্জন করতে থাকেন তখন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। ওই সময় মমতাজের সঙ্গে মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলীর সম্পর্ক গড়ে ওঠায় ২০০০ সালের পরে রশিদ সরকারের সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। সেই সময় মমতাজের জীবনে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভাব হন মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী। ২০০১ সালে রমজান ও মমতাজ বেগম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পৌর মেয়র রমজান আলীও বিবাহিত ছিলেন। সে ঘরেও একাধিক সন্তান রয়েছে। গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সাবেক সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ রমজান আলীও আত্মগোপনে রয়েছেন।
সূত্রঃ মানবজমিন
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |