রাজধানীর মালিবাগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে খতনা করার সময় চিকিৎসকের অবহেলায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে (জে এস হাসপাতাল) শিশুমৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে।
মারা যাওয়া শিশুর নাম আহনাফ তাহমিদ (১০)। বাবার নাম ফখরুল আলম। শিশুটি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত।
এদিকে বুধবার দুপুরে ছেলের লাশ নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন তাহমিদের বাবা ফখরুল আলম। এসময় সন্তানহারা বাবার চোখের কোণ গলিয়ে নীরবে ঝরছিল অশ্রু। আবার কখনও করছিলেন বুকফাটা আর্তনাদ। এসময় অস্ত্রোপচারের আগে ছেলের সঙ্গে কথোপকথনের স্মৃতিচারণ করে ফখরুল বলছিলেন, অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগেই হাত নেড়ে বিদায় নিয়েছিল তাহমিদ। কে জানত– এটাই সন্তানের শেষ বিদায়! ১০ বছর ওর সবকিছু আমি করতাম।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে নেয়ার আগে আমার বাচ্চাটা প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিল। বলছিল– বাবা, তুমি তো আমার পাশেই থাকবে। এর পর যখন অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় তখন বলছিল– বাবা, আমার সাহস আছে, তুমি টেনশন করো না।’
মর্গের সামনে গিয়ে দেখা গেল, আত্মীয়স্বজন অনেকে তাহমিদের বাবাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। এসময় ফখরুল বললেন, কাঁধে ছোট্ট সন্তানের লাশ বয়ে নিয়ে যাব– এটাও দেখা লাগল! বলছিলেন, ‘ওই ঘরের মধ্যে তাহমিদকে রাখা হয়েছে। আমার তাহমিদ ওখানে থাকতে পারবে না। ও কখনও এসব জায়গায় থাকেনি। বের করে নিয়ে আসো। আমি ওকে বাসায় নিয়ে যাব। ওর আম্মু অপেক্ষা করছে।’
পরে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর ২টার দিকে তাহমিদ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদরের আলেখার চরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
সেদিন যা ঘটেছিল
গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে খতনা করাতে নেয়া হয় তাহমিদকে। তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর তার মা-বাবাকে জানানো হয়, ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগবে। আধা ঘণ্টার বেশি পার হলে অপারেশন থিয়েটারের দরজা নক করলে বলা হয়, আর অল্প কিছু সময় লাগবে। এভাবে এক ঘণ্টা পার হয়ে যায়। তখন ফখরুল ভেতরে ঢুকতে চাইলে বলা হয়, আর একটু সময় অপেক্ষা করুন। এর পর সন্দেহ হলে জোর করেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে যান ফখরুল। দেখেন, ছেলে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। চিকিৎসকরা বুকে হাত দিয়ে চাপাচাপি করছেন। এ সময় চিকিৎসক মোক্তাদিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি সঠিক উত্তর দেননি। অন্য হাসপাতালে পরিবারের সদস্যরা নিতে চাইলেও কর্ণপাত করেননি চিকিৎসক। এক পর্যায়ে তাহমিদের বাবাকে জোর করে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে দেয়া হয়।
তাহমিদের মৃত্যুতে দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার
তাহমিদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন, মোক্তাদির হোসেন ও মাহবুব হোসেন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে– দুই বছর ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে মাহবুব অ্যানেসথেশিয়া দিয়ে অস্ত্রোপচার করে এলেও তার কোনো নিবন্ধন নেই। অ্যানেসথেশিয়া করতে হলে বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথোলজিস্টের সদস্য হতে হবে। তবে মাহবুব ওই সংগঠনের সদস্য নন। এ ছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সদস্য না হয়েও তিনি চিকিৎসা করে যাচ্ছিলেন। রাজশাহীর একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে মাহবুব ডিপ্লোমা করেছেন। গ্রেপ্তার আরেক চিকিৎসক মোক্তাদির গাজীপুরের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন। জেএসএস নামে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোক্তাদিরকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন।
হাতিরঝিল থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন বলেন, ঘটনার পরেই দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতে তোলা হলে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আরেক চিকিৎসক আজাদকে খোঁজ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |