প্রচ্ছদ হেড লাইন যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলে হারভেস্ট রিচ! ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮৬৭ কোটি টাকা।

যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলে হারভেস্ট রিচ! ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮৬৭ কোটি টাকা।

যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিভিন্ন সময় বিচ্ছিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এসব ঘটনায় পোশাকসংশ্লিষ্ট শ্রমিক নেতারাও জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে। এমনই এক ঘটনার বলি হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কারখানা ভুলতার হারভেস্ট রিচ।

শ্রমিক নেতাদের যোগসাজশে মার্কিন রোষানলে পড়ে আজ বন্ধ হয়ে গেছে কারখানাটি। এ মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটির ঋণের বোঝা দাঁড়িয়েছে ৮৬৭ কোটি টাকা।

তিন দশক আগে দেড়শ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠা কারখানাটিতে এখনও ২৮ শতাংশ মালিকানা রয়েছে জার্মান সরকারের।

তবে মালিকপক্ষের আশা, সরকার পদক্ষেপ নিলে ঋণের বোঝা কাটিয়ে আবারও কর্মমুখর হয়ে উঠতে পারবে কারখানাটি।

আইনজীবীরা বলছেন, ডুবন্ত সেই বিশাল জাহাজকে আবার কর্মসাগরে ভাসাতে এখন শেষ ভরসা উচ্চ আদালত।

হারভেস্ট রিচের চেয়ারম্যান এম এ বারি বলেন, ‘ফ্যাক্টরি দাঁড় করিয়েছিলাম বাই কোয়ালিটি- এভরিথিং। আপনি যদি টাইটানিক ছবি দেখেন ওই রকম হওয়া শুরু হলো – একটা বিশাল জাহাজ ধীরে ধীরে ডুবে গেছে। অ্যান্ড ফর মি ইট ওয়াজ ডিফকাল্ট, কারণ আমি জানি, আল্লাহ তুমি জানো, আমার কোনো অপরাধ ছিল না।’

হারভেস্ট রিচের ডুবে যাওয়ার কারণ জানতে গিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের গল্প উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি অলাভজনক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ইউটিউব চ্যানেলে এ বিষয়ের কিছু তথ্য মেলে। যিনি হারভেস্ট রিচের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন,, তিনি বাংলাদেশি শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার। গেল ১৬ নভেম্বর যার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ১১ বছরের হালিমার মাধ্যমে নাটকীয়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে হারভেস্টের নানা ত্রুটির কথা। ২০০৬ সালে ওই প্লাটফর্মে এমন বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রচার করেছিল কল্পনা ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো।

এ বিষয়ে এম এ বারি বলেন, ‘ভিডিও প্রকাশের পর পুমা ও টোসকোর মতো কোম্পানি বলেছিল, তোমাদের শিশুশ্রমিক নেই। তবে আমরা একটু সময় নেবো। বাট আবার আসবো বলে একে একে তারা চলে গেল।’

সত্যিই টাইটানিকের মতো গর্ব বুকে চেপে নির্বিকার পড়ে আছে হারভেস্ট রিচ। ডায়িং ফ্লোরে উন্নত সংস্করণের একেকটি জার্মান মেশিন মেলে ধরছে এর জৌলুস আর সক্ষমতার প্রমাণ। নিটিং-ডায়িং গার্মেন্টেসের কম্পোজিট মিল বলে দিচ্ছে উৎপাদনকে একসুথায় গাঁথার গল্প।

সুপ্রশস্ত সিঁড়িজুড়ে রয়েছে শ্রমিক কল্যাণে নেয়া নানা পদক্ষেপের চিত্র। বিশাল বিশাল ১৬টি প্রোডাকশন ফ্লোরে ৫ হাজার সেলাই মেশিন এখনও যেন বসে আছে সুসময়ের অপেক্ষায়। আর স্যাম্পল ডিসপ্লে রুম মেলে ধরছে ইউরোপ-আমেরিকার বাঘা বাঘা সব কোম্পানির সঙ্গে কাজ করার মধুর স্মৃতি।

নব্বইয়ের দশকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় দেড়শ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা কারখানাটি শ্রমিক অধিকার ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেয়েছিল ওয়ার্ল্ডওয়াইড রেসপনসিবল এক্রিডেটেড প্রোডাকশন র‌্যাপ সার্টিফিকেট।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এম এ বারি বলেন, ‘কমপ্লায়ান্ট ফ্যাক্টরি বলতে যা বোঝায়, এভরিথিং উই হ্যাড। এটা ছিল সিঙ্গেল ক্যাম্পাস বেসিস। কোনো কাজ করার জন্য বাইরে যেতে হতো না। একটা প্রোপাগান্ডা যে কী করতে পারে, হারভেস্ট রিচ ইজ এন এক্সাম্পল।’

৪২ কোটির ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮৬৭ কোটি টাকা, তথ্য বলছে, ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির মোট ব্যাংকঋণ ছিল ৪২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। পরবর্তীতে তা বেড়ে ২০২৩-এ ঠেকেছে ৮৬৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকায়। আবার কর্মমুখর হতে চায় জার্মান সরকারের ২৮ শতাংশ শেয়ার থাকা হারভেস্ট রিচ। যে প্রতিষ্ঠানটি ২০০৩, ৪ আর ৫ সালে তার শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দিয়েছে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।

লোন বাধা নিয়ে হারভেস্ট রিচের পরিচালক নুসরাত বারী আশা বলেন, ফোর্স লোন থেকে ব্যাড লোনে রূপান্তর হলো। কিন্তু দেশের টাকা দেশেই ছিল। দেশের প্রতিষ্ঠানও দেশে আছে, ম্যানেজমেন্টও আছে। শুধু ব্যাংক একটু সুযোগ দিলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম। কারণ এ ঘটনায় আমরা ভিকটিম।

এ বিষয়ে আইনজীবীরা বলছেন, উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলে নিশ্চয় মিলবে কোনো বিশেষ দিকনির্দেশনা। ব্যারিস্টার মাহসিব হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতের কাছে বিষয়টি গেলে নির্দেশনা আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধে সময় পেতে পারে প্রতিষ্ঠান। সে সময়ে তারা কারখানা চালু করতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে সরকার কোন উদ্যোগ নিলে বাজার ধরাসহ নানাভাবে পাশে থাকতে চায় বিজিএমইএ-বিকেএমইএ।

বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভিাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, হারভেস্ট রিচের মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ হয়ে গেল, সে বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত হওয়া দরকার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারখানাটি চালু করা গেলে অন্তত ১০ হাজার পরিবার তাদের সংসার চালানোর সুযোগ পাবে। তেমনি দেশের রিজার্ভে যোগ হবে ডলার।

পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে বেতন-ভাতা সমন্বয় করা হয়েছে। এরপরেও সংশোধিত বিষয়টি নিয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা। সম্প্রতি ৮ মার্কিন কংগ্রেসম্যান পোশাকশ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক ক্রেতাদের সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যারকে (এএএফএ) চিঠি দেন।

তবে কংগ্রেসম্যানদের চিঠির আগেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সংশ্লিষ্টরা এএএফএকে চিঠি দিয়ে বেতন সমন্বয়ের তথ্য জানান।

এ ঘটনার পর সম্প্রতি বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের যাপিত জীবন নিয়ে প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ফ্রিল্যান্সার লেখক তাসলিমা দাবি করেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে নারী পোশাক শ্রমিকরা সন্তান ও নিজের জীবন বাঁচাতে যৌনকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন।

‘ওমেন ম্যাকিং খ্রিস্টমাস জাম্পারস ফর ইউকে টার্নস টু সেক্স ওয়ার্ক টু পে বিল’ শিরোনামের লেখায় রুবি রফিক (ছদ্মনাম) নামের এক পোশাক শ্রমিকের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দাবি করা হয়, মূল্যস্ফীতির কারণে যেভাবে জীবনযাপনের ব্যয় বাড়ছে, তাতে রাতের বেলা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই রুবির কাছে।

গার্ডিয়ানের বরাত দিয়ে দেশের দৈনিক মানবজমিনও সংবাদটি প্রকাশ করে। ‘যৌনকর্মে নামতে বাধ্য হচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা’ এমন শিরোনামের সংবাদে পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের যে দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে তা নিয়েও সমালোচনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে এমন গল্প দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠনগুলো।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।