রাজধানীর সদরঘাটে দুই লঞ্চের মাঝখানে অপর একটি লঞ্চ ভেড়ানোর সময় পন্টুনে বেঁধে রাখা লঞ্চে ধাক্কা লেগে একই পরিবারের তিনজনসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন হলেন- পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মো. বেলাল (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা (২৪) এবং তাদের চার বছর বয়সী মেয়ে মাইশা।
দুঘর্টনার পর তাদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে তাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে দ্রুত ছুটে আসেন নিহত মুক্তার ভগ্নিপতি জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিল্লাল হোসেন (৩০) বাবাকে হারিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। বেঁচে আছেন কেবল মা আলেয়া বেগম। মা থাকেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। ঈদের সময় ছুটি পেয়ে বিল্লাল প্রতিবার ঈদ করতে ছুটে যান মায়ের কাছে। এছাড়া বেলাল তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন গাজীপুরে। ঈদে সব সময় তিনি গ্রামের বাড়িতে ঈদ করেন। কিন্তু মুক্তা অন্তঃসত্ত্বা থাকায় বেলাল সিদ্ধান্ত নেন এবার ভিড় এড়াতে ঈদের দিন তিনি বাড়ি যাবেন। কিন্তু লঞ্চচালকদের ধাক্কাধাক্কির প্রতিযোগিতার বলি হলো আমার বোনের সংসার। একটি পরিবার চিরতরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেল। এর দায় কে নেবে?
তিনি আরও বলেন, বিল্লাল পোশাক কারখানার চাকরি করে যে বেতন (১৪ হাজার টাকা), তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন বিল্লাল। তাই গাজীপুরে বাসার কাছে একটি দরজির দোকান দেন তিনি। স্ত্রী দরজির দোকান চালাতেন। দুজনের আয়ে মোটামুটিভাবে টিকে ছিলেন এ দম্পতি। তবে মুক্তা বেগম অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর স্ত্রীর কথা ভেবে দরজির দোকানটি ছেড়ে দেন বিল্লাল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানা গেছে, সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনে লঞ্চে ওঠার অপেক্ষায় ছিলেন বিল্লাল, তার স্ত্রী ও মেয়ে। তখন ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে যাত্রী ওঠানোর অপেক্ষায় ছিল এমভি তাসরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ নামের দুটি লঞ্চ। হঠাৎ ফারহান-৬ লঞ্চটি তাসরিফের ডান পাশ দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। তখন ফারহানসহ তিনটি লঞ্চের প্রায় ১০ মিনিট ধরে ধাক্কাধাক্কি হয়। সেই ধাক্কা লেগে হঠাৎ পন্টুনে বাঁধা এমভি তাসরিফের মোটা রশি ছিঁড়ে যায়। মোটা ওই রশি মুহূর্তের মধ্যে এমভি পূবালী-১–এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিল্লাল, তার স্ত্রী, সন্তানসহ পাঁচজনকে আঘাত করে। এতে বিল্লালসহ অন্যরা পন্টুনে পড়ে গিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান। ঘটনাস্থলে তাঁরা অচেতন হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে পন্টুনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে বেলালের পরিবার ছাড়াও দুর্ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন- ঠাকুরগাঁওয়ের রবিউল (১৯) ও পটুয়াখালীর রিপন হাওলাদার (৩৮)।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |