দেশজুড়ে: সারাহ ইসলামের থেকে পাওয়া কিডনি নিয়েও শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারলেন না শামীমা আক্তার (৩৪)। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে মারা যান তিনি। এর ফলে সারাহর কিডনি পাওয়া দুই নারীরই মৃত্যু হলো।
শামীমা আক্তার, দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট এর মাধ্যমে কিডনি নিয়েছিলেন তিনি।গত বছরের জানুয়ারি মাসে সারাহ ইসলামের অঙ্গদানের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট (ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন) করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শামীমা আক্তার এবং হাসিনার শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করে। এরপর এই কার্যক্রমটি ‘সফল প্রতিস্থাপন’ দাবি করা হয়।
কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে হাসিনা নামে কিডনি পাওয়া ওই নারী মারা যান। আর মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দ্বিতীয় রোগী শামীমা আক্তারের মৃত্যুর খবর জানালেন ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল।
বিষয়টি কষ্টের জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমজন ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গেছেন। এবার দ্বিতীয়জনও চলে গেলেন। এটি আমাদের জন্য খুবই কষ্টের। অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, শামীমা শেষ ছয় মাস আমাদের আওতার বাইরে ছিল। কিছুদিন আগে তার ভাই আমাদের জানায়, শামীমার ক্রিয়েটিনিন বেড়েছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে। পরে তিন সপ্তাহ তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। শুরুর দিকে কিছুটা উন্নতি হলেও কেন শুকিয়ে যাচ্ছিল সেটি ধরতে পারছিলাম না আমরা। কোনো উপায় না পেয়ে চার দিন আগে আইসিইউতে নেয়া হয় শামীমাকে।
‘এরমধ্যে তার সি ভাইরাস ও বিরল নিউমোনিয়া ধরা পড়েছিল। ডায়ালাইসিসও শুরু করেছিলাম আমরা। কিন্তু উন্নতি হয়নি। বাইরের হাসপাতালেও একদিন নেয়া হয়েছিল, অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় আবারও আমাদের আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানেই রাত ৯টার দিকে মারা যান তিনি।’
এই চিকিৎসক বলেন, হেপাটাইটিস সি পজিটিভ হলে ব্লাড কাজ করে না। এজন্য বিশেষ করে রক্ত লাগে, সেটিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর রেসপন্স করেনি। তবে, শামীমার মৃত্যুর জন্য তার পরিবারের সদস্যদের অবহেলাকেও দায়ী করেন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। বলেন, বাড়িতে থাকার সময়ে অবস্থা খারাপ হলেও আমাদের জানানো হয়নি। যখন তারা বিষয়টি জানিয়েছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এটা বড় অবহেলা ছিল। শুরুতেই যদি আমাদের জানাতো তাহলে হয়তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম, আরও ভালো চিকিৎসার প্রয়োজনে দেশের বাইরে নিতে পারতাম। তাহলে হয়তো এই অবস্থা দেখতে হতো না।
শামীমার বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায়। গত বছরের ১৯ জানুয়ারি সারাহ ইসলাম নামে ২০ বছরের তরুণীকে ব্রেন ডেড ঘোষণা করেন বিএসএমএমইউ চিকিৎসকরা। ওই রাতেই তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় দুই নারীর শরীরে। ওই তরুণীর চোখের কর্নিয়া দেয়া হয় অন্য দুজনকে।
এদিকে দ্বিতীয় ক্যাডাভেরিকের মাধ্যমে যে দুজনের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ৭ বছর ধরে কিডনি সমস্যায় ভোগা এক ব্যক্তিকে এ বছরের ২৫ জানুয়ারি দেশের দ্বিতীয়বারের মতো ব্রেন ডেথ রোগীর দেয়া কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। রাজধানীর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ওই প্রতিস্থাপন হয়। কিন্তু ১০ দিন না যেতেই ৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান ৪৪ বছর বয়সী ওই রোগী।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |