আলোচিত পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘সানবিস বাই তনি’র ব্যবসা শেষ করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল। এজন্য তাকে একটি অবৈধ অভিযোগে ও অপর একটি ভুয়া অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশ প্লাজায় অবস্থিত সানবিসের প্রধান শোরুম বেআইনিভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া তার অফিস ও অন্যান্য শোরুমে প্রতিদিন পুলিশ নিয়ে হানা দিচ্ছেন জব্বার মন্ডল। এজন্য নিজের ও ব্যবসার সুরক্ষায় ভোক্তা অধিদপ্তরের এমন তৎপরতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক নারী উদ্যোক্তা রোবাইয়াত ফাতিমা তনি। এর আগে অধিদপ্তরকে আইনি নোটিশ দেন তিনি।
তনির পাঠানো উকিল নোটিশ ও রিট পিটিশন থেকে জানা গেছে, গত ১৪ মে সানবিসকে দুটি অপরাধের দায়ে ৫০ হাজার ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। লুবনা ইয়াসমিন নামের এক নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যাষলয়ের সহকারী পরিচালক ইন্দ্রানী রায়। লুবনা ইয়াসমিন সানবিস থেকে একটি পোশাক কিনেছিলেন ৯ ফেব্রুয়ারি। এর ৫৩ দিন পর ৩ এপ্রিল ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। পরে ১২ মে সানবিসের প্রধান শোরুমে অভিযান চালিয়ে সেটি সিলগালা করে দেন সহকারী পরিচালক জব্বার মন্ডল।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৬০ ধারা অনুযায়ী অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে হয় ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে। কিন্তু লুবনা ইয়াসমিন অভিযোগ করেছেন ৫৩ দিন পর। ফলে তার অভিযোগ আমলে নেয়ার বৈধতা হারিয়েছেন। এই ৫৩ দিন তিনি ওই কাপড় ব্যবহার করে নষ্ট করেছেন কিনা সেটিও নিশ্চিত নয় কেউ। কিন্তু এমন অবৈধ অভিযোগ আমলে নিয়ে ৪৫ ধরা মতে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় সানবিসকে। এমন অবৈধ অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান আইনের প্রয়োগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন তনির আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন।
অন্যদিকে মিথ্যা বিজ্ঞাপনের অভিযোগে ৪৪ ধারায় সানবিসকে দ্বিতীয় জরিমানা (দুই লাখ টাকা) করেন ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল। দ্বিতীয় জরিমানার টাকা আদায়ের রশিদে অভিযোগকারী হিসেবে রাজু নামের এক ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে। কিন্তু রাজু নামে কোনো ব্যক্তি সানবিসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। এমনকি এই অভিযোগের বিষয়ে সানবিসকে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি বা শুনানিও হয়নি।
লুবনা ইয়াসমিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সানবিসের মালিক তনিকে তলব করেন ইন্দ্রানী রানি। তিনি ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা। কিন্তু সেই তলবের শুনানিতে অযাচিতভাবে হাজির হন ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল। এবং ভুয়া অভিযোগকারীর নামে নোটিশ বা শুনানি ছাড়াই বেআইনিভাবে দুই লাখ জরিমানা করেন। দুটি জরিমানার ক্ষেত্রেই তনিকে কোনো আদেশের কপি দেয়া হয়নি। যা রীতিমতো বেআইনি। শুধু জরিমানার টাকা গ্রহণের রশিদ দেয়া হয়।
এমন অবৈধ ও ভুয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে জরিমানা দিতে আব্দুল জব্বার মন্ডল রোবাইয়াত ফাতিমা তনিকে চাপ প্রয়োগও করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তনি। জরিমানা দিলে বিষয়টি এখানে মিটমাট হয়ে যাবে, না দিলে তনির অন্য যে ১০টি শোরুম রয়েছে সেগুলো অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও ভয় দেখান জব্বার মন্ডল।
এ বিষয়ে তনি বলেন, ‘জব্বার স্যার আমাকে বললেন, আপনাকে যে জরিমানা করা হচ্ছে এটা পরিশোধ করেন। তাহলে আপনার শোরুম আজ খুলে দেয়া হবে। না হলে অন্যান্য শোরুমে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হবে। তখন আমার ব্যবসা বাঁচাতে ওনারা যা বলেছেন তাই করেছি। কয়েকটি কাগজেও সাক্ষর নিয়েছে। কিন্তু ওনারা আমার শোরুম খুলে না দিয়ে টালবাহানা শুরু করে।’
এদিকে তনিকে দুই দফা জরিমানা করার পর তার শোরুম খুলে না দিতে কৌশলের আশ্রয় নেন জব্বার মন্ডল। তিনি তনির ব্যবসা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেন। পরের দিন শোরুম খুলে দিতে প্রতিশ্রুতি দিলেও তনিকে জানানো হয়, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত শোরুম বন্ধ থাকবে।
একজনকে একটি অবৈধ অভিযোগে ডেকে দুই দফা শাস্তি দেয়ার পর তদন্ত কমিটি করায় অধিদপ্তরের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তনির আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি কোনো ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি করেন তাহলে তদন্তের আগে কিভাবে দুই দফা শাস্তি দিয়ে ফেললেন? আর শাস্তি যখন দিলেন তাহলে শোরুম বন্ধ রাখলেন কিসের ভিত্তিতে? তাছাড়া তাকে যে শাস্তি দেয়া হয়েছে তার আদেশের কোনো কপি বা শোরুম বন্ধের আদেশের কোনো কপি তাকে দেয়া হয়নি। পুরো বিষয়টি তারা বেআইনিভাবে করেছে। এজন্য তারা আদেশের কপি দেননি। যাতে তনি চ্যালেঞ্জ করতে না পারে। এখন আমরা উচ্চ আদালতের কাছে বিচার প্রার্থনা করেছি। একজন নারী উদ্যোক্তাকে এমন হয়রানি করার প্রতিকার আমরা উচ্চ আদালতে পাবো আশা করি।’
এদিকে ১৩ তারিখে জরিমানা দেয়ার পর থেকে শোরুম খুলে দিতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জব্বার মন্ডলসহ একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছেন তনি। তাদের কাছে গিয়ে হাত-পা ধরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কোনো সুরাহা না হওয়ায় মঙ্গলবার (২১ মে) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ৮ জনকে আইনি নোটিশ পাঠান তনির আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন। একই সঙ্গে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন (পিটিশন নং ৬৩৩৯/২৪) দায়ের করেছেন। আগামী দুই থেকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে রিটের শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার আইনি নোটিশ পাওয়ার পর তনির সঙ্গে আরো বেপরোয়া আচরণ করছেন আব্দুল জব্বার মন্ডল। সকালে আইনি নোটিশ পাওয়ার পর বনানিতে অবস্থিত তনির অফিসে পুলিশ নিয়ে অভিযান চালাতে যান তিনি। তবে অফিস বন্ধ পান। সেখানে থেকে ধানমন্ডিতে অবস্থিত সানবিস বাই তনির শোরুমে অভিযান চালাতে যান। কিন্তু সেটিও বন্ধ পান জব্বার মন্ডল। বুধবার সরকারি ছুটির দিন থাকলেও সকালে থেকেই সানবিসের ধানমন্ডি শাখার সামনে পুলিশ বসিয়ে রাখেন জব্বার মন্ডল। ফলে শোরুম খুলতে পারেননি তনির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সানবিস বাই তনির ব্যবসা শেষ করে দিতে আব্দুল জব্বার মন্ডল বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তনি। সানবিস বাই তনির প্রতিদ্বন্দ্বী এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল জব্বার মন্ডলের বন্ধু। তার হয়ে জব্বার মন্ডল এসব করছেন বলে জানতে পেরেছেন তনি।
এ বিষয়ে তনি বলেন, ‘ওনারা যেভাবে যা বলেছেন আমি সেভাবেই সেই জরিমানা দিয়েছি, বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই তারা আমার ব্যবসা চালু করতে দিল না। পরে আমি শুনেছি, অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জব্বার মন্ডলের বন্ধু। বন্ধুকে একচেটিয়া ব্যবসায়ীক বাজার পাইয়ে দিতে আমার ব্যবসা শেষ করতে করছেন তিনি। আমি এটার প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছি। প্রমাণ হাতে আসলেই এটা নিয়েও আইনি ব্যবস্থা নেব।
এসব বিষয় নিয়ে সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তার মুঠোফোনে বারবার কল করলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি । এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ.এম শফিকুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি ।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |