দেশজুড়ে: তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষের ‘চাঁদাবাজিতে’ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সিলেটবাসী। পথে-ঘাটে, ট্রাফিক সিগন্যাল কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানে সবখানে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে তারা।
এমনকি বাসা বাড়িতে গিয়েও তারা চাঁদা আদায় করছেন। তবে এ ব্যাপারে অনেকটা ‘নীরব ভূমিকায়’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবহেলিত, অনাদৃত ও ভাগ্যবিড়ম্বিত হওয়ার এই সুযোগ নিয়ে তারা চাঁদাবাজি করছেন বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
অভিযোগ রয়েছে- হিজড়ারা নিয়মিত পুরো শহরে সন্ত্রাসী কায়দায় চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। বিশেষত কোথাও বিয়ের আয়োজন হলে সেখানে গিয়ে তারা বড় অংকের চাঁদা দাবি করেন। টাকা না পেলে তৈরী করেন বিব্রতকর পরিস্থিতি। ফলে বিপাকে পড়েন বরযাত্রী সহ কণেপক্ষের লোকজন। এ বিষয়ে বেশীরভাগ সময় প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করে।
জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নাজিরবাজার, লালাবাজার, সিলেটে শহরে প্রশেদ্বার খ্যাত ছন্ডিপুল, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়ক, নগরীর চৌহাট্টা, সুবিধবাজার, মদিনামার্কেট, হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.) মাজার এলাকা, টিলাগড়সহ জায়গায় জায়গায় অবস্থান নেন হিজড়ারা। বিয়ের গাড়ি এলেই চড়া হন তারা। দাবি করেন মোটা অঙ্কের চাঁদা। না দিলে শুরু করেন অপ্রীতিকর সব কাণ্ড। দুই হাজার থেকে দশ হাজার পর্যন্ত চাঁদা আদায় করেন তারা।
গত শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন নগরীর বন্দরবাজার এলাকার এক ট্রাভেলস ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশে অনিহা এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাইয়ের বিয়েতে আমরা শহরের উপশহর এলাকা থেকে মদিনা মাকের্ট যাচ্ছিলাম। কিন্তু সুবিধবাজার যাওয়া মাত্রই গাড়ি আটক করে চাঁদা দাবি করে হিজড়ারা। আমরা প্রথমে মানবিক কারণে এক হাজার টাকা দিতে রাজি হই। কিন্তু তারা ১০ হাজার টাকা চায়। পরে পরিস্থিতির শিকার হয়ে ৪ হাজার টাকা দিয়ে রক্ষা পেয়েছি।’
সরকারের পক্ষ থেকে হিজড়াদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে এই সমস্যা নিরসনের সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন সিলেট নগরীর পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কাজ করা সামাজিক সংগঠন ক্লিন সিটি সিলেটের সভাপতি নাজিব আহমদ অপু।
তিনি বলেন, পাবলিক এড়িয়ায় হিজড়াদের অস্বাভাবিক আচরণ শিশুদের প্রতি নীতিবাচক ধারণা তৈরী হবে। বিশেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে এই কর্মকাণ্ড দ্রুত বন্ধ করতে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
অধিকারকর্মী ইমরান ইমন বলেন, তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন হিজড়ারা। ফলে তাদের মানবাধিকার, ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে সব ধরনের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তারা এখন রাস্তা, শপিংমল, রেস্তোরাঁ, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, পার্কসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে তারা চাঁদাবাজি করে না। কেউ আবার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেই চলে অশ্রাব্য গালাগালসহ দুর্ব্যবহার। এর প্রতিকার দরকার।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগর ও পুরো জেলায় কয়েক হাজার হিজড়া রয়েছে। যার মধ্যে মহানগরজুড়ে চষে বেড়ায় প্রায় পাঁচশতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। সম্প্রতি হিজড়াদের চাঁদাবাজির বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বরাবরে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছে সিলেট কল্যাণ সংস্থা নামে একটি সংগঠন।
এই সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ এহছানুল হক তাহের বলেন, হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে সিলেট মহানগরবাসী অতিষ্ঠ। সিলেট মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টে হিজড়াদের উৎপাত মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েই চলছে। হিজড়ারা নগরীর প্রায় পয়েন্টে দলবেঁধে বরযাত্রার গাড়ি, বিদেশ যাত্রীদের গাড়িসহ যেকোনো অনুষ্ঠানের সাজানো গাড়ি আটকিয়ে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এমনকি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চাঁদা না দেয়া পর্যন্ত জোরজবরদস্তি করে। চাঁদার নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা না পেলে বা গাড়ির যাত্রীদের মধ্য থেকে কেউ কোনোরূপ কথা বলতে গেলেই তারা বিবস্ত্র হয়ে যায়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত হিজড়াদের শনাক্ত করে পুনর্বাসনসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা স্মারকলিপিতে দাবি জানিয়েছি। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার জাকির হোসেন খান বলেন, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান কঠোর রয়েছে। তারা হিজড়া হোক বা অন্য কেউ। আমরা দ্রুত এই বিষয়ে কর্যকর পদক্ষেপ নিবো।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |