প্রচ্ছদ দেশজুড়ে ১২ ব্যাগ রক্ত দিয়েছি, তবুও আবিরকে বাঁচাতে পারলাম না

১২ ব্যাগ রক্ত দিয়েছি, তবুও আবিরকে বাঁচাতে পারলাম না

দেশজুড়ে :১৯ জুলাই দুপুরের খাবার খেতে আবদুল্লাহ আল আবির বারিধারায় তাদের বাসায় যান। খাবার খেয়ে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে আবার কর্মস্থলে যায়। পরে সন্ধ্যায় ওর এক বন্ধু ফোন করে জানায় আবির অসুস্থ, গুলশান মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি আছে। দৌড়ে সেখানে গেলে জানতে পারি ওকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে ভাইকে বাঁচানোর জন্য ১৪ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই করেছি। বিভিন্ন স্থান থেকে ১২ ব্যাগ রক্ত দিয়েছি, তবুও আবিরকে বাঁচাতে পারলাম না। কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন আবিরের বোন মারিয়া।

মায়ের মোবাইলে থাকা মামা আবদুল্লাহ আল আবিরের (২৪) ছবি দেখে দুই বছরের ছোট্ট শিশু বারবার বলছিল- ‘মামার গুলি লাগছে, মামা মাটির নিচে ঘুমায়।’ পাশেই বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত আবিরের মা পারভীন সুলতানা ও একমাত্র বড় বোন মারিয়া ইসলাম মৌরি।

আবিরের স্মৃতিবিজড়িত বরিশাল নগরীর গোরাচাঁদ দাশ রোডের শত বছরের পুরোনো ‘মাহমুদালয়ে’ গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ পুরো বাড়ির লোকজন। কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সবাই। ঘরের মধ্যে শুধু এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে আবিরের একমাত্র ভাগ্নে। সবার মুখে শুধু একই কথা ‘এখন আপনারা আর কি লিখবেন, লিখলে কি আর আবিরেকে ফেরত পাব?

১৯ জুলাই বিকেলে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ঢাকার বারিধারা এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবদুল্লাহ আল আবির। তিনি বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসএস পদে চাকরি করতেন। ২০ জুলাই সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নগরীর গোরাচাঁদ দাশ রোডের ‘মাহমুদালয়’ নামের পুরোনো বাড়িটি আবিরের বাবার মামার বাড়ি। এখানেই ছোট থেকে বড় হয়েছেন আবির। তাঁদের গ্রামের বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে। এলাকায় বেশ শান্ত ও চঞ্চল স্বভাবের তরুণ হিসেবে পরিচিত ছিল আবির। এলাকার সবার সঙ্গেই ছিল তার সখ্য। আবির ২০১৭ সালে বরিশাল উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর দুয়েক বছর গ্যাপ দিয়ে ভর্তি হন রাজধানীর মিরপুর বাংলা কলেজে। সেখান থেকে সম্পন্ন করেন এইচএসসি।

আবিরের মা পারভীন সুলতানা ঘরের বিভিন্ন স্থানে ছেলের ছবি, খেলাধুলায় পাওয়া বিভিন্ন পুরস্কার ও স্কাউটে পাওয়া সম্মাননা পুরস্কার দেখাতে দেখাতে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। পাশেই বসে আবিরের বড় বোন মারিয়া ইসলাম অশ্রু ভেজা চোখে তার মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। এমন সময়ও মারিয়ার দুই বছরের শিশু বারবার বলছিলেন, ‘মামার গুলি লাগছে, মামা মাটির নিচে ঘুমায়।’

পারভীন সুলতানা কান্না করতে করতে বলেন, ‘আমার নাড়িছেঁড়া ধন আবির কখনোই গ্রামের বাড়ি যাইতে চাইতো না, তারপরও ওদের থাকার জন্য গ্রামে একটা বাড়ি করছি। কিন্তু সেখানে কখনোই ও যেতে চায়নি, আর এখন সেই গ্রামের মাটিতেই ওর ঠাঁই হয়েছে।’ এ কথা বলতে বলতে আবার কান্নায় মূর্ছা যান তিনি।

আবিরের বড় বোন মারিয়া জানান, তার ভাই পড়াশোনার চেয়ে খেলায় খুব মনোযোগী ছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি খেলেছে। সব খেলায় তার অংশগ্রহণ ছিল সবার আগে। বিভিন্ন খেলায় পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। পাশাপাশি শিক্ষা জীবনে করেছে রোভার স্কাউট। পেয়েছে একাধিক সম্মাননা। সর্বশেষ গত বছরের ১৩ আগস্ট চাকরির জন্য ঢাকায় যায় আবির। পরের দিন ১৪ আগস্ট নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসএস পদে চাকরিতে যোগদান করে। কিন্তু এসব এখন কেবলই স্মৃতি। পুরো ঘরজুড়েই ছড়িয়ে আছে আবিরের স্মৃতি।

মারিয়া বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ওর পেটে গুলি লেগেছে, যে কারণে প্রচুর রক্ত ঝরেছে। কোনো কিছুতেই যেন রক্ত থামছিল না। পরে রাত ১২টায় অস্ত্রোপচার শুরু হয়ে চলে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। অস্ত্রোপচার শেষে আবিরকে রাখা হয় আইসিইউতে। পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায়। তারপর তার মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। এদিকে আবিরের মৃত্যুর ১০-১১ দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কেউ কোনো খোঁজখবর নেয়নি বলে আক্ষেপ করেন তার পরিবারের সদস্যরা।

সূত্র: কালবেলা

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।