জাতীয়: আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার শুরু থেকেই শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনেকটা ফাঁকা মাঠেই এবার গোল দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে সরকার গঠন করতে পারলেও দলটির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন।।
একদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধীদের আন্দোলন, অন্যদিকে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ মনোভাব চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সরকারকে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য, ডলার সংকট, রিজার্ভ সংকট, বেকারত্ব, নির্বাচনের পরেও বিরোধী দলের আন্দোলন ইত্যাদি তো থাকছেই।
দু’দিন আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচন উল্লেখ করে জাতিসংঘের মহাসচিবসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসকে চিঠি পাঠিয়েছে বিএনপি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বেশ কয়েকবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখন ভালো যাচ্ছে না; এটা আমরা সবাই জানি। নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে কারা ক্ষমতায় আসবে সেটাও আমরা জানি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী যিনি আছেন তিনিই থাকছেন, তার দলই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। ফলে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ককে স্বাভাবিক করাটাই নতুন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলব আমি। কারণ, আমাদের রপ্তানির প্রধান বাজার কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকা। ফলে অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে সেই সরকারকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে; সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি যে পুরোপুরি ইতিবাচক নয়, তা তাদের বেশ কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছুদিন ধরেই চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধা দিতে চাওয়া ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আনার ঘোষণাও দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
শুরুতে নির্বাচন বয়কট করে এখন তা ‘প্রতিরোধ’ করতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দলটি। বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে নির্বাচনবিরোধী প্রচারণায় মাঠে নেমেছে সমমনা আরও কয়েকটি দল। তাই ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং ৬০ শতাংশের ওপরে ভোটার উপস্থিতি রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা ও রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করার চ্যালেঞ্জ তো থাকছেই। তাছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে দলের মধ্যে যে কোন্দল ও গ্রুপিং চলছে, বিশেষ করে স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীর মধ্যে যে সমস্যা, সেটিকে সমাধান করে দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারাটাও চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলটির সিনিয়র নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, নির্বাচনের এই সময়টা বহুমুখী ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন। এরই মধ্যে এই নির্বাচনকে ঘিরে নানা উৎকণ্ঠা বা সংশয় তৈরি হয়েছে। বিএনপির ভোট বয়কটের আহ্বানে কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নির্বাচন। তবে আমাদের সারা দেশের প্রার্থী, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এবং প্রতিটি কেন্দ্রের কমিটির মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার ভোটারদের সসম্মানে কেন্দ্রে আনার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যাতে এই চ্যালেঞ্জ উতরে যেতে পারি আমরা।
গত রবিবার নিজের নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগে গিয়ে একই সুর শুনিয়েছেন ঝালকাঠি-২ আসনে নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের উপজেলা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। সেখানে তিনি বলেন, বিগত যত নির্বাচন হয়েছে, সেসব নির্বাচনের চেয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটু আলাদা। তার কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একটি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই নির্বাচন করতে যাচ্ছেন।
আমু এরপর বলেন, এই নির্বাচনে কত ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছে সেটাই আন্তর্জাতিকভাবে বিবেচিত হবে। তাই ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ভোটার উপস্থিতি করতে হবে। তাহলেই এই নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |