পটুয়াখালীর বাউফলে বন্ধুর সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে গিয়ে ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে কয়েকজন তরুণের হাতে হেনস্তার শিকার এক কলেজশিক্ষার্থী ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দাসপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
‘আত্মহত্যা’ করা কলেজশিক্ষার্থী নাম সম্পা ওরফে ইতি দাস (১৯)। তিনি দাসপাড়া গ্রামের সমীর দাসের মেয়ে ও বরিশালের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর আগে সোমবার দুপুরে উপজেলা সদরের পাবলিক মাঠ সংলগ্ন একটি রেস্তোরাঁয় ছাত্রদল নেতা হৃদয় রায়হানের নেতৃত্বে ইতি দাস ও তার বন্ধুকে হেনস্তা করেন কয়েকজন তরুণ। অভিযুক্তরা ছাত্রদলের নেতাকর্মী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন ও রেস্তোরাঁর দুজন কর্মী।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইতি দাসের বাসা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার সকালে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
অভিযুক্ত হৃদয় রায়হান বাউফল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বাউফল পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সাকিবুজ্জামান রাকিবের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এ ব্যাপারে সাকিবুজ্জামান রাকিব দাবি করেছেন, কিছুদিন আগে হৃদয় রায়হানকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ইতি দাসের বন্ধু, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঘুরতে বের হন ইতি দাস। দুপুর ১২টার দিকে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা সদরের পাবলিক মাঠ সংলগ্ন একটি রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে যান। এ সময় রেস্তোরাঁয় তাদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন হৃদয় রায়হান ও তার সঙ্গে থাকা পাঁচ-ছয় জন যুবক। এ নিয়ে হৃদয়ের সঙ্গে ইতির বন্ধুর বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হৃদয় ওই তরুণীর বন্ধুকে ধরে রেস্তোরাঁর সামনে পাবলিক মাঠে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেইসঙ্গে সঙ্গে অন্য তরুণরা বন্ধুকে লাঞ্ছিত ও মারধর করেন। এতে তরুণী বাধা দিতে গেলে তার সঙ্গেও হাতাহাতিতে জড়ান হৃদয় ও তার সহযোগীরা। পরে ইতির বাবা-মাকে ফোন করে সেখানে আসতে বলেন হৃদয়। বিষয়টি দেখে আশপাশের লোকজন জড়ো হন। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে গেলে ইতির এক বন্ধু ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে বাউফল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহিন এসে ইতির বন্ধুকে উদ্ধার করে মোটরসাইকেলে করে থানায় নিয়ে যান। ইতিও থানায় যান। বিকাল ৪টার দিকে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
ইতি দাসের চাচাতো ভাই বলেছেন, ‘নিজের সামনে বন্ধু ও তাকে হেনস্তা এবং পরিবারকে অপদস্থ হতে দেখে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ইতি। ঘটনায় জড়িতরা ছাত্রদল নেতা সাকিবুজ্জামান রাকিবের ঘনিষ্ঠজন এবং দলের নেতাকর্মী। আমরা কার কাছে বিচার চাইবো। উল্টো ওই ঘটনার পর থেকে ইতির পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে আছেন। ফলে থানায় মামলা পর্যন্ত করেননি।’
তবে ওই রেস্তোরাঁর দুজন কর্মচারী এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, তরুণী ও তার বন্ধু রেস্তোরাঁয় বসে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন। আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। ছাত্রদল নেতা হৃদয় রায়হান ও তার সহযোগীরা বারবার তরুণী এবং তার বন্ধুকে উদ্দেশ্যে করে আজেবাজে মন্তব্য করেছেন। উত্ত্যক্তের একপর্যায়ে তারা প্রতিবাদ করায় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে।
তরুণী ও তার বন্ধুকে থানায় নেওয়ার পর সেখানে উপস্থিত থাকা এক ব্যক্তি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তরুণী ও তার বন্ধুকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বিকাল ৪টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তখনও হৃদয় রায়হান ও তার সহযোগীরা থানার সামনে অবস্থান করেছেন। বাসায় যাওয়ার পথে তাদেরকে থানার সামনে দেখে ওই তরুণী বলেছেন, “তোরা আমাকে বাঁচতে দিলি না”। কিন্তু মেয়েটি যে আত্মহত্যা করবে, তা আমি ভাবিনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাউফল থানার সহকারী উপপরিদর্শক মো. শাহিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ঘটনার মূলহোতা হৃদয় রায়হান। সোমবার দুপুরের দিকে এক তরুণ থানায় এসে জানায় তার মোটরসাইকেল আটকে রেখেছে হৃদয় ও তার সহযোগীরা। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে যাওয়ার পর হৃদয় আমাকে বলে এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু ঘটনাটি যে নারী সংক্রান্ত বিষয়, তা আমাকে কেউ জানায়নি। পরে ওই তরুণকে উদ্ধার করে থানায় আনার পর জানলাম ঘটনাটি নারী সংক্রান্ত। বিকালে তাদের ছেড়ে দেওয়ার পর এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। কিন্তু অভিযোগ দিতে রাজি হননি তারা।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘ইতির মৃত্যুর ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা এখনও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ পাইনি। স্বজনরা অভিযোগ দিলে এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |