সোমালিয়ান জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুই জাহাজের পাহারায় দুবাইয়ের আল হারামিয়া বন্দরে যাচ্ছে এমভি আবদুল্লাহ। কিন্তু গত ৩১ দিন ধরে ৬৫ জন সোমালিয়ান দস্যু জাহাজে অবস্থান করে জাহাজের কেবিন, রান্নাঘর, ড্রইং রুমসহ বিভিন্ন জায়গা বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত করেছে। এসব ময়লার স্তুপ এখন পরিস্কার পরিচ্ছন্নে ব্যস্ত জাহাজের নাবিকরা।
জাহাজের নাবিকদের কাছ থেকে পাঠানো ছবিতে দেখা যায়, সোফাসেট সম্বলিত ড্রইং স্পেসটিতে বিক্ষিপ্তভাবে ময়লা আবজর্না পড়ে রয়েছে। সোফার নিচে, সোফার পাশে, টেবিলের সামনের ফ্লোরে সর্বত্র ময়লার স্তুপ। জাহাজের ভেতরে চলাচলের করিডোরগুলোর উভয় পাশে আবর্জনায় ঠাসা, রান্নাঘরও ময়লা আবর্জনায় ভরা। একই অবস্থা টয়লেটেরও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নাবিক জানান, পুরো জাহাজের যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলেছে দস্যুরা। এখন আমরা এগুলো পরিস্কার করছি। পরিস্কার করলেও মনে এখন অনেক আনন্দ। দস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি।
এদিকে গত ৩১ দিন দস্যুদের কাছে জাহাজটি জিম্মি থাকার পর জাহাজের অবস্থা কি তা দেখতে আমরা দুবাই থেকে জাহাজটিকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসব বলে জানিয়েছেন জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যাবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রিফাত।
তিনি রবিবার দুপুরে চট্টগ্রামের বারিক বিল্ডিং এলাকায় কেএসআরএম কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দীর্ঘদিন দস্যুদের কাছে জাহাজটি জিম্মি থাকায় জাহাজের সব ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। আর সব কিছু চেক করার জন্য আমরা জাহাজটিকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসব।’
চুরির অভিযোগে মাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ছেলেকে পিটিয়ে হত্যাচুরির অভিযোগে মাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা
কবে নাগাদ এটি চট্টগ্রামে আসবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ১৯ বা ২০ এপ্রিল জাহাজটি দুবাই আল হারামিয়া বন্দরে পৌছতে পারে। সেখানে ৫৫ হাজার টন কয়লা খালাসের পর আট থেকে নয় দিনের মধ্যে তা চট্টগ্রামে পৌঁছোবে।
তিনি আরও বলেন, তবে নাবিকরা জাহাজ চালিয়ে চট্টগ্রামে আসবে না সেখান থেকে সরাসরি বিমানে আসবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এর আগে আজ রবিবার ভোর ৩টায় জাহাজ থেকে ৬৫ জন জলদস্যু ৯টি বোটে করে সোমালিয়ায় চলে যায়। এর আগে তিনটি স্যুটকেসে করে মুক্তিপণের ডলার দেয়া হয়েছে। ডলার নিশ্চিতের পর দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়। আর নেমে যাওয়ার সময় দস্যুদের কমান্ডার সোমালিয়ান ভাষায় একটি চিঠি দেয় জাহাজের ক্যাপ্টেনকে। সেই চিঠিতে লেখা ছিল দুবাই বন্দর পর্যন্ত কোনো সোমালিয়ান জলদস্যু আর তাদের আক্রমণ করবে না। তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহর সেকেন্ড অফিসার মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রথম অস্ত্র ঠেকিয়েছিল সোমালিয়ান জলদস্যুরা। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজটি ছিনতাইয়ের পর সোমালিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলের গ্যরাকাদে নোঙ্গর করে ছিল। রবিবার (১৪ এপ্রিল) ভোর ৩টায় জাহাজ থেকে ৬৫ জন জলদস্যু নেমে গিয়ে নাবিকদের মুক্ত করে দেয়।
এর আগে একই মালিকের এমভি জাহান মনিকে ২০১০ সালে জিম্মি করেছিল একই গ্রুপের জলদস্যুরা। সেবারও মুক্তিপণ দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। সোমালিয়ান জলদস্যুরা ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮টি জাহাজ জিম্মি করেছিল। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে জিম্মি করেছিল ৩৫৮টি জাহাজ।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |