প্রচ্ছদ হেড লাইন টেস্টিং সল্ট নামে বিষ খাচ্ছেন না তো- সাবধান! এখনই জেনে নিন

টেস্টিং সল্ট নামে বিষ খাচ্ছেন না তো- সাবধান! এখনই জেনে নিন

হেড লাইন: খাবার সুস্বাদু করার জন্য দেদারসে ব্যবহার করা হচ্ছে টেস্টিং সল্ট। নুডলস, চিপস, ফাস্টফুড এবং চাইনিজ খাবারের সবটাতেই রয়েছে এটি। ইদানিং আধুনিক গৃহিণীরাও নেট রেসিপি দেখে খাবারে ব্যবহার করছেন টেস্টিং সল্ট। কিন্তু কৃত্রিম স্বাদ বৃদ্ধিকারী টেস্টিং সল্ট নিয়ে বিশ্বব্যাপী একাধিক গবেষণার পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ভয়ানক নীরব ঘাতক! পাশ্চাত্যের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেস্টিং সল্টের আগ্রাসন বিশ্বজুড়ে এলকোহল ও নিকোটিনের চেয়েও বড় বিপদ ঘটাতে পারে। আবার টেস্টিং সল্ট নানাভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধনও করে। অপরদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, টেস্টিং সল্টের প্রতিক্রিয়ায় তীব্র মাথাব্যথা, হজমযন্ত্রের গোলযোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, খিঁচুনিসহ বিভিন্ন রকম সমস্যা এমনকি দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা টেস্টিং সল্টকে স্নায়ুবিষ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিশেষজ্ঞরা জানান,টেস্টিং সল্ট মস্তিস্ককে উদ্দীপ্ত করে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করে যাতে মনে হয়, খাবারটি খুবই সুস্বাদু। ওই খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়ে। শিশুরা পছন্দ করে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর টেস্টিং সল্টমিশ্রিত খাবার সরবরাহ নিষিদ্ধ করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক সমকালকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েক বছর আগে স্নায়বিক অসুস্থতার লক্ষণযুক্ত নতুন রোগের কথা জানায়, যার নাম দেওয়া হয় ‘চায়নিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম’। টেস্টিং সল্ট মানবদেহে প্রবেশ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বিষিয়ে তোলে। ফলে স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ঘুম কম হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে স্বাভাবিক খাবার অরুচিকর লাগে। কাজে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়। অধ্যাপক ফারুক আরও বলেন, টেস্টিং সল্টকে বিজ্ঞানীরা উদ্দীপক বিষ নামে অভিহিত করেছেন। নিয়মিত টেস্টিং সল্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাথাব্যথা, খিঁচুনি, হরমোন নিঃসরণে গোলযোগ, মনোবৈকল্য, শিশুদের ক্ষেত্রে লেখাপড়ায় কম মনোযোগ. অতিরিক্ত ছটফটানি ভাব, হাঠৎ ক্ষেপে যাওয়া, মুটিয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অ্যাজমায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা টেস্টিং সল্ট খেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া এটি মস্তিস্কে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বের কয়েকটি দেশে টেস্টিং সল্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এটি নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।”

এবার জেনে নেওয়া যাক টেস্টিং সল্ট দেহের কি কি ক্ষতি করে-

* শিশুদের পছন্দের খাবার চিপস। এতে ব্যবহৃত হচ্ছে ঝাঁঝালো স্বাদযুক্ত টেস্টিং সল্ট। এ ছাড়া প্যাকেটজাত স্যুপ, নুডলস, সসেজ, চানাচুর, ডাল ভাজা এবং বিস্কুটের মতো অনেক শুকনো খাবারে হরদম মেশানো হচ্ছে এটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব টেস্টিং সল্টযুক্ত খাবার থেকে পরিণত মানুষের চেয়ে শিশুর মস্তিষ্কের কোষকে দ্রুত নিষ্ক্রিয় ও অবসন্ন করে দিতে পারে।

* পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন, চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর যদি কারও তীব্র মাথাব্যথা, বমি ভাব, খিঁচুনি, চামড়ায় ফুসকুড়ি, হাত-পায়ে দুর্বলতা ও কাঁপুনি, বুকে চাপ, অবসাদ, ঝিমুনিভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়, তবে বুঝতে হবে এটি টেস্টিং সল্টের প্রতিক্রিয়ার ফল।

* টেস্টিং সল্টযুক্ত খাবার গভীর মনোযোগে কাজ করার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে, মেজাজ হয়ে উঠতে পারে তিরিক্ষি। টেস্টিং সল্টে থাকা এক্সাইটোটক্সিন বা উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বিষাণু শরীরের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে তোলে। যার ফলে তীব্র মাথাব্যথা, এমনকি গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে।

* গর্ভবতী মায়ের খাবারে অতিমাত্রায় টেস্টিং সল্টের ব্যবহার হলে অনাগত সন্তান অটিজম, মস্তিষ্কের রোগ ও বুদ্ধিবৃত্তিক অসম্পূর্ণতা নিয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে।

* গত তিন দশকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে টেস্টিং সল্টযুক্ত খাবারের প্রতি আঙুল তুলেছেন গবেষকরা।

* প্রচুর টেস্টিং সল্টযুক্ত টমেটো সস, সয়া সস জাতীয় খাবার মানুষের স্নায়ুকোষকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়।

* বিশেষজ্ঞদের মতে, টেস্টিং-সল্ট মেদস্থূলতা, মস্তিষ্কের নানারকম রোগসহ মস্তিষ্কের ক্যান্সার, মলাশয় ও স্তন ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, পার্কিনসন্স, আলঝেইমার্স, ফাইব্রোমায়েলজিয়া, গেঁটে বাত, অনিদ্রা, বিষণ্নতা ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

* টেস্টিং সল্টের প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন রকম এলার্জি, হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

খাদ্যপণ্য কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে ভালোভাবে এর উপাদানগুলো দেখে নিন। তাতে টেস্টিং সল্টের উল্লেখ আছে কি না, থাকলে কি পরিমাণ রয়েছে তা জেনে নিয়ে তারপর চিন্তা করুন খাবেন কি না। অনেক সময় প্যাকেটের গায়ে টেস্টিং সল্ট শব্দটি উল্লেখ থাকেন না, তার পরিবর্তে লেখা থাকে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট কিংবা আরও সংক্ষেপে এমএসজি। আসলে যে নামই লেখা থাক না কেন জিনিস কিন্তু একই।

আবার কোনো খাবার মুখে দিলে যদি ঝাঁঝালো নোনা স্বাদ পাওয়া যায়। তাহলে বুঝতে হবে এটি টেস্টিং সল্টেরই কৃতিত্ব। তাই সবারই এই স্বাদের খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। নয় তো এ থেকেই শরীরে বাসা বাঁধতে পারে বড় ধরনের কোন রোগ।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।