দেশজুড়ে:‘আমি এখন খয়রাত করতে পারি না। দৌড়াইতে দৌড়াইতে আমার পা ফুইলা গেছে। আমার একমাত্র সন্তানকে আমার বুকে ফেরত চাই। এক বছর আগে আমার ছেলেকে নিয়ে গেছে দালালরা। এখন কার কাছে বেচছে আমি কইতে পারি না। আমার কাছ থেকে ৪৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। আমি দালালদের শাস্তি চাই।’
এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে আর্তনাদ করছিলেন আরমান মোল্লার ষাটোর্ধ মা করিমন। দালালদের হাতে আটক ছেলেকে ফিরে পেতে লাখ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার জমি, বাড়ি কিছুই নেই। ভিক্ষা করে খেতে হচ্ছে তাকে। আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই মানবপাচারকারী দালাল দেলোয়ার সরদার ও তার সঙ্গীরা টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল মাদারীপুরের প্রায় তিনশতাধিক কিশোর ও যুবক। দেশ থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠানোর কথা বলে দালালচক্র তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এসব কিশোর ও যুবকদের লিবিয়া নিয়ে আটক করে অমানবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সেখানে দালাল ও মাফিয়া চক্রের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেক যুবক পালিয়ে দেশে ফিরে এসেছে। অনেকে এখনো লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের হাতে আটক। তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করার পাশাপাশি দেশে পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হচ্ছে।
ফলে দালাল চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে জমি-ঘর বিক্রি করে ও আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও সুদে লাখ লাখ টাকা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে মাদারীপুরের বালিয়া, মস্তফাপুর, গাছবাড়ীয়া, পেয়ারপুর, শশিকর, ডাসারসহ কয়েকটি ইউনিয়নের তিনশতাধিক পরিবার।
মঙ্গলবার মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দালালদের বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। পরে তারা মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কাছে স্বারকলিপি দেয়। মানববন্ধনের একপর্যায়ে দালালদের ছবি জুতাপেটা করেন ভুক্তভোগীরা।
লিবিয়া থেকে ফেরত আসা এক ভুক্তভোগী ইমন, সাঈদ ও কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দালাল দেলোয়ার লাখ লাখ টাকায় লিবিয়া নিয়ে আমাদের নির্যাতন করে। মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। খাবার না দিয়ে আমাদের মারধর করা হত। আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। এই দালাল চক্রের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই এবং লিবিয়াতে এখনও যারা আটক আছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ভাষ্য, ‘আমাদের মুখে হাসি ফোটাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, জমি-জমা বিক্রি করে, ধার-দেনা করে লিবিয়া গিয়েও ইতালি যাওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় না আমাদের সন্তানদের। দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে লাখ লাখ টাকা দিয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসে অনেকে। এখনো দুই শতাধিকের বেশি যুবক লিবিয়া আটক আছে। আমরা তাদের মুক্তি চাই এবং দালালচক্রের শাস্তি চাই।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |