বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কমিটি পুনর্বিন্যাসের বিষয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে কয়েকজনকে বাদ এবং কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভাবছেন দলের শীর্ষ নেতা।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের দুজন নেতা এই তথ্য জানিয়েছেন। ওই দুই নেতা বলেছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলাপকালে তাঁদের মনে হয়েছে, কাদের স্থায়ী কমিটিতে নিয়োগ দেওয়া যায় সে বিষয়ে তাঁর এক ধরনের সিদ্ধান্ত আছে।
উপযু্ক্ত সময়ে আনুষ্ঠানিকতা সারবেন তিনি।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২২ জুন সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনিও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন।
এর আগেও একাধিকবার স্থায়ী কমিটি পুনর্বিন্যাস করার আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহের কারণে তখন এই কমিটিতে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একটি বড় আন্দোলনের পর সংগঠনের কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। সে অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
তবে স্থায়ী কমিটিতে কেউ অন্তর্ভুক্ত হবেন কি না, কমিটিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না—সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের।
বিএনপি সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চে কাউন্সিল করে। ওই বছরের আগস্টে ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে পদ রয়েছে ১৯টি। তখন থেকেই দুটি পদ শূন্য রয়েছে।
এরপর এম কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও মওদুদ আহমদ মারা গেলে ছয়টি পদ শূন্য হয়। সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান পদত্যাগ করায় শূন্যপদ দাঁড়ায় সাতে। পরে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নিয়োগ দেওয়ায় এখন পাঁচটি পদ খালি রয়েছে।
বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকবেন—এই শর্তে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত আছে বলে রাজনীতিতে আলোচনা রয়েছে। শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। রফিকুল ইসলাম মিয়া অন্যের সহযোগিতা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কখনোই থাকেন না তিনি। নব্বই-ঊর্ধ্ব জমির উদ্দিন সরকার সব সময় বৈঠকে থাকেন না। বার্ধক্যজনিত কারণে এখন তিনি অনেকটা নিষ্ক্রিয়।
স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, এখন বৈঠকে ৮ থেকে ১০ জনের বেশি থাকেন না। কমিটিতে থাকলেও বার্ধক্য, অসুস্থতাসহ নানা কারণে কয়েকজন নেতাকে কখনো বৈঠকে পাওয়া যায় না।
দলীয় সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এমন কয়েকজন যোগ্য নেতার বিষয়ে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। তাঁরা হলেন সিনিয়র নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (অব.), বরকতউল্লা বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, শামসুজ্জামান দুদু ও রুহুল কবীর রিজভী। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও জহির উদ্দিন স্বপনের নামও আলোচনায় আছে। দুজনকে মেধাবী রাজনীতিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে তাঁদের ধারণা বেশ ভালো।
বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আহমেদ আযম খানকে বিএনপির শীর্ষ নেতার পছন্দ বলে দলে গুঞ্জন আছে। তবে বিএনপির রাজনীতিতে এই দুই নেতার বলার মতো কোনো অবস্থান নেই। চিকিৎসক নেতা হিসেবে জাহিদের সুনাম থাকলেও জাতীয় রাজিনীতিতে তাঁকে সেভাবে বিবেচনা করেন না নেতাকর্মীরা। যদিও গত কয়েক বছর তাঁকে দিয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক কাজ করানো হয়েছে। আর আহমেদ আযম খানকে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নতুনই বলা যায়। কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল না। কোন বিবেচনায় তাঁর নামটি আসছে তা নিয়ে অনেকে বিস্মিত।
আব্দুল্লাহ আল নোমান যোগ্য ও বিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত। এর আগের দলীয় কাউন্সিলে তাঁকে স্থায়ী কমিটিতে স্থান না দেওয়ায় সবাই বিস্মিত হন। অসুস্থতার কারণে এবার তাঁকে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির একজন নেতা তাঁর বিরোধিতা করে আসছেন।
প্রবীণ নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (অব.) সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে দলের একজন নেতা বলেন, তিনি পোড় খাওয়া রাজনীতিক। রাজনৈতিক মেধা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা—সবই তাঁর আছে। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনে নেতিবাচক ভূমিকায় বিএনপির রাজনীতিতে পেছনে পড়ে গেছেন তিনি। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপির নানা সিদ্ধান্তের প্রকাশ্য সমালোচনাও করেন তিনি, যা শীর্ষ নেতৃত্ব ভালোভাবে নেয়নি।
দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু সফল ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক কূটনীতিতে সিদ্ধহস্ত। বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক বাঁকবদলে তাঁর ভূমিকা ছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ পরিচিত। তাঁর বিষয়ে দলের প্রায় সবাই ইতিবাচক। দলের শীর্ষ নেতা ইতিবাচক হলে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা হবে তাঁর।
বরকতউল্লা বুলু ও মোহাম্মদ শাহজাহান সাংগঠনিকভাবে বেশ দক্ষ। সারা দেশের সংগঠন বিষয়ে তাঁদের ভালো ধারণা আছে। শামসুজ্জামান দুদুও বিচক্ষণ রাজনীতিক।
দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী সম্পর্কে বিএনপি সমর্থক একজন বুদ্ধিজীবী বলেন, বড় কোনো বিতর্ক ছাড়া দলের দপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বেশ ভালোভাবে পরিচালনা করছেন। সবচেয়ে বড় কথা, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা তাঁকে সব সময় এগিয়ে রাখবে।
অবশ্য শেষ পর্যন্ত যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততার মূল্যায়ন হবে কি না তা নিয়ে দলের অনেকের মনে সংশয় আছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা বলেন, তারেক রহমান তাঁর বিশ্বস্ত ও পছন্দের নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে আসছেন। এবারও হয়তো তা-ই হবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |