ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতে মণিপুর পুলিশের অন্তত দুজন কমান্ডো নিহত হয়েছেন। বুধবার মিয়ানমার সীমান্ত থেকে কয়েকশ মিটার দূরে মণিপুরের ছোট্ট তবে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর মোরেহতে সহিংসতায় তাদের প্রাণহানি ঘটেছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সহিংসতায় মণিপুর পুলিশের আরও দুই কমান্ডো গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলে নেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতের দিকে পুলিশের যে কমান্ডো মারা গেছেন তার পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। তবে সকালের দিকে মারা যাওয়া পুলিশ কমান্ডোর নাম ওয়াংখেম সমরজিৎ মিতি। তিনি মণিপুরের ৬ষ্ঠ রাইফেলসে কর্মরত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলেছে, বুধবার সকালের দিকে মোরেহ শহরের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় পুলিশি চৌকি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের পাশাপাশি রকেট প্রোপেলড গ্রেনেড (আরপিজি) ছোড়া হয়। পরে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালান কমান্ডোরা। কিন্তু বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারীকে মোকাবিলায় পুলিশ ব্যর্থ হয়। যে কারণে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের এই ঘটনায় মোরেহ শহরের এক বয়স্ক নারী আহত হয়েছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে পরিষ্কার কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, নিরাপত্তা বাহিনীর একটি ট্রাক মোরেহ শহরে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় পেছনে থেকে হামলা চালায় সশস্ত্র বিক্ষোভকারীরা।
গত অক্টোবরে পুলিশ কর্মকর্তা চিংথাম আনন্দ কুমারকে হত্যার অভিযোগে স্থানীয় কুকি-জো জাতিগোষ্ঠীর দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয়রা। পরে সেখানে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
তবে কুকি নেতারা বলেছেন, পুলিশই প্রথম কুকি বেসামরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। যদিও মণিপুর রাজ্য পুলিশ কুকিদের আনা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত বছরের মাঝের দিকে মণিপুরের মেইতি এবং কুকি সম্প্রদায়ের মাঝে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হয়। এরপর দফায় দফায় দুই সম্প্রদায়ের সংঘাতে কমপক্ষে ১৮০ জনের প্রাণহানি এবং ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ৩২ লাখ বাসিন্দার এই রাজ্যে বিশৃঙ্খলার শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের মে মাসে।
ওই সময় রাজ্যের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কুকি গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে সেখানে আন্দোলন দানা বাধে। মণিপুর রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ মেইতি সম্প্রদায়ের। তারপরও ওই রাজ্যের মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১০ শতাংশের মালিকানা এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের হাতে রয়েছে। ভারতের এই রাজ্যে তফসিলি উপজাতিদের বাইরে পাহাড়ী এলাকায় অন্য কারও জমি কেনার অনুমতি নেই।
কয়েক মাস আগে ভারতের হাইকোর্ট মেইতি সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিদের তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। মেইতি সম্প্রদায়ের সদস্যরা তফসিলি উপজাতিদের তালিকায় ঠাঁই পেলে রাজ্যে জমি কেনার অনুমতি পাবেন।
সূত্র: এনডিটিভি, রয়টার্স।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |