মরদেহ চুরি ঠেকাতে শেরপুর জেলার বিভিন্ন কবরস্থান পাকা করে ওপরে দেয়া হচ্ছে লোহার গ্রিল। স্থানীয়রা জানায়, কবর থেকে একের পর এক চুরি হচ্ছে মরদেহ, তাই স্বজনদের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু রাখতেই এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন তারা। জানা যায়, ইসলামী রেওয়াজ অনুযায়ী মৃত্যুর পর মরদেহ দাফন হয় কবরস্থানে। কিন্তু দাফনের কিছুদিন পরই চুরি হচ্ছে সেই মরদেহ। একের পর এক শেরপুরের বিভিন্ন এলাকার কবর থেকে চুরি হচ্ছে পুরোনো মরদেহ। চক্রের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও কাটছে না স্বজনদের মনের শঙ্কা। পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি কঙ্কাল ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে মাঠ পর্যায়ের চোরেরা। তা হাতবদল হয়ে যায় মূলহোতার কাছে। তারা কেমিক্যালের সাহায্যে কঙ্কালগুলো পরিষ্কার করে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন ডাক্তারসহ বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করে থাকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়।
সম্প্রতি সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী, পশ্চিমপাড়া গ্রামসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকায় সরকারি কবরস্থান না থাকায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় স্বজনদের মরদেহ। পাহারার ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ পুরোনো কবর থেকে চুরি হচ্ছে মরদেহ। তাই চুরি ঠেকাতে অধিকাংশ কবরের ওপর দেয়া রয়েছে লোহার গ্রিল। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক কবরে দেয়া হয়েছে লোহার গ্রিল। আর গত দুই বছরে এই ইউনিয়ন থেকেই দেড় শতাধিক কঙ্কাল চুরি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। তারা আরও জানান, একটি কবর পাকাকরণসহ এর ওপরে গ্রিলের খরচ পড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বাড়তি টাকা খরচ করতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন বলেও দাবি তাদের। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক হাসান আলী বলেন, আমাদের এলাকায় কেউ মারা গেলে মাইকিং করার সময়ই কবর পাকা ও রেলিং দেওয়ার জন্য লোক ঠিক করতে হয়। জানাজা শেষে কবর দেওয়া ও একই সঙ্গে গ্রিলের ব্যবস্থাও করা হয়। যদি গ্রিল না করা হয়, তাহলে কখন সেই মরদেহ চুরি হবে, এ আতঙ্কে থাকি সব সময়। তাই শোক না কাটতেই রড আর ইট-সিমেন্ট কিনে মিস্ত্রির খোঁজ করে এসব করা, বাড়তি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।
স্থানীয় রাজমিস্ত্রিরা জানায়, একটা কবর পাকা করতে খরচ হয় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। অনেকে টাইলস করে, সেক্ষেত্রে খরচ হয় ১০ হাজার টাকার বেশি। গ্রিল করতে আরও খরচ হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার। সব মিলিয়ে একটা কবরে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে। আর্থিক অবস্থা যাদের ভালো তারা সহজে গ্রিল সহজে করতে পারলেও যাদের অবস্থা ভালো নয়, তাদের পক্ষে গ্রিল করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এবিষয়ে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সাইফুল্লাহ বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুটি পৃথক মামলা হয়। জেলা পুলিশের তৎপরতায় কঙ্কাল চুরির ঘটনায় নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে চার চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে চক্রের মূলহাতা দুজনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ার পর তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এরপর থেকেই চুরি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |