প্রচ্ছদ হেড লাইন মুন্নী সাহাররা এমনি এমনি তৈরি হয় না, এদের তৈরি করা হয়

মুন্নী সাহাররা এমনি এমনি তৈরি হয় না, এদের তৈরি করা হয়

এর মাঝে নিশ্চয় আপনারা জেনে গিয়েছেন, মুন্নী সাহার ব্যাংক একাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। এর বেশিরভাগ টাকাই তিনি তুলে নিয়েছেন। এখন মনে হয় আছে ১৪/১৫ কোটি টাকা। ২০০৮ সালে সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এশিয়ান স্টাডিজে মাস্টার্স শেষ করে এক মুহূর্তও আর দেরি করি নি। সোজা বাংলাদেশে চলে গিয়েছিলাম। আমার ইচ্ছে- সাংবাদিকতা করবো। কিংবা খবর পাঠ করবো। সে অনুযায়ী আবেদন করতে শুরু করলাম। এর মাঝে ঢাকার নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হসাবে জয়েন করেছি। কিন্তু আমার তো ইচ্ছে- সংবাদ মাধ্যমে কাজ করার। তাই আবেদন করে যাচ্ছিলাম। এক সময় এনটিভি থেকে ডাক আসলো। দুইটা ইন্টার্ভিউ দেয়ার পর ফাইনাল ইন্টার্ভিউ দিতে গেলাম তখনকার এনটিভির মালিকের রুমে। তিনি আমাকে বললেন

– আপনার যে যোগ্যতা। আপনি কি আদৌ এ কাজ করবেন?

আমি হেসে বললাম

– করবো বলেই তো আবেদন করেছি।

তিনি এবার হেসে বললেন

– আপনি অনেক ভালো জায়গায় পড়াচ্ছেন। বরং সেখানেই থাকুন।

আমি এবার হেসে বললাম

– এর মানে আমার চাকরিটা হচ্ছে না; তাই তো?
– না না। আপনি চমৎকার করে কথা বলেন। আপনি চাইলে জয়েন করতে পারেন। কিন্তু আমার ধারণা আপনি যেখানে আছেন, সেখানে থাকাই ভালো।

এরপর আমাকে অফার দেয়া হয়েছিলো সংবাদ পড়তে। কিন্তু আমার মা যেতে দিলেন না। এত কিছু লেখার কারন হচ্ছে- আজ যখন দেখতে পেলাম মুন্নী সাহার ব্যাংক একাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা! তখন সোজা গিয়ে খানিক গুগল করলাম। যদিও আমি উনাকে চিনি। এরপরও ভালো করে জানার জন্য। তিনি ইডেন কলেজ থেকে বিএসসি (ডিগ্রী) পাশ করেছেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রিলিমিনারী মাস্টার্স করেছেন। এছাড়া ভোরের কাগজ এবং এটিএন নিউজে সাংবাদিকতা করেছেন। এই হচ্ছে উনার যোগ্যতা। মানে সাংবাদিকতা করতে এসে উনার ভাগ্য খুলে গিয়েছিলো।

ঢাকায় গুলশান লিঙ্ক রোডের পাশে ডুপ্লেক্স বাড়ি আছে। ব্যাংকে শত শত কোটি টাকা! তাহলে বুঝতে পারছেন তো- কারা সাংবাদিকতা করতো? আর আমরা কেমন সংবাদ পেতাম! আমি শুধু চিন্তা করছিলাম- আমাদের পক্ষে কি এক জীবনে এত টাকা ইনকাম করা সম্ভব? পড়াশুনা পেছনেই প্রায় ৩০ বছর কাটিয়ে দিয়েছি। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স-মাস্টার্স করেছি। এরপর সুইডেনে আরেকটা মাস্টার্স। ইংল্যান্ডে পিএইচডি করে এখন এস্তনিয়ায় ছোট একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি। ইউরোপে থাকছি ২০ বছর হতে চলেছে। পৈতৃক সূত্রেই আমি মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারে মানুষ। বাবার ঢাকায় একটা অতি সাধারণ বাড়ি আছে। গ্রামে কিছু সম্পত্তি। এই টাইপ আরকি। সেই আমার পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না পুরনো বাড়িটা ভেঙে একটা নতুন বাড়ি বানানো। মানে জায়গা আছে। কিন্তু বাড়ি বানানোর টাকা নেই। আশপাশের লোকজন এসে প্রায়ই বলে- ভেঙে পড়বে না-তো!

অথচ দেখেন মুন্নী সাহারা শত কোটি টাকার মালিক বনে গিয়েছেন। কারন উনারা দিনে-রাতে বিকিয়েছেন। লিখতে গেলে অনেক কিছু লেখা যায়। কারন আমি উনাকে কিছুটা হলেও চিনি এবং জানি। শুধু এত টুকু বলি- ওই আমলে অনেক মানুষকে বলতে শুনেছি- মুন্নী সাহার মত হতে চাই। আমি এসব শুনে ভাবতাম- একটা মানুষ, যে কিনা সকাল-বিকাল বিকোচ্ছে। ছেলে-মেয়েগুলো কিনা এর মত হতে চায়! কোন দিন শুনেছেন- কেউ এই আমাদের মত হতে চায়? যে জীর্ণ বাসায় থাকে, রিকশায় কিংবা সিএনজিতে করে এখানে-ওখানে যায়। মুন্নী সাহাররা এমনি এমনি তৈরি হয় না। এদের তৈরি করা হয়। যাদের দেখে পুরো সমাজ এদের মত হতে চায়। শাসক গোষ্ঠী এভাবেই কিছু চকচকে মানুষ তৈরি করে রাখে। আর পুরো সমাজ ওই চকচকের পেছনেই ছুটে বেড়ায়।

লেখক-আমিনুল ইসলাম

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।