প্রচ্ছদ সারাদেশ অবসরের দুই মাস আগে এসএসসি পাস করলেন পুলিশ সদস্য ছামাদ

অবসরের দুই মাস আগে এসএসসি পাস করলেন পুলিশ সদস্য ছামাদ

চাকরি মেয়াদ আছে আর মাত্র দুই মাস। এরপর যাবেন অবসরে। কিন্তু এসএসসি পাস করেছেন এ বছর। ৫৭ বছর বয়সে কারিগরি শাখা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪. ২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার নাম আব্দুস ছামাদ। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং বর্তমানে বগুড়া সদর ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত।

তিনি দু’বছর আগে নাটোরের লালপুরের মোহরকয়া নতুনপাড়া মাধ্যমিক কারিগরি ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০২৪ সালের এসএসসি ও সমমনা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেন।

রোববার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পুলিশ সদস্য আব্দুস ছামাদের সাফল্যের কথা জানা যায়।

আব্দুস ছামাদ জানান, গত দুই মাস হলো বগুড়া কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। এর আগে পাবনার ঈশ্বরদীর ট্রাফিক বিভাগে ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় ঈশ্বরদী থেকে বিদ্যালয়টি কাছে হওয়ার সুবাদে নাটোরের লালপুরের একটি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন। তবে পরীক্ষার রেজাল্টের আগেই বগুড়ায় বদলি হয় তার।

তিনি জানান, প্রায় ৩৭ বছর আগে পুলিশ বিভাগে চাকরি পান তিনি। ওই সময় তার এসএসসি সম্পন্ন করা ছিল না। চাকরির মেয়াদও শেষের দিকে, আর মাত্র দু মাস বাকি। চাকরির শেষে তার অবসরটা বসে না থেকে কিছু করতে চান। এজন্য নতুন করে পড়ালেখা শুরু করা। এবার এইচএসসি পাসের জন্য বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে ভর্তি হবেন তিনি। তারপরে হোমিও চিকিৎসা নিয়ে পড়ার ইচ্ছা এই পুলিশ সদস্যের।

আব্দুস ছামাদ বলেন, অবসরের জীবনটা এমনি এমনি কাটাতে চাই না। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা হোমিও চিকিৎসা পেশায় আসা। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এসএসসি দিয়েছি। আমার ইচ্ছা আছে বগুড়ার হোমিও কলেজ থেকে পড়ালেখা করার।

পুলিশ সদস্য আব্দুস ছামাদের এসএসসি পাসের বিষয়টি এরমধ্যে তার কর্মস্থলের সবাই জেনেছেন। এজন্য সবাই তাকে সাধুবাদও দিচ্ছেন।

বগুড়া সদর ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মাহবুবুল ইসলাম খান বলেন, চাকরি জীবনের প্রায় শেষ বয়সে এসে এসএসসি পাস করা এটা খুব আনন্দের বিষয়। এতে বোঝা যায় যে শিক্ষার প্রতি তার একটা আগ্রহ এবং অনুরাগ রয়ে গেছে। আমরা এ বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই। যখন তিনি পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছিলেন তখন শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস করেই যোগদান করা যেত। তিনিও সেটাই করেছিলেন। পরবর্তীতে হয়তো বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে, সুযোগ সুবিধার অভাবে হয়তো পড়তে পারেননি।

মাহবুবুল ইসলাম আরো বলেন, কিন্তু তার ভেতরে শিক্ষার সেই স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষাটা এতদিনেও যে রয়ে গিয়েছিল এটা সত্যিই সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। আমি মনে করি আব্দুস ছামাদ শেষ বয়সে এসে এসএসসি পাস করলো এটা ছোট বড় সবার জন্য অনুকরণীয়। সবাই উপলব্ধি করুক যে শিক্ষা গ্রহণের কোনো বয়স নেই।

আব্দুস ছামাদের ব্যক্তি জীবনে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। বড় ছেলে ঢাকায় রয়েছেন। মেয়ের বিবিএ পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছোট ছেলে ইলেক্ট্রিক্যাল নিয়ে ডিপ্লোমা করছেন।