
জাতীয়:ঝিনাইদহ ৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনা তদন্তে আরো কিছু নতুন তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা-ডিবি।
ডিবির ভাষ্য, কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যার সময় শাহীন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী শাহীনের পিএস পিন্টুর এ হত্যাকাণ্ডে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এমপি আনারকে অচেতন করার জন্য ক্লোরোফর্ম ও চাপাতি সরবরাহ করেন মূলত মিন্টু।
তার কাছ থেকে এসব হত্যা সরঞ্জাম নেন মোস্তাফিজ, ফয়সাল ও জিহাদ। এরপর আনারকে চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে এমপি আনারকে হত্যা করে খুনি চক্র।
আনারকে হত্যার পর যখন সবাই চলে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান তখন সর্বশেষ সঞ্জীবা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন মোস্তাফিজ ও ফয়সাল শাহীন। ফ্ল্যাটটিতে যেন কোনো চুল এবং রক্তের দাগ না থাকে শাহীন তাদের সেই নির্দেশ দেন।
শাহীনই তাদের সবকিছু গুছিয়ে ঠিকঠাকভাবে রাখতে বলেন। এরপর ১৯ মে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বাংলাদেশে চলে আসেন। বাংলাদেশে আসার টিকিটও কেটে দেন শাহীন। বাংলাদেশে এসে শাহীনের ঢাকার বাসার তিনতলায় ওঠেন মোস্তাফিজ ও ফয়সাল।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত দেশে মোট সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছে। ভারতে আরো দুজনসহ সবমিলে এ হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জনই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া এ হত্যার ঘটনায় আরো যাদের নাম এসেছে তাদেরও গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।
শিগগিরই তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। এ মামলায় গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি দায় স্বীকার করে কোনো জবানবন্দি দেননি।
গতকাল এক ভিডিও বার্তায় ডিবি প্রধান হারুন বলেন, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে সর্বশেষ গ্রেপ্তার দুই আসামি ফয়সালকে হৃদরোগের রোগী ও মোস্তাফিজকে ঢাকায় শাহীনের বাসা থেকে কিডনি রোগীর ভুয়া কাগজপত্র, ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ভারতের ভিসা করা হয়। যতদিন পর্যন্ত তাদের ভিসা হয়নি ততদিন তারা শাহীনের ঢাকার বাসায় ছিলেন। পরে সেখান থেকে পালিয়ে তারা দুর্গম পাহাড়ে গিয়ে মন্দিরে আত্মগোপন করে।
হারুন অর রশীদ বলেন, ভিসা হওয়ার পরে আক্তারুজ্জামান শাহীন ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে রেলযোগে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য। ভারতে গিয়ে তারা ১০ এপ্রিল কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসে প্রবেশ করেন। ১৩ মে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বেরিয়ে লাল গাড়িতে করে এমপি আনারকে সঞ্জীবা গার্ডেনসে নিয়ে আসেন ফয়সাল। এরপর শাহীনের পিএস পিন্টুর কাছে থেকে অচেতন করার জন্য ক্লোরোফর্ম ও চাপাতি নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করেন মোস্তাফিজ, ফয়সাল ও জিহাদ।
ডিবি প্রধান বলেন, আনার হত্যাকাণ্ডের ঘাতক আমান উল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া যখন ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন তখন শাহীনের দেওয়া ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বিভিন্ন জায়গা আত্মগোপন করেন।
এদিকে আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় আগামী ৮ অগাস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আজ মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ঠিক করা ছিল। কিন্তু তদন্ত সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এ কারণে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ঠিক করেন।