প্রচ্ছদ দেশজুড়ে মাদরাসা ফেলে ফেসবুকে যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রিতে ব্যস্ত অধ্যক্ষ

মাদরাসা ফেলে ফেসবুকে যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রিতে ব্যস্ত অধ্যক্ষ

যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি করতেই বছরের পর বছর শিক্ষা ছুটি ভোগ করছেন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার চাড়াখালী মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সাইফুল হক। তিনি ঝালকাঠির সর্বজন শ্রদ্ধেয় মরহুম কায়েদ সাহেব হুজুর (রহ.) এর নাতি। সেই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি মানুষের গোপন বিষয়ে সক্ষমতার কথা বলে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণা করে আসছেন।

জানা গেছে, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মুজাম্মিলুল হক অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলামের বাবা। তারা যোগসাজশ করে বিধিমালা উপেক্ষা করে সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করছেন। ফেসবুকে ভিডিও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংকোচহীনভাবে সাইফুল হক যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি করছেন, যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মাওলানা সাইফুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার রাজাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তফা আলম স্বাক্ষরিত শোকজ নোটিশটি জারি করা হয়েছে। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনি দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসায় অনুপস্থিত আছেন। বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকা আইনের পরিপন্থী। সুতরাং, আপনার অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা পূর্বক আগামী সাতদিনের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারীর দফতরে জমা দানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। ব্যর্থতায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে। রাজাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ৩৭.০২.৮২৮.০০০.০০০৮৬.২৪-৯৯ নং স্মারকে শোকজটি করা হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পশ্চিম চাড়াখালী আযিযীয়া দাখিল মাদরাসা (আলিম প্রস্তাবিত) এর অধ্যক্ষ মাওলানা সাইফুল হক কয়েক বছর ধরে ফেসবুকে প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে যৌন উত্তেজক হারবাল ওষুধ ব্যবহার করে আসছেন। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভোগ করেন শিক্ষা ছুটি। বিধি মোতাবেক শিক্ষা ছুটি ব্যবহার করতে হলে তাকে উচ্চশিক্ষা অর্জন, উচ্চতর বিশেষ ডিগ্রি অর্জন, সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। কিন্তু তিনি এর কিছু করছেন না।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাইফুল হক মাদরাসা সুপার হয়েও অবৈধভাবে শিক্ষা ছুটি ভোগ করায় বর্তমানে মাদরাসা পরিচালনা করেন সহ-সুপার মাওলানা মিজানুর রহমান। এতে সিনিয়র-জুনিয়র বিষয়টিও ভেঙে যাচ্ছে। মাদরাসার শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক জানান, ওনার জন্য আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। অশালীন ভাষায় সুপারের যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি করার কারণে আমরা ফেসবুকে ঢুকতে পারি না।

এ বিষয়ে পশ্চিম চাড়াখালী আযিযীয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা সাইফুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। তিনি বলেন, আমি ৩ বছরের শিক্ষা ছুটিতে আছি। ছুটি নিয়ে আমি কী করি তা দেখার আপনি কে? আমি হারবাল ওষুধ বিক্রি করি, সেটা যদি রিপোর্টে লেখেন তাহলে আপনাকে ছাড়ব না, আইসিটি আইন জানেন তো? একদম মামলা করে দেব। আমাকে কল না দিয়ে আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে কেন গেছেন? যদি কোনো তথ্য দরকার হয় আপনি সরাসরি আমার সঙ্গে দেখা করবেন, তখন দেখাব কার বা কোন কাগজের বলে আমি এতদিন ছুটিতে আছি।

তবে মাদরাসার সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ মোজাম্মিলুল হক মোবাইলে বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরে আলিম পড়াচ্ছি এবং অন্য জায়গা থেকে পরীক্ষা দেওয়াচ্ছি। মাদরাসায় আলিম পড়াই, তাই তিনি মাদরাসা সুপারের স্থানে অধ্যক্ষ ব্যবহার করেন।

সুপারের ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, সব কথা মোবাইলে বলা যায় না। তবে উনি আইনগতভাবে ছুটিতে আছেন। তার শিক্ষা ছুটিও শেষ হয়ে গেছে। তিনি যোগদান করলে করবেন, না করলে তিনি থাকতে পারবেন না। সামনা সামনি আসেন তখন বলবো।

এ বিষয়ে রাজাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা আলম বলেন, পশ্চিম চাড়াখালী আযিযীয়া দাখিল মাদরাসা এটি সম্পূর্ণরূপে মাধ্যমিক পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে উনি (সাইফুল হক) কখনোই নামের আগে অধ্যক্ষ ব্যবহার করতে পারেন না। আমার কাছে তার কোনো অফিসিয়াল কাগজপত্রে অধ্যক্ষ লেখা নেই। তিনি হয়তো বাইরে ওষুধ বিক্রির প্রচার ও বিশ্বাস অর্জনের জন্য নামের আগে অধ্যক্ষ লেখেন। সাইফুল হক কী ছুটিতে আছে, তা আমি জানি না। তিনি একবার বলেছিলেন- শিক্ষা ছুটির কথা। আমি তাকে তার ছুটির রেজুলেশন কাগজপত্র নিয়ে স্বশরীরে উপজেলা শিক্ষা অফিসে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু কোনো ডকুমেন্টস নিয়ে তিনি আসেননি।

শিক্ষা কর্মকর্তা আরো বলেন, সাইফুল হকের অনিয়ম আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করেছি। তাই শোকজ করে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুনিল চন্দ্র সেন জানান, এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একইসঙ্গে একাধিক কোনো পদে/চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। এটি তদন্তে প্রমাণিত হলে সরকার তার এমপিও বাতিলসহ বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেবে।