
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার রাতে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা আদায়ের চেষ্টা করে আটককারীরা। সেই বিবৃতি না পেয়ে তাকে চারদিন ধরে ‘ইনজেকশন’ প্রয়োগ করে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছিল বলে বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেছেন মি. মাহমুদ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই আসিফ মাহমুদকে সামনের সারিতে দেখা গেছে। তবে, গত চারদিন ধরে তার সঙ্গে অন্য সমন্বয়কদের কোনো যোগাযোগ ছিল না।
এই কয়দিন কোথায় কী অবস্থায় ছিলেন তিনি?
বিবিসি বাংলাকে আসিফ মাহমুদ বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ সময় তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।শাটডাউনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার রাতে পরিস্থিতি দেখতে বের হয়েছিলেন তিনি।
“রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিকেতন থেকে মহানগর আবাসিক এলাকার দিকে যাওয়ার পথে হঠাৎ করে পেছন থেকে মাথায় কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে কয়েকজন। এরপর একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়,” বলছিলেন মি. মাহমুদ।সেসময় অন্তত পাঁচ-ছয়জন ছিল বলে ধারণা করছেন তিনি।
এরপর কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়। চোখ বাঁধা থাকায় স্থানটি সম্পর্কে কোনো ধারণা পাননি তিনি। “আমাকে বলতে বলছিল যে, আন্দোলন স্থগিত করতেছি, সংঘর্ষ সন্ত্রাসীরা করছে।”
একটা ভিডিও বার্তা ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, সেটা দিতে চাননি বলে জানান আসিফ। “এরপর আমার কোমরে একটা ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল। ইনজেকশন দেয়ার পর আমার আর কোনো কিছু জানা নেই,” যোগ করেন তিনি।
বিবিসি বাংলাকে আসিফ বলেন, “চারদিনে যতবার জ্ঞান ফিরেছে, জ্ঞান ফেরার পরই আবার ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে রাখতো। ইনজেকশন দেয়ার আগে হালকা খাবার দেয়া হতো।”
সর্বশেষ গতকাল রাত তিনটা বা চারটার পর জ্ঞান ফেরে তার। “ওরা আমাকে বলে যে, তোমাকে নিয়ে যেতে পারবে এমন কাউকে ফোন দাও,” বলছিলেন আসিফ।
তবে, রাতের বেলা আন্দোলনের অন্য সমন্বয়ক ও পরিবারের সদস্যদের ফোন দিলেও কেউ রিসিভ করেননি। তিনি বলেন, “তারপর যেখান থেকে ধরা হয়েছে সেখানেই আবার রেখে আসার কথা জানায় আটককারীরা।”
বেলা ১১টার দিকে তাকে মহাখালীর কাছাকাছি ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানান আসিফ। যেখানে ‘আটকে’ রাখা হয়েছিল সেখান থেকে মহাখালীতে পৌঁছুতে বুধবার সকালে আধা ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানান তিনি।
“ছাড়া পাওয়ার পর” পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে বর্তমানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক।
বিবিসি বাংলার সাথে কথোপকথনে তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। এর আগে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন যে, তাকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।
ডিবি পরিচয়ে কোনো একটি ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনী’ তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। যদিও মি. ইসলামের এই অভিযোগের বিষয়ে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান যে তাকে আটক বা ছেড়ে দেয়া সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।
সোমবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ ও মাহিন সরকার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন তাদের চারজন সমন্বয়ক নিখোঁজ আছেন।
যে চারজন সমন্বয়কের নিখোঁজের কথা বলা হয়েছিল তারা হলেন আসিফ মাহমুদ, আব্দুল কাদের, রশিদুল ইসলাম রিফাত ও আবু বাকের মজুমদার।
কোটা আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি’র ক্ষয়ক্ষতির চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেছে সরকার।
বুধবার বিকেলে রামপুরার অবস্থিত বিটিভি ভবনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার বিটিভি ভবনে হামলা ও আগুনের ঘটনায় টেলিভিশন মিউজিয়াম, বিপুল পরিমাণ কম্পিউটার, সম্প্রচার বাহনসহ ১৭টি গাড়ি, আসবাবপত্র, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ভাঙচুর ও মূল্যবান সম্পদ লুটপাট করা হয়েছে।
মি. আরাফাত বলেন, “এখন বিটিভি ভবন দেখে মনে হয় এটি একটি যুদ্ধক্ষেত্র। যারা গুরুত্বপূর্ণ এই ভবনে হামলা চালিয়েছে তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এটি করেছে।”
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারাদেশে ঘটে যাওয়া প্রাণহানি নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল তথ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে।
“এখন পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত নয়। তবে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সরকার প্রতিটি ঘটনার বিচার করবে,” জানান মি. আরাফাত।
সূত্র : বিবিসি বাংলা