
ক্যাম্পাসে অটোরিকশা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুতগামী রিকশা তাকে আঘাত করে৷ পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়া হলে সেখান থেকে তাড়াতাড়ি সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শিক্ষার্থী আফসানা করিম (রাচি) বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষ ৫৩ ব্যাচ (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) এবং বেগম খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. শামসুর রহমান বলেন, আফসানকে গুরুতর আহত অবস্থায় আমাদের মেডিকেলে আনা হয়। অবস্থার অবনতি হচ্ছে দেখে আমরা এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।
এদিকে আফসানার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত রিকশাচালকের শাস্তির পাশাপাশি ক্যাম্পাসের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সড়ক উন্নয়ন ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে রাত পৌনে ৯টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা প্রশাসনের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের জবাব চান। তাছাড়া তারা বুধবার (২৪ নভেম্বর) ভোর ৬ টা থেকে প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছেন।
৫৩ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী আফিয়া ইবনাত সামিহা তার ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন, এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য আমরা ৫৩তম আবর্তনের সকল শিক্ষার্থী জানাচ্ছি যে, আমাদের বোন আফসানা রাচি, মার্কেটিং ৫৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থীর স্পষ্ট হত্যার প্রতিবাদে সমস্ত ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাবসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম সুস্পষ্ট বিচার না হওয়া পর্যন্ত বয়কট করলাম।
আফসানা রাচির সহপাঠী কানিজ ফাতেমা জানান, আমাদের বন্ধুরা খবর পেয়ে হাসপাতালে এসেছি। রাচি আজকে বিকেলে একাই হাঁটতে বেরিয়েছিলো৷ মাত্র এক মাস আগে আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে। মাত্র এই কয়দিনের মাথায় আমরা একজন বন্ধুকে হারালাম।
খবর পেয়ে নিহত শিক্ষার্থীর দুলাভাই নাজমুস সাকিব হাসপাতালে ছুটে আসেন। স্বজনকে হারিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। নাজমুস সাকিব জানান, নিহত রাচি মাত্র পরশু দিন ক্যাম্পাসে এসেছিলেন৷ তার মা দেশের বাইরে থাকেন। তার বাবা ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, সন্ধ্যা সাতটার কিছু আগে আমি দুর্ঘটনাটার খবর পেয়ে ছুটে আসি। পরে আমি নিজে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে তুলে দিয়েছি। অ্যাম্বুলেন্স খুব দ্রুতই মাত্র ১১ মিনিটে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। তবুও তাকে বাঁচানো গেলো না।
দায়িত্বরত ডাক্তার ডা. সাব্বির বলেন, আমরা যখন পেয়েছি তখন চোখের মনি ফিক্সড ছিল। তার হার্টবিট পাইনি, আমরা সাথে সাথে ইসিজি করি। তার ম্যান্ডিবল (দাঁতের মাড়ি) ভেঙে গিয়েছে। তার বুকের উপর ভারি আঘাতের কালচে চিহ্ন ছিল।
ডিউটি ম্যানেজার সবুজ জানান, সন্ধ্যা ঠিক সাড়ে সাতটায় তাকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তার শরীরে মেজর কোন ইনজুরি পাইনি৷ তবে তার দাঁত পুরো মাড়িসহ বের হয়ে এসেছে। সম্ভবত এ আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সিসিটিভি দেখে ঘাতক রিকশাচালককে শনাক্ত করতে পেরেছি। গেরুয়ায় তার বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। আমরা অনতিবিলম্বে ক্যাম্পাসে ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবো।
সুূুত্রঃ চ্যানেল 24