প্রচ্ছদ সারাদেশ এবার চিনি নিয়ে ভারতের দম্ভ খতম! জানেন কী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার?

এবার চিনি নিয়ে ভারতের দম্ভ খতম! জানেন কী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার?

সারাদেশ: দেশের পাটশিল্প ধ্বংসের পর পতিত শেখ হাসিনা সরকারের রক্তচক্ষু পড়ে চিনিশিল্পের উপর। ভারত নির্ভরশীলতা বাড়াতে তাদের পরামর্শে একে একে বন্ধ করা হয় রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো। ফলে চিনি জন্য বাংলাদেশকে অনেকাংশেই ভারত নির্ভর হতে হয়, যা তাদের দাম্ভিক মনোভাবের অন্যতম কারণ। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই চিনি কলগুলো চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতেই এবার চিনি নিয়ে ভারতের দম্ভ খতম হতে চলেছে। জানা গেছে, লোকসানের কথা বলে ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ৬টি চিনিকল বন্ধ করে দেয়। সেগুলো হলো- কুষ্টিয়া চিনিকল, রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল, দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকল, পঞ্চগড় চিনিকল, পাবনা চিনিকল ও রংপুর চিনিকল। এরপর থেকেই চোরাই পথে আসা ভারতীয় নিম্নমানের অস্বাস্থ্যকর ভেজাল চিনিতে সয়লাব হয়ে যায় গোটা বাংলাদেশ। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ২৭টি চোরাপথ এবং আমদানির মাধ্যমে আসে এসব চিনি। শুধু তাই নয়, ১৫টি চিনিকল থাকার পরও ভারতের চিনির উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। আর এ কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশীয় চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। এই সুযোগটাই কাজে লাগায় ভারত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত থেকে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের চিনি আমদানি করে বাংলাদেশ। আর গত পাঁচ বছরের গড় আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবছর গড়ে ১৯৫৯ লাখ টন করে চিনি আমদানি হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে যাচ্ছে বিদেশে। অন্যদিকে চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। এছাড়া শ্রমিক কর্মচারী ও আখ চাষিসহ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে উত্তরাঞ্চলে সেই সময়কার সর্বাধুনিক অ্যাডভান্স টেকনোলজিতে স্থাপন করা হয় দেশের চিনিকলগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো। একসময় বছরে দেড় থেকে ২ লাখ টন চিনি উৎপাদন করতো, যা বাজার নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতো। কিন্তু ছয়টির উৎপাদন বন্ধ রাখায় দেশীয় উৎপাদন কমে মাত্র ২৫ হাজার টনে নেমে আসে। এতে চিনি খাত প্রায় ৯৬ ভাগ ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানিভিত্তিক ও বেসরকারি কলগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে চিনির বাজারের উপর সরকারের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে বেসরকারি রিফাইনারি কোম্পানিগুলো চিনির বাজারে বাড়তি মুনাফা তুলে নেয়। তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে সরকারের কাছে মূল্য নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় ছিল না। হাসিনা সরকারে পতনের পর দায়িত্বে আসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ভারত নির্ভরশীলতা কথা সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নানা উদ্যোগ। এর অংশ হিসেবে দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া চিনিকলগুলো চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। দ্বায়িত্ব গ্রহণের পর সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ছয়টি বন্ধ চিনিকলে উৎপাদন পুনরায় চালুর জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। চলতি মাসের ১৭ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীন ৬টি (পঞ্চগড়, রংপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, সেতাবগঞ্জ ও শ্যামপুর) চিনিকলের আখ মাড়াইয়ের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকল সমূহ পুনরায় চালু করার জন্য ও চিনিকল লাভজনকভাবে চালানোর নিমিত্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রণয়নের লক্ষে গঠিত টাক্সফোর্সের সুপারিশ ও মতামতের আলোকে ০৩/১২/২০২৪ তারিখে স্মারক মূলে পর্যাপ্ত আখ প্রাপ্তির সাপেক্ষে ১ম পর্যায়ে শ্যামপুর, সেতাবগঞ্জ চিনিকল, ২য় পর্যায়ে পঞ্চগড় ও পাবনা চিনিকল এবং ৩য় পর্যায়ে কুষ্টিয়া ও রংপুর চিনিকলের মাড়াই কার্যক্রম পুনরায় চালুকরণের লক্ষ্যে উপর্যুক্ত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলো। এ ঘোষণায় ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান চিলিকলগুলো পরিদর্শন করেছেন। সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেছেন। ফলে এসব চিনিকলে কর্মরত কর্মচারী, আখচাষি এবং স্থানীয় মানুষ নতুন আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। নেমে পড়েছেন কাজে। চিনিকলগুলো চালু করার ফলে দেশে যেমন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, তেমনি আমদানি নির্ভরতাও কমবে। এতে বেঁচে যাবে দেশের বড় অঙ্কের অর্থ। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এদিকে একে একে ভারতের হাতে থেকে মুক্ত হতে চলেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত। এবার চিনি নিয়েও ভারতের দম্ভ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।