প্রচ্ছদ সারাদেশ সংসদ ভবনের গোপন কক্ষে লুকিয়ে ছিলেন স্পিকার, যেভাবে উদ্ধার করলো সেনাবাহিনী

সংসদ ভবনের গোপন কক্ষে লুকিয়ে ছিলেন স্পিকার, যেভাবে উদ্ধার করলো সেনাবাহিনী

সারাদেশ: গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে ও পরে আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মীরা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আবার অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সংসদ ভবন থেকে বের হতে পারেননি সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ ভবনের একটি গোপন কক্ষে প্রায় ১২ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলেন তিনি। এরপর ওইদিন রাতে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী তাকে ক্যান্টনমেন্টে সেনা হেফাজতে নিয়ে যায়। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই বিপ্লবের দিন ৫ আগস্ট সাড়ে ১২ ঘণ্টা সংসদ ভবনের বাংকারে আত্মগোপনে ছিলেন সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর সেনাবাহিনী তাকে ক্যান্টনমেন্টে সেনা হেফাজতে নিয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরো জানা গেছে, সাবেক স্পিকারের সঙ্গে সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম ও নাজমা আকতারও ছিলেন। এসময় লাখো ছাত্র-জনতা সংসদ ভবনে। প্রতিটি মুহূর্ত অজানা ভয়ে তারা কাঁপছিলেন।

সংসদ ভবনে ওইদিন সোনাদানা ও কয়েক কোটি নগদ টাকার স্যুটকেস ছিল। পরে একটি স্যুটকেস থেকে ৯০ লাখ নগদ টাকা নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। সংসদ ভবন সেদিন লাখো জনতার দখলে ছিল। সফল গণঅভ্যুত্থানের আবেগে আপ্লুত ছিলেন ছাত্র-জনতা। তাই তারা দল বেঁধে ঢুকে পড়েন সংসদ ভবন অভ্যন্তরে। অনেকে মূল এসেম্বলি কক্ষে ঢুকে এমপিদের নির্ধারিত আসনে বসে পড়েন, কেউবা বসেন স্পিকারের আসনে কিংবা গ্যালারিতে। পাঠাগারে যান অনেকে। সংসদ প্লাজায়, করিডোরে, স্পিকারের কক্ষে, সংসদ নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতার কক্ষ সব জায়গা ছিল জনতার দখলে। গত ৫ আগস্ট সংসদ ভবনে কি ঘটেছিল?

জানা যায়, বেলা আনুমানিক ২টা ৩১ মিনিটে এসএসএফ সদস্যরা সাতটি গাড়ি নিয়ে সংসদ ভবনে প্রবেশ করেন। তারা প্রথমে যান অফিসকক্ষে। সেখানে থাকা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা অফিস রুম ত্যাগ করেন। এরইমধ্যে ছাত্র-জনতা সংসদ ভবনের দিকে আসতে থাকে। স্পিকার ছিলেন তার আবাসিক বাংলোতে। কর্মকর্তারা তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। ছাত্র-জনতা টের পেলে আস্ত রাখবে না- এই ভেবে কর্মকর্তারা তাকে নিয়ে আসেন সংসদ ভবনে। কারণ এই ভবনে অসংখ্য গোপন কক্ষ রয়েছে। নিচে রয়েছে বাংকার। বেলা ৩টার দিকে ডেপুটি স্পিকারসহ অন্যদেরও সেখানে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে নিয়ে রাখা হয় বাংকারে। কিন্তু সেখানে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। কর্মকর্তারা ঠিক করলেন ছয়তলার আরেকটি গোপন কক্ষে তাদের নেয়া হবে। কারণ সে কক্ষ খুঁজে পাওয়া যে কারো জন্য কঠিন। কক্ষটি অনেকটা নিরাপদ।

এরইমধ্যে লাখো জনতা সংসদ ভবন অভিমুখে আসতে থাকলে আনুমানিক বেলা ২টা ৫০ মিনিটে সেনাবাহিনী, এসএসএফ, বিজিবি ও র‌্যাব কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ফোর্স সংসদ ভবন ত্যাগ করে। ছাত্র-জনতার দখলে চলে যায় সংসদ ভবন। বেলা ৩টা ২৩ মিনিটে সংসদ ভবনের সব গেট ভেঙে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা মূল ভবনে ঢুকে পড়ে। তাদের জন্য ভয়ংকর একটি সময়। এ অবস্থায় গোপন কক্ষে আত্মগোপনে ছিলেন স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ সংসদীয় কর্তৃপক্ষ। রাত বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। ৫ আগস্টের দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াইটায় সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেনাবাহিনীর একটি দল সংসদের গোপন কক্ষ থেকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ক্যান্টনমেন্ট সেনা হেফাজতে নিয়ে যায়। বাকিরা নানা কৌশল করে জীবন রক্ষার্থে নিরাপদ অবস্থানে চলে যান। স্পিকার ক্যান্টনমেন্টেই থাকেন প্রথম দিকের দিনগুলোতে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।