প্রচ্ছদ জাতীয় ফায়ার ফাইটাররা যখন আগুন নেভাচ্ছিল পুলিশ কেন রাস্তা বন্ধ করেনি?

ফায়ার ফাইটাররা যখন আগুন নেভাচ্ছিল পুলিশ কেন রাস্তা বন্ধ করেনি?

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে রাস্তায় ট্রাকের চাপায় নিহত হয়েছেন ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়ন।

নয়নের মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠেছে- ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আগুন নেভানোর কাজ করছিলেন তখন পুলিশ কেন রাস্তা বন্ধ করে দেয়নি? পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দিলে তো এই দুর্ঘটনা ঘটত না। এর দায় কি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এড়াতে পারেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিয়েছেন উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, আমার একজন কর্মী মারা গেল, এর ব্যর্থতা আমার। এই ঘটনার বিচার অবশ্যই হবে।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে ফায়ারফাইটার সোয়ানুর জামান নয়নের জানাজা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

উপদেষ্টা বলেন, এ ঘটনায় আমি শোকাহত। অল্প বয়সে এই ছেলেটা চলে গেল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তো তার মা-বাবার। অন্য সবাই কিন্তু আস্তে আস্তে ভুলে যাবে কিন্তু তার মা-বাবা এই মৃত্যু ভুলতে পারবে না।

এর আগে দুপুর ২টা ৫ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে নিহত ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়নের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকসহ বাহিনীটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

যখন আগুন লাগলো তখন ওই জায়গাটা নিরাপত্তা না দিয়ে ট্রাক কেন রাস্তা দিয়ে গেল এটা ব্যর্থতা কি না। এছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এত সময় কেন লেগেছে এই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি বলব এটা ব্যর্থতাই। ট্রাক ওই সময় চলাচল করা উচিত ছিল না।

আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে বিষয়টি জানতে আমরা একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটি দ্রুত প্রতিবেদন দিলে জানা যাবে আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে এবং অগ্নিকাণ্ড কেন ঘটলো।

ছাত্র আন্দোলনের দুজন প্রথম সারির সদস্য পোস্ট দিয়েছেন এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কোনো ষড়যন্ত্র হতে পারে। আপনার কাছে এমন কোনো কিছু মনে হয় কিনা প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি তদন্তের আগে কোনো কিছু বলতে পারবো না। তদন্তের পর আমরা এ বিষয়ে বলতে পারবো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি একটি প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল যেন বিকেল পাঁচটার পর সচিবালয়ে যেন কেউ না থাকে তারপরও এমন ঘটনা কেন ঘটলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে তো রাত একটার দিকে। ওই সময় ওই ভবনে তো কেউ ছিল না। ওই ভবনের তিনটা ফটক ছিল, তিনটাই তালা দেওয়া ছিল। প্রতিটা মন্ত্রণালয়ের ফ্লোরে কিন্তু তালা দেওয়া ছিল। ফায়ার ফাইটাররা ভবনের একটি ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছে।

আগুনের সূত্রপাতের প্রাথমিকভাবে কোনো ক্লু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন একটা বললাম পরে দেখা গেল এটা প্রমাণিত হলো না। তাই তদন্তের পর প্রমাণিত হওয়ার পরে এ বিষয়ে কথা বলা মনে হয় ভালো। তাই আমি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়ার পরই কথা বলবো। এছাড়া এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতেরও প্রয়োজন হবে। এক কথায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য আমরা জানতে পারিনি।

ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সবকটি হয়ত সচল ছিল না দু-একটা সচল থাকতে পারে।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে সচিবালয়ে আগুন নেভানোর সময় ট্রাকচাপায় আহত হন নয়ন। তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের স্পেশাল এ ফাইটারকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সোয়ানুর জামান নয়ন (২৪) রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের ছড়ান আটপড়িয়া গ্রামের কৃষক আখতারুজ্জামানের ছেলে। তিনি দুই বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন।

এদিকে নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোয়ানুর জামান নয়নের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে নয়ন ছিল ছোট। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর সংবাদ জানার পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা নার্গিস বেগম। সন্তানবিয়োগের ব্যথা সইতে না পেরে নিজের বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন মা।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।