প্রচ্ছদ বিনোদন বাবাকে নিয়ে তাহসানপত্নীর পুরনো আবেগঘন স্ট্যাটাস নতুন করে ‘ভাইরাল’

বাবাকে নিয়ে তাহসানপত্নীর পুরনো আবেগঘন স্ট্যাটাস নতুন করে ‘ভাইরাল’

দীর্ঘদিনের সিঙ্গেল লাইফের ইতি টেনে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী তাহসান খান। শনিবার (৪ জানুয়ারি) গায়ক জানান, মেকওভার আর্টিস্ট রোজা আহমেদের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি। এর আগে সকাল থেকেই অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে তাদের বিয়ের একাধিক ছবি।

এদিকে গায়কের নতুন স্ত্রী রোজা আহমেদ সম্পর্কে জানার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তারকার ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষী ও নেটিজেনরা। যা নিয়ে হইচই শুরু হয়। আর এরইমধ্যে জানা যায়, বরিশালের একসময়ের যুবলীগ নেতা ফারুক আহাম্মদ ওরফে ‘পানামা ফারুক’ তার বাবা। যিনি ২০১৪ সালে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন।

এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যখন নানা চর্চা, তখন বাবা সম্পর্কে মেয়ে রোজার এক পুরনো আবেগঘন স্ট্যাটাস নতুন করে ভাইরাল। গত বছরের জুন মাসে দেয়া সেই পোস্টটি নিয়ে এখন যত আলোচনা-সমালোচনা।

২০২৪ সালের ৪ জুন ‘রোজাস ব্রাইডাল মেকওভার’ পেজে দেয়া স্ট্যাটাসে রোজা জানান, বাবা হারানোর পর কী কষ্টে জীবন গিয়েছিল। দীর্ঘ সেই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘সেলফিটা একটু আগেই তুলেছি। সাধারণত আমার অনেক ছবি তোলা হয়। কিন্তু আজ এই সেলফিটা তোলার সময় চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। অনেক সময় ধরে কাঁদলাম। কিন্তু কি মনে করে কাঁদছি বা কেন কাঁদছি তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান, তাই সব থেকে আদরের ছিলাম সবার। আর বাবা আমাকে সব সময় বলত, “আমার ছোট্ট পরিটা কইরে।” সেই সময় বরিশাল শহরে আমাদের পরিবারের বেশ প্রভাব ছিল। ছোট বেলায় কখনো কমতি পাইনি। এর বাসায় দাওয়াত, তার বাসায় দাওয়াত, আর যেতেই হবে। কারণ, আমাদের ছাড়া দাওয়াত অসম্পূর্ণ হবে। এমন দিন গিয়েছে, দিনে ৪টা দাওয়াতেও অংশ নিয়েছি। শুধু দেখা করে আসার জন্য।’

রোজা স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘হঠাৎ বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ওপাড়ে। যতদিনের হায়াত তিনি নিয়ে এসেছেন ততদিন ছিলেন আমাদের সঙ্গে। অভিযোগ তো অনেক জমা আছে, বাবার সেই ছোট্ট পরীটার, কিন্তু অভিযোগ কার কাছে করব? আর বাবা শুধু আমাদের ছেড়ে চলে যায়নি, সঙ্গে সঙ্গে যে মানুষগুলো আমাদের এতো সম্মান করতেন, তাদের ভালোবাসাও চলে গেল আমাদের ওপর থেকে। আর সেই দিনটাতেই প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম, যে ভালোবাসা আমরা পেয়েছি, তা সবই বাবাকে ঘিরে। আর সঙ্গে অনেক অনেক স্বার্থ। বাবা চলে যাবার ঠিক দুই মাসের মাথায় আমার এক রিলেটিভের বিয়ে। আমরা অনেক ঘনিষ্ঠ ছিলাম একে অপরের, কিন্তু বিয়েতে দাওয়াত পেলাম না। যে রিলেটিভরা সেই বিয়েতে অংশ নিয়েছে, সবাই ফোন করতে শুরু করল মাকে। কেন আমরা গেলাম না, কোথায় আমরা? বরিশালে আছি কিনা এই-সেই। সেদিন সারারাত বসে দেখেছি মায়ের সেই সরল মনের কান্না। আপনারা লেখাটা পড়ে ভাবতে পারেন, দাওয়াত পাইনি বলে কাঁদছি? কিন্তু দাওয়াতের জন্য নয় ,একি দালানে সবাই আনন্দ করছে, আমি, মা আর ছোটো ভাই উৎস তখন বাসার এক কোণে। খুব চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, বাবা তুমি একটু দেখে যাও, যাদের জন্য এত করেছ তারা আমাদের সব ফিরিয়ে দিচ্ছে।’

তিনি লিখেছেন, ‘বাবা আমাদের জন্য অনেক কিছুই রেখে গেছেন, দাদা ভাইয়ের অনেক আছে, কিন্তু কিছুই গোছানো না, কে বুঝেছেন যে এত অকালে উনি চলে যাবেন আমাদের ছেড়ে। আর দাদার সব সম্পত্তিতেই চাচা-ফুফুদের ভাগ আছে। মায়ের খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছে। পড়াশোনার সুযোগ পায়নি। আর আমি চলে আসি তাদের কোলে। আমার মা খুব সরল মনের, দিন-দুনিয়ার কিছুই বুঝে না। সে যে নিজের ভয়েস রেইস করবে বা তার সেটা রেইস করার অধিকার আছে, সেটা তার ধারণার বাইরে। কখনো তার সেই সাহসটাই ছিল না যে, তার শ্বশুরকে বলবে, বাবা আমাদের সম্পত্তিটুকু আমাদের বুঝিয়ে দেন। আর উৎস তো তখন অনেক ছোট। আমারা দুই ভাই-বোন তখন পিচ্চি পিচ্চি। আমাদের পড়াশোনার খরচ তখন একদম হিসাব করে টায় টায় দেয়া হতো মায়ের হাতে। তাই কিছু খেতে ইচ্ছে করলে বলতাম না, যাতে উৎস যেটা চায় সেটা যাতে পায়। আমার দিক থেকে একটু কম হলেও সমস্যা নেই।’

রোজা স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রস্তাব আসা শুরু করে। এই রিলেটিভ একে আনে, ওই রিলেটিভ ওকে আনে। সেই সময় আমি প্রথম ভয়েস রেইস করেছি যে, আমার বয়স কম আর বাবা মারা গেছেন তো কি হয়েছে? বাবার আর আমার স্বপ্নতো মারা যায়নি? ওই দিন কথাটায় খুব মাইন্ড করেছিল আমার কাছের লোকজন। বড়দের মুখে মুখে কথা, আমি আর মানুষ হব না। আর সেই থেকেই রটানো হয় কতো কথা। সারাদিন নাকি ছেলেদের সঙ্গে ঘুরি, আমার বন্ধু-বান্ধব সার্কেল ভালো না, পর্দা করি না―আরও কতো কী। মেয়ে তো নিশ্চয়ই প্রেম করে আর না হলে এত ভালো প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়? আর প্রতিদিন এভাবেই বাসায় অভিযোগ আসা শুরু করে। কিন্তু আমার ভয়েস রেইজে সবাই এইভাবে রিঅ্যাক্ট করবে বুঝতে পারিনি। আমার মা এত অভিযোগ শুনতে শুনতে বললেন, তুই আমাকে ছুঁয়ে বল, এই সব অভিযোগ কি সত্যি? আমি মাকে ছুঁয়ে বললাম, না মা, সব মিথ্যা। আমিতো স্কুল আর বাসা ছাড়া কোথাও যাই না। এই বলে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম মায়ের সঙ্গে। ওইদিনের পর থেকে মা আমার সঙ্গে নিয়মিত কোচিংয়ে যেত, আবার এসে বাসার সবার জন্য রান্না করতে হত, খুব কষ্ট হয়ে যেত তার। তখন নিজের কাছে মনে হত, আমি সবার জন্য একটা বোঝা, সব ক্ষেত্রেই আমার দোষ। দিনের পর দিন এভাবেই চলতে থাকে। হঠাৎ দাদাভাই অসুস্থ হয়ে পড়েন, আর সেই থেকে আমার সঙ্গে কোচিংয়ে যাওয়া বন্ধ করে মা। কারণ তাদের সেবা যত্ন করতে হত মাকেই। তখন থেকেই একা একা চলা শুরু করলাম।’

মেকওভার আর্টিস্ট হওয়ার গল্প সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘একটা ফ্রেন্ড বলল ও স্টুডেন্ট পড়ায়। আমি বললাম আমাকে একটা খুঁজে দিবি, আমিও শুরু করতে চাই। বেশ একজন খুঁজতে গিয়ে দু’জনকে পেয়ে গেলাম, কেজিতে পড়ে, খুব অল্প টাকা বেতন। আর কোচিংয়ের পড়া আমার ভালো লাগত না, তাই আমি নিজে নিজে বুঝে পড়তাম। কিন্তু বাসার কথা ছিল কোচিংয়ে পড়তেই হবে। তাই কোচিংয়ের সময়টা আমি স্টুডেন্ট পড়াতাম লুকিয়ে লুকিয়ে। সেই টাকা জমিয়ে উৎসকে ঘুরতে নিতাম, কিছু একটা পছন্দ করলে কিনে দিতাম। বাবার যে আদর আমি পেয়েছি, ও সেই আদর পায়নি। তাই বাবার আদর হয়ত দিতে পারতাম না। তবে কখনো যাতে আফসোস না করে, সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। আবার নিজের খরচটাও একটু বাড়ল, ওয়াইফাই ছিল না, তাই এমবি কিনে ফেসবুকিং শুরু করি।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘এভাবেই তিন মাস চলল। হঠাৎ বাজারে দাদা ভাইয়ের সঙ্গে স্যারের দেখা, স্যার তো বলল রোজা আসে না কেন? এরপর কি হতে পারে যারা ফেইস করেছেন, তারা বুঝবেন। শুরু হয়ে গেল বাসায় বিচার-সালিশ। যেহেতু সত্যি আমি কোচিংয়ে যাইনি, তাই আমার জোর গোলায় কথা বলার মুখ ছিল না। কোচিংয়ের টাকা বন্ধ করে দিলো আর বলল, তুই তো একা একাই সব পারো, তো কোচিংয়ে পড়তে হবে না। আর টিউশন দুইটাও বাদ দিতে হলো। এখন স্কুল আর বাসা। স্কুলে আমি অনেক পপুলার ছিলাম নাচের জন্য। ওহ ক্লাস থ্রিতে থাকতে নাচের জন্য আমি জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছিলাম। আর তখন থেকেই একা একা সাজতাম। যারা আমার সঙ্গে নাচ করত, ওদেরকেও সাজিয়ে দিতাম। আর সবাই আমার সঙ্গে চলতে চাইত, বিশেষভাবে মেয়েরা। কারণ আমি খুব ভালো সাজাতে পারি। আমার এক দূরের কাজিনের বিয়ের প্লান ছিল, ঢাকা থেকে আর্টিস্ট আনবে। তখন বরিশালে ফ্রিল্যান্সার আর্টিস্টের নামটার সঙ্গে কেউ পরিচিত ছিল না। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মেয়েটা ঢাকার আর্টিস্ট আনতে পারেনি। আমাকে কল দিয়ে খুব মন খারাপ করে বলল, পরিবার বিয়েতে অনেক খরচ করছে, এত বড় আয়োজন কিন্তু মেকআপের জন্য এত টাকা দিবে না। বরিশালের কোনো পার্লারের সাজ আমার পছন্দ না, তোর সাজটা আমার খুব ভালো লাগে। আমি একটু চুপ থেকে বললাম, আপু তোমার এত বড় বিয়ের আয়োজনে আমার কাছে সাজবা, শিউর তুমি? বলল হ্যাঁ, তোর মতো করে আমাকে সাজিয়ে দিস, তাহলেই হবে। সেই থেকে মেকআপের প্রফেশনাল জার্নিটা শুরু।’

প্রসঙ্গত, জানা গেছে রোজার বাবার নাম ফারুক আহম্মেদ ওরফে পানামা ফারুক। ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যান তিনি।

স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯৩ সাল থেকে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন পানামা ফারুক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়ায় পানামা ফারুক। তবে ২০০১ সালের পর দীর্ঘ পাঁচ বছর আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও আগের মতো সক্রিয় দেখা যায়নি। তবে ২০১৩ সালের দিকে নিজের অবস্থান জানান দিতে গিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন পানামা ফারুক।