প্রচ্ছদ জাতীয় ইলিয়াস-ডালিমের টকশোটি বিশ্বে একক সময়ে সর্বাধিক দেখা লাইভ? জানুন সত্যতা

ইলিয়াস-ডালিমের টকশোটি বিশ্বে একক সময়ে সর্বাধিক দেখা লাইভ? জানুন সত্যতা

সম্প্রতি দেশের বহুল আলোচিত হচ্ছে প্রবাসী সাংবাদিক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে খুনের ঘটনায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর শরিফুল হক ডালিমের (বীর উত্তম) লাইভ টকশো। গত ৫ জানুয়ারি এটি প্রচারের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন মহলে আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

এরপরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি করা হয়, “শ্রদ্ধেয় ইলিয়াস হোসাইন ভাইয়ের লাইভ সরাসরি দেখছিলেন ৮ লাখ মানুষ। এর আগে পৃথিবীর কোনো লাইভে একসাথে এতো মানুষ যুক্ত থাকেনি। অর্থাৎ এটা বিশ্ব রেকর্ড।”

আরও একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়, “ইউটিউবে একসঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিং দেখার বিশ্ব রেকর্ড ৭ লাখ ৫৬ হাজার, যেটা বিটিএস আর্মির। এরপর ইলিয়াস হোসেনের লাইভে ৭ লাখ ৫৪ হাজার।” অর্থাৎ ইউটিউবে ইলিয়াস হোসেনের উক্ত লাইভ টকশোটি সরাসরি দেখা দর্শকদের হিসেবে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে।

এসব পোস্টগুলো মুহূর্তে ভাইরাল হলেও দাবি দুটোর একটিও সঠিক নয় বলে জানায় বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা।

তাদের টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে মেজর শরিফুল হক ডালিমের লাইভ টকশোটি এককসময়ে বিশ্বে সরাসরি দেখা দর্শকদের সংখ্যার তালিকায় শীর্ষে বা ইউটিউবে সম্প্রচারিত লাইভ স্ট্রিমিং এর ইতিহাসে দ্বিতীয় স্থানে শীর্ষক দাবিগুলো সঠিক নয় বরং শীর্ষ ১০ এও নেই টকশোটি। প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে কোনটিতেই কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। প্রথম দাবিটিতে কোনো নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মের বিষয়েও উল্লেখ না করে দাবি করা হয়েছে পুরো বিশ্বে অর্থাৎ সবরকম প্ল্যাটফর্ম মিলিয়ে পুরো বিশ্বে সরাসরি কোনো সম্প্রচার সবচেয়ে বেশি দেখা দর্শকদের সংখ্যার হিসেবে উক্ত লাইভ টকশোটি শীর্ষে।

তবে, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে এমন একাধিক সরাসরি সম্প্রচার দেখা দর্শকদের তালিকা পাওয়া যায় যার পরিমাণ উক্ত টকশোর দর্শক সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।

যেমন ফিফার ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনার মধ্যকার ২০২২ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি টিভিতে প্রায় ১৫০ কোটি বার দেখা হয়েছে। ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে যে সংখ্যাটি ছিল প্রায় ১১২ কোটি। অর্থাৎ, ইলিয়াসের লাইভ টকশো দেখা সংখ্যার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। তবে, ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনাল ছাড়াও আরও একাধিক সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও এর ব্যাপারে জানা যায় যেগুলো ইলিয়াসের টকশোর চেয়ে বেশি মানুষ সরাসরি দেখেছে। মূলত ক্রিকেট খেলা বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচটি একসাথে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ টেলিভিশনে দেখেছেন এবং ডিসনি+হটস্টারে এই সংখ্যাটি প্রায় ৬ কোটি যা ইলিয়াসের টকশোর চেয়ে অনেক বেশি।

এছাড়া, ইউটিউবে কোনো একক ইভেন্টের সরাসরি সম্প্রচার সবচেয়ে বেশি দেখার গিনেস রেকর্ডটি ২০১১ সালে ব্রিটিশ সিংহাসনের প্রতীয়মান উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়ামের বিয়ের যার সরাসরি ভিউ সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি।

অর্থাৎ, ইলিয়াসের টকশোটি বিশ্বে সরাসরি কোনো ভিডিও দেখা দর্শকদের সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি নয়।

এছাড়াও দাবি করা হয়েছে, ইলিয়াসের উক্ত লাইভ টকশোটি ইউটিউবের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ একত্রে দেখেছে। তবে, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি গিনেস রেকর্ডের উল্লেখ উপরে বর্ণিত আছে যা সংখ্যায় প্রায় ৭ কোটি এবং ইলিয়াসের টকশোর সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।

তবে এটি ছাড়াও, বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ফোর্বসের ভারতীয় সংস্করণ ফোর্বস ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইউটিউবে একইসময়ে ভিউজের সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষ দশ সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও এর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ইউটিউব লাইভ স্ট্রিমের ইতিহাসে একই সময়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভিউয়ের দিক দিয়ে শীর্ষে আছে ২০২৩ সালের ২৩ আগস্টে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর চন্দ্রযান-৩ এর সফট ল্যান্ডিং এর সম্প্রচার যা একইসাথে প্রায় ৮০ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে ২০২২ এর ফুটবল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বে ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচটি যা সরাসরি একইসাথে প্রায় ৬১ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। উক্ত তালিকায় ১০ নাম্বারে আছে জনপ্রিয় হলিউড অভিনেতা জনি ডেপ ও অ্যাম্বার হার্ডের ট্রায়াল যা একইসাথে প্রায় ৩৫ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। অর্থাৎ, ইলিয়াসের টকশোটি ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত লাইভ স্ট্রিমিংগুলোর মধ্যে একইসময়ে সর্বমোট দেখা শীর্ষ দশটির কাছাকাছিও নেই। উক্ত প্রতিবেদনে একইসময়ে প্রায় ৩৭ লক্ষ ভিউজ নিয়ে বিটিএস এর বাটার গানটি ৭ম অবস্থানে স্থান পেয়েছে।

উল্লেখ্য যে, এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি ইলিয়াসের উক্ত লাইভ টকশোটি সর্বমোট প্রায় ৯৫ লক্ষ বার ইউটিউবে দেখা হয়েছে এবং ইসরোর উল্লিখিত ভিডিওটি সর্বমোট প্রায় ৮ কোটিবার দেখা হয়েছে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।