যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের চাচা তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক ইউরোপের দেশ মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে, গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় তিনি প্রত্যাখ্যাত হন।
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের চাচি শাহীন সিদ্দিক ইউরোপের দেশ মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে, গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, তাকে গণমাধ্যমে “মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষের” অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
মাল্টার নাগরিকত্ব-বিনিয়োগ প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকা হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স ২০১৩ সালে শাহীনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ফাঁস হওয়া নথির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জানিয়েছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম শাহীনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঢাকার মূল্যবান সরকারি জমি “অবৈধভাবে দখলের” অভিযোগ তুলেছিল।
শাহীন সিদ্দিক শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা এবং সেনাকর্মকর্তা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ গত বছর অক্টোবর মাসে তারিক ও শাহীনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে। এর আগে, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের ফলে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের অভিযোগে বলা হয়, শাহীন সিদ্দিকের নেতৃত্বাধীন প্রচ্ছায়া নামক একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকায় মূল্যবান জমি দখল করে। শাহীনা তার ২০১৩ সালের পাসপোর্ট আবেদনে প্রচ্ছায়ার চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের ভূমিকা উল্লেখ করেছিলেন।
শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচকরা দাবি করেন, তারিক সিদ্দিক ২০০৯ থেকে গত বছর সরকারের পতন পর্যন্ত শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন। শাহীন দেশের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে প্রচ্ছায়ার জন্য ওই জমি দখল করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি ওই জমি বিক্রি করে দেয়।
২০১৩ ও ২০১৫ সালে শাহীন সিদ্দিক মাল্টার পাসপোর্টের জন্য দুটি আবেদন করেছিলেন। ২০১৫ সালের যৌথ আবেদনে তার মেয়ে বুশরাও (ইংল্যান্ডের নাগরিক) ছিলেন। তিনি টিউলিপ সিদ্দিকের চাচাতো বোন এবং প্রচ্ছায়ার পরিচালক হিসেবে কাজ করতেন।
২০১৫ সালের মার্চ মাসে করা যৌথ আবেদন অনুযায়ী, শাহীন এবং বুশরার নাগরিকত্বের জন্য যথাক্রমে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড এবং ২৫ হাজার খরচ হতো। পাশাপাশি, হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সকে ৭০ হাজার পাউন্ড ফি দিতে হত।
আবেদনটি করার সময় শাহীন কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট দেখিয়েছিলেন, যেখানে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার ছিল। এই অর্থ দুই মাসে ১১টি লেনদেনের মাধ্যমে জমা করা হয়েছিল। কিন্তু এর উৎস স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান জানান, বাংলাদেশে মুদ্রা সরবরাহের বিধি অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি এক বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি দেশের বাইরে নিতে পারেন না।
বুশরা তখন লন্ডনে পড়াশোনা করছিলেন এবং তার ঠিকানা ছিল সেন্ট প্যানক্রাস স্টেশনের কাছে একটি গথিক ভবনের দ্বিতীয় তলায়। এটি টিউলিপ সিদ্দিকের কিংস ক্রস ফ্ল্যাট থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা দূরত্বে ছিল।
শাহীনের করা প্রথম নাগরিকত্ব আবেদন ২০১৩ সালে সরাসরি বাতিল হয়ে যায়, কারণ গণমাধ্যমে প্রচ্ছায়ার বিরুদ্ধে”মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষ” সংক্রান্ত অভিযোগ উঠেছিল।
২০১৫ সালের আবেদনে প্রচ্ছায়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তার পরিবর্তে শাহীন তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘দ্য আর্ট প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর নাম উল্লেখ করেছিলেন। এরপর হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের একজন কর্মচারী এক ইমেইলে জানান,মাল্টা কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরও তথ্য চাইছে।
শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালের শেষের দিকে ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, শাহীন সিদ্দিক এবং বুশরা দুজনেই নাগরিকত্ব পাননি।
বুশরা পড়াশোনা শেষ করে লন্ডনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং পরবর্তীতে জেপি মরগানে কাজ শুরু করেন। ২০১৮ সালে তিনি “লাইফস্টাইল, ফ্যাশন ও ট্র্যাভেল” ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
২০১৮ সালে বুশরা সিদ্দিক একটি ইউটিউব সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি তার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কারণ তিনি একটি সময় ধরে “যুদ্ধ” করে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, তার বাবা গর্বিত ছিলেন যে তার মেয়ে একটি মর্যাদাপূর্ণ আমেরিকান ব্যাংকে কাজ করছিলেন। তবুও তিনি পদত্যাগ করেন।
“আমি একটি সুবিধাজনক অবস্থান থেকে আসি… আমি তখন বিবাহিত ছিলাম, তাই যদি আমাকে কোনও বাড়ির ভাড়া মেটাতে হত, আমার স্বামী ছিল যে এটি দেখভাল করতে পারতেন,” তিনি বলেন।
২০১৮ সালে বুশরা স্বামীর সাথে যৌথভাবে নর্থ লন্ডনে গোল্ডার্স গ্রিনে ১.৯ মিলিয়ন পাউন্ডে একটি পাঁচ বেডরুমের বাড়ি কিনেছিলেন। ভূমি নিবন্ধন থেকে জানা যায়, এই বাড়ির ওপর কোনও বন্ধকি ঋণ নেই।
“আমার কিছু সঞ্চয় ছিল এবং যদি সেগুলো শেষ হয়ে যেত, আমি জানতাম আমার মা-বাবা আছেন,” বুশরা ইউটিউবে বলেন। বুশরা সিদ্দিক এবং শাহীন সিদ্দিক মন্তব্যের জন্য সাড়া দেননি। হেনলি নিশ্চিত করেছে, তারা পাসপোর্ট পাননি।
তারিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে জোড়পূর্বক গুমের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মন্তব্যের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |