বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে মার্কিন প্রশাসন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কখনো নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় পৃথিবীর কোনো প্রান্তে বাধিয়ে দেয় যুদ্ধ আবার কখনো বা ২৪ ঘন্টায় করে ফেলে শান্তি চুক্তিও। আর যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে বিশ্ব দেখেছে দুই দুইটি বৃহৎ যুদ্ধ।
এদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মেয়াদে চীনের প্রতি নেমে এসেছিল কালো ছায়া। কয়েক দফায় নিষেধাজ্ঞার কবলে দেশটি। যার ফলে দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের। মানুষের জীবনযাত্রায় পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
গত বছরটা অর্থনৈতিক দিক থেকে শান্তিতে যায়নি। তবে ভালো সংবাদ নেই নতুন বছরকে ঘিরেও। বিশ্ব দেখতে যাচ্ছে কয়েক ডজন নীরব যুদ্ধ। যার মূলে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা। প্রশ্ন উঠেছে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
নির্বাচনে জয়লাভের আগে যুদ্ধ থামানোর গল্প আর শান্তি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। তবে কি বিশ্ববাসী বিভিন্ন সংকটের মধ্যেই শান্তির খোঁজ পাবে? নতুন যুদ্ধে কার সাথে জড়াবে মার্কিন প্রশাসন? সময়টা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি। এক প্রকার উস্কানিতেই ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে মার্কিন প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর সদস্যপদ দিচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতেই কিয়েভ দখলে নেমে পড়েন পুতিন। এক সময় সংঘাত পরিণত হয় গৃহযুদ্ধে।
প্রেসিডেন্ট পুতিনকে থামাতে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। ফলে জ্বালানি তেল সহ বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এদিকে প্রায় তিন বছর ধরে চলা রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা পার করেছে লাখের কোঠা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ মুহূর্তে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছিলেন শান্তির বার্তা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব পেলে ২৪ ঘণ্টার মাঝে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যুদ্ধ শান্তিতে পরিণত করবেন।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তেল আবিবে আকস্মিক হামলা চালালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুরু করেন আগ্রাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মদদে গাজা উপত্যকায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের দমনে সামরিক হামলা শুরু করে নেতানিয়াহু।
ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, নারী ও শিশু সহ ফিলিস্তিনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় অন্তত ছেচল্লিশ হাজারের ঘরেই। গৃহহীন হয়ে পড়েন বিশ লাখেরও অধিক গাজাবাসী। তবুও হামাসকে নির্মূলে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছিলেন নেতানিয়াহু।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও জো বাইডেনের হোয়াইট হাউস ছাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে যুদ্ধের মাঠে শান্তি ফিরেছে ফিলিস্তিনে। শান্তি চুক্তিতে পৌঁছেছে নেতানিয়াহু ও হামাস। এদিকে রাশিয়াকেও যুদ্ধবিরতির জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ইউক্রেনের দখলকৃত অংশ পুতিনের কাছে হস্তান্তর না করলে কোনো প্রকার শান্তি চুক্তিতে যাবেন না রুশ প্রেসিডেন্ট।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বসার পরই মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী দেশ ইরানের জন্য তৈরি করে রেখেছেন ম্যাক্সিমাম প্রেশার টু পয়েন্ট ও স্ট্র্যাটেজি। যার ফলে পশ্চিমাদের কঠোর নিষেধাজ্ঞায় পড়তে যাচ্ছে দেশটি। ইরানকে নিষেধাজ্ঞায় জড়িয়েই চুপ থাকবেন না ট্রাম্প। বাণিজ্যযুদ্ধে জড়াবেন মার্কিন পরাশক্তি চীনের সাথেও।
২০২৪ সালে বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকি দশম স্থানে থাকলেও ২০২৫ সালে সেটি ভূরাজনৈতিক হুমকির প্রধান উৎস হিসেবে দেখা হচ্ছে। যার মাধ্যমে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিধর দেশ, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে তীব্র অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এর ফলে বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি সহ সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হবে। সেইসাথে বিশ্ব অর্থনীতিতে ২০২৪ সালের তুলনায় আরো বেশি চাপ সৃষ্টি হবে। বিশ্বের বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের বরাতে ১৮ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে এমন শঙ্কা জানিয়েছে ইরানের সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ।
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধে জড়ালে তৈরি হবে সাইবার হামলার ঝুঁকিও। এতে বিপদে পড়বে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। ভেঙ্গে পড়বে সামষ্টিক অর্থনীতি।
সুত্রঃ দৈনিক জনকন্ঠ
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |