প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতিতে নতুন দল, যে বার্তা দিলেন তারেক রহমান

রাজনীতিতে নতুন দল, যে বার্তা দিলেন তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির মধ্যদিয়ে মূলত নিজের অজান্তেই পরাজিত শক্তির সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষক দিবস ও শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানায়, তবে যদি কেউ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দল গঠন করে এবং সরকারের বা প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়, তাহলে জনগণ হতাশ হবে।

এসময় বিএনপি সংস্কার ও নির্বাচন দুটোরই পক্ষে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বিএনপি সংস্কার ও নির্বাচন দুটোরই পক্ষে। তবে সংস্কার না নির্বাচন এ নিয়ে কেউ কেউ কূটতর্ক শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের সঙ্গে আমাদের দেয়া ৩১ দফার দুই-একটি ছাড়া সবই মিল রয়েছে।

এসময় মানুষের জীবনযাত্রা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংস্কারের চাইতে সংসার পরিচালনা করা বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা তাতে নিন্মবিত্তের সংসার টেকানো দায় হয়ে গেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে জনগণকে মুক্ত করা সম্ভব এই সরকারের কাছে। কিন্তু জনমনে প্রশ্ন উঠেছে কেন বাজার নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য কমাতে পারছে না বর্তমান সরকার। তাদের প্রশ্ন সরকারের কেউ কেউ অন্য ইস্যুতে বেশি মনোযোগী, নাকি সরকার পারছে না?’

তারেক রহমানের অভিযোগ, পলাতক সরকার রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে দলীয় সংবিধানে পরিণত করেছিল। নির্বাচন কমিশন দুদকসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে পতিত আওয়ামী লীগ।

দেশের উন্নয়নে জ্ঞান ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়ে তিনি আরো বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে শিক্ষা কমিশন গঠন করা হবে।

তারেক রহমান বলেন, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে একটি প্রভাবশালী জাতি রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে এই মুহূর্তে আমাদের সামনে বড়ো চ্যালেঞ্জ জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজ প্রতিষ্ঠা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে যুক্তি-তর্কে অর্থ-বিত্তে মেধা-মননে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতেই হবে।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার কিংবা নাগরিক উন্নয়নে আমরা যত উদ্যোগই গ্রহণ করিনা কেন, চূড়ান্ত সফলতা পেতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষকদের আর্থ সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। জীবনের শুরুতেই পরিবারের পর কিশোর কিশোরী শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষক শিক্ষিকারাই আদর্শ রোল মডেল। কিন্তু শিক্ষকরাই যদি রাষ্ট্র ও সমাজে সম্মান-সংসার নিয়ে টানাপোড়েনে থাকেন তাহলে একজন শিক্ষকের পক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন কীভাবে সম্ভব?

শিক্ষকতা পেশা কখনোই ‘উপায়হীন বিকল্প’ কিংবা একটি সাধারণ চাকরি নয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, শিক্ষা দীক্ষায় সবচেয়ে মেধাবী মানুষটি যাতে শিক্ষকতা পেশাকেই আনন্দের সঙ্গে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে বেছে নিতেআগ্রহী হয়ে ওঠেন তেমন পরিবেশ পরিস্থিতি নিশ্চিত করা রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব বলেই আমি মনে করি।

সুতরাং,অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, স্বাচ্ছন্দময় এবং সম্মানজনক জীবনমানের নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে বিশেষ করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকপর্যায়ের স্কুল শিক্ষকের চাকরিকে আরো প্রতিযোগিতামূলক লোভনীয় এবং আকর্ষণীয় করে তোলা জরুরি।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিজয় দিবসসহ প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন। শুভেছা বিনিময় করেন। আমি মনে করি, এ ধরনের দিবসগুলোতে আমন্ত্রিতদের তালিকায় অবশ্যই প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের কমপক্ষে একজন করে শিক্ষককে আমন্ত্রণ জানানো আবশ্যক।

কারণ, রাষ্ট্র এবং সমাজের বিভিন্নক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের ‘রোল মডেল’ শিক্ষকদের সম্মানজনক অবস্থান এবং বিচরণ দেখতে পেলে সেটি অবশ্যই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনোজগতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমার বিশ্বাস। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি পারস্পরিক আস্থা এবং সম্মানের সম্পর্ক তৈরী করার পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে রাষ্ট্র উদাসীন থাকতে পারে না।

জনগণের ভোটে বিএনপি আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ‘শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করবে বলে জানান তারেক রহমান।